শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:১৭ am
ডেস্ক রির্পোট : রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকায় সরকারি জায়গা ঘিরে আলিশান বাড়ি তুলে ভোগদখল করছেন রাজশাহীর মাদারল্যান্ড ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রাজশাহীর আমচত্বর থেকে পূর্ব দিকে রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিকের পাশেই নিজের জমির সঙ্গে প্রায় এক বিঘা জায়গা দখল করেছেন ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা। নিজের জমির বাইরেও তিনি বাউন্ডারি ওয়াল ও কাঁটাতারের দেওয়াল তুলে দখল করে রেখেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিকের পার্শ্ববর্তী এলাকাতে জায়গাটি কিনেছিলেন প্রায় আট বছর আগে। তারপরই তিনি ওই জায়গাটি ঘিরে নেন। সেখানে নিজে থাকার জন্য গড়ে তোলেন বাড়ি। পাশেই সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গা দখল করে নির্মাণ করেন ছাত্রী হোস্টেল।
শুধু তাই নয়, দখলের ওই জায়গায় দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর। লাগিয়েছেন আমগাছসহ নানা প্রজাতির গাছ। বাইরেও লাগিয়েছেন সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছ। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেখানে কেটে ফেলেছেন বেশ কয়েকটি গাছ।
রাসিক সূত্র বলছে, আমচত্বর থেকে কৃষ্ণগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা। কৃষ্ণগঞ্জের ঘাটেই গিয়ে পড়বে ওই ড্রেনের পানি। তবে ওই কাজের কিছু অংশ হয়েছে অনেকটা গোপনে। ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার ঘিরে রাখা সীমানার মধ্যেই ঠিকাদার গোপনে ড্রেনের নির্মাণকাজটি সেরেছেন। এতে ভাঙা পড়েনি তার নির্মিত বাড়ি। শুধু তাই নয়, ওই ড্রেনটি নির্মিত হয়েছে ডা. ফাতেমার তিনতলা বসতবাড়ি ও দোতলা ছাত্রীনিবাসের কোল ঘেঁষে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাসভবন ও ছাত্রীনিবাস বাঁচাতে বাড়ির কিছু অংশ না ভাঙার শর্তে ঠিকাদারকে ড্রেন নির্মাণের সব খরচ বহন করেছেন ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা নিজে।
জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার বাড়ির কেয়ারটেকার মো. আব্দুল জব্বারের কাছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কথা বলতে পারবো না, মালিকের নিষেধ আছে। তারাই ভালো বলতে পারবেন।
তবে তিনি মালিকের বরাত দিয়ে বলেন, সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষর কাছে মৌখিক অনুমতি নিয়েই বাড়ি নির্মাণসহ গেট ও বাউন্ডারি দেয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘স্যার-ম্যাডাম বাইরে গেছেন। তারা এলে আপনার আসার বিষয়ে আমি স্যার ও ম্যাডামকে জানাবো।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার বাড়িতে গিয়ে এবং তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার স্বামী মো. ইউসুফ জাগো নিউজকে বলেন, আমার মতো সামনে অনেকেই সরকারি জায়গায় দখল করে ব্যবহার করছেন। শুধু আমি একাই করছি না। তবে এখানে ভবিষ্যতে যখন ফোর লেন হবে তখন সরকারের জায়গা সরকার বুঝে নেবে।
তিনি আরও বলেন, আমি বর্তমানে আমার সিকিউরিটির জন্য সামনের অংশটি ঘিরে ব্যবহার করছি। তবে প্রয়োজন পড়লে নির্মিত ঘরটিও সরিয়ে নেব।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম বলেন, সড়ক ও জনপথের সঙ্গে কথা বলে সার্ভেয়ারের কাছে থেকে জায়গা বুঝে নিয়েই সেখানে কাজ করা হয়েছে। সেখানে কে কার জায়গায় রাজকীয় বাড়ি করেছে তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। সেটি সড়ক ও জনপথের জায়গা। ওই বিষয়ে তারা বুঝে নেবে।
তবে সড়ক ও জনপথের (সওজ) সার্ভেয়ার মো. মিল্লাত জানান, সেখানে রাসিক থেকে একটি ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। শুধু প্রথমদিকে তাদের সঙ্গে জায়গাটি দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা তাদের মতো করে কাজ করেছে। ওই বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
সড়ক ও জনপথের জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তেমন কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। এমনভাবে কেউ দখল করলে তার ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করা হবে।
অন্যদিকে রাজশাহী সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুজ্জোহা বলেন, এমন ঘটনা আমার জানা নেই। কেউ আমাদের অধিগ্রহণ করা জমি দখল করে থাকলে আমাদের পক্ষ থেকে অবশ্যই তা দখলমুক্ত করা হবে। সে ডাক্তার হোক বা যেই হোক না কেন। সূত্র : জাগোনিউজ