শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:২০ am
আর কে রতন:
রাজশাহীর মোহনপুর, বাগমারা ও দূর্গাপুর উপজেলা পান চাষের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলের কৃষকদের প্রধান অর্থকারী ফসল পানচাষ। কিন্তু বর্তমান সময়ে হাট-বাজারে পানের ব্যাপক আমদানি হলেও নেই বিক্রি। ফলে পান নিয়ে বিপাকে পড়েছে চাষিরা। এজন্য হাটবাজারে পানির দামে পান বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে অনেককে।
সব মিলিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন এসব উপজেলার স্থানীয় পান চাষিরা। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, অতিরিক্ত দামে খৈল ও বাঁশের শলা ক্রয়সহ বরজের প্রয়োজনীয় উপকরণের বাজার উর্ধ্বমুখী হওয়ায় এতে আরও বিপাকে পড়েছেন তারা। পানের দাম একেবারে নিম্নমুখি হওয়ায় কষ্টের মধ্যে রয়েছে এসব অঞ্চলের পানচাষিরা।
রাজশাহীর বাগমারার মোহনগঞ্জ হাটে পান বিক্রি করতে আসা চাষি আকরারম আলী বলেন, চলমান করোনাভাইরাসের কারণে বিগত দিনে টানা একের পর এক বিধিনিষেধ লকডাউন থাকার ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে পাইকাররা আসতে না পারায় পানের দাম কয়েকগুণ কমতিতে বিক্রি করতে হচ্ছে।
দূর্গাপুর উপজেলার পানচাষি মিজানুর রহমান বলেন, ২০ শতক জমিতে পানের বরজ করেছি। পান বরজ খুব সুন্দর হয়েছে। কিন্তু গত এক মাস হতে যে পানের দাম ছিলো ৩০ টাকা বিড়া, সেই পানের দাম এখন প্রতি বিড়া ৫ টাকা। এভাবে পানের দাম কমতে থাকলে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।
পানচাষি রুহুল আমিন জানান, ১৫ শতক জমিতে পান করি এবং উৎপাদনও আশানুরুপ হয়েছে। পূর্বে যে পান বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিড়া। সেই পান এখন ২০ থেকে ৩০ টাকা। বর্তমানে বাজার প্রচন্ড খারাপ। পান গাছ থেকে পান সংগ্রহের জন্য একজন শ্রমিকের মজুরি ৫০০ টাকা। অথচ পান হাটে বিক্রি করে শ্রমিকের টাকায় মিলছে না।
মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল গ্রামের পান চাষি হবিবুর রহমান জানান, ২০ শতক জমিতে পানবরজ করেছি। বরজে অনেক পান আছে। হাটে নিয়ে গিয়ে ক্রেতার সংকটে খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিন কাটছে। বর্তমানে পানের দাম ভাল না পাওয়ায় ক্ষতির মধ্যে পড়েছি।
শিবপুর গ্রামের পাইকারি পান ক্রেতা বাবু জানান, প্রতিবছর এ সময় পানের বাজার একটু খারাপ যায়। কারণ বর্ষা মৌসুমে বরজে পানের গাছ বেশি লম্বা হয় এবং অন্য সময়ের চেয়ে এসময় পান উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে হাটেও আমদানী বেশি হয়। এতে করে দাম কম হয়। তবে, আর কিছু দিন পর হতে পানের মূল্য বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, ছোট পানের পোয়া পূর্বে ১৫০০ টাকার স্থলে এখন ৪০০-৬০০ টাকা। আর বড় পানের পোয়া ২০০০ টাকার স্থলে এখন ৬০০-৮০০ থেকে টাকা বিক্রি হচ্ছে।
পাকুড়িয়া পান হাট কমিটির পরিচালক আতাউর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল পাইকাররা ঠিকমত আসতে পারছে না। ফলে, আমদানি বেশি হলেও ক্রয়-বিক্রয় আগের তুলনায় কম হচ্ছে। পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়ায় পুরোদমে পান বেঁচা-কেনা শুরু হলে। পানের দামও বাড়তে আরম্ভ করবে। তিনি আরো বলেন, হাটে পাইকারদের উপস্থিতি কম হওয়ায় প্রতি হাটে কমিটির অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছা. উম্মে ছালমা জানান, চলমান বিধিনিষেধে জরুরি কৃষি পণ্যের ক্ষেত্রে কোন বাধা নিষেধ নেই। এক্ষেত্রে পান চালানে কোন সমস্যা হওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিবছরের বর্ষা মৌসুমে পানের উৎপাদন অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি হয়। ফলে, এসময় পানের বাজার কিছুটা কম হয়ে থাকে। তবে, আর কিছুদিনের মধ্যে পানের দাম আগের মত বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরো বলেন, কোভিড এর কোন প্রভাব চাষিদের উপর পড়ার সুযোগ নেই। কারণ চাষিরা যেনো নির্বিঘ্নে তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে পারে সেজন্য প্রতিটি উপজেলায় আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। আজকের তানোর