শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:০৯ am
আর কে রতন :
একজন ব্যবসায়ী যখন লাখ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেও বিভিন্ন প্রতিকূলতার জন্য ব্যবসায় লোকসানের কারণে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় এবং মহাজনের দেনা-পাওনায় অনেকে পথে বসেছে। আবার কেউ কেউ দেনার দায়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
অথচ একজন দরিদ্র বেকার যুবক মাত্র দুই হাজার টাকা মূলধন নিয়ে ফুটপাতে প্রতিদিন বিকেল ৫টা হতে রাত্রি ১০টা পর্যন্ত সু-স্বাধু মাখানো ঝাল মুড়ি বিক্রি করে আজ সংসারের অভাব কাটিয়ে সুখের সন্ধান লাভ করেছে। গল্পটি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বরইকুড়ি গ্রামের মৃত মঙ্গল প্রামানিকের ছোট ছেলে বিমল প্রামানিকের। এই ছোট ব্যবসায় করেও সে স্বাবলম্বী হয়েছেন। চার সদস্য নিয়ে এখন তার সুখের সংসার।
জানা গেছে, বিমল একজন শ্রমজীবি জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক যুবক। তার মনের মাধূরি দিয়ে চানাচুর, মুড়ি, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, ছোলা আর ক্ষিরাসহ বিভিন্ন রকম মসলা দিয়ে অত্যন্ত মুখরোচকভাবে মুড়ি মাখিয়ে প্রাহকদের মন আকৃষ্ট করে চলেছে। ঝাল মুড়ি বিক্রি করেই আজ তিনি স্বাবলম্বী। বর্তমানে তিনি মোহনপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা হতে কর্মজীবি মানুষরা সারা দিনের কাজ শেষে সন্ধ্যার সময় বিমলের মাখানো ঝাল মুড়ি খাওয়ার জন্য ছুটে আসে। শত কর্মব্যস্থতার পরেও মানুষটির মুখে যেন সার্বক্ষণিক আনন্দের ছাপ থাকে।
বিমল প্রামানিক বলেন, আমি অনেক ছোট থাকতে বাবা পরলোক গমন করেন। কষ্ট করে ভায়ের সংসারে বেড়ে উঠেছি। আর্থিক সংকটের কারণে বাকশিমইল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশ করি। পরে মনে প্রবল ইচ্ছে শর্তেও অর্থের অভাবে আর পড়াশোনা করতে পারিনি। জীবন-জীবিকার তাগিদে অন্যের দোকানে কাজ করতে শুরু করি। এরপর দীর্ঘ ১০ বছর মানুষের কাজ করার পর নিজের রোজগারের দুই হাজার টাকা জমিয়ে ২০১০ সাল থেকে মোহনপুর থানার মোড়ে চাকা লাগানো ভ্যান গাড়ীতে বসে মাখানো ঝাল মুড়ি বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন গড় তিন হাজার পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে এক হাজার হতে বারশ টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়।
আমি এখন অনেক সুখে আছি। এই ব্যবসা করে একটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছি। এছাড়া দুই ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা করাই। মাখানো মুড়ি নিতে আসা গ্রাহক এবি গালিব বলেন, প্রতিদিন মাঠে খেলাধূলা শেষে সন্ধ্যায় মোহনপুর থানার মোড়ে বিমল দাদার হাতের মুড়ি না খেলে তৃপ্তি পাই না। তাই রোজ একবার এই দোকানে মুড়ি নিতে আসি।
এ্যাডভোকেট দিলিপ কুমার সরকার তপন বলেন, মুড়ি বিক্রেতা বিমল একজন প্রচন্ড পরিশ্রমী যুবক। তার হাতে মাখানো মুড়ি আমিও খেয়ে থাকি। তার মাখানো মুড়ি খুব মুখরোচক। ফলে দিন দিন তার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। তার মাখানো মুড়ি সবার কাছে প্রিয়।
মোহনপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আলমাস হোসেন বলেন, ব্যবসায় পুঁজি কম হলেও শ্রম ও আত্নবিশ^াস এবং সুনাম ছড়িয়ে পড়লে সে ব্যবসার সেল বেড়ে যায়। মুড়ি বিক্রেতা বিমল একজন পরিশ্রমী যুবক। তার ব্যবহার ভালো, হাতের মাখানো মুড়ি প্রচন্ড সু-স্বাধু, সে মনের মাধূরি দিয়ে চানাচুর, মুড়ি, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, ছোলা, ক্ষিরা সহ বিভিন্ন রকম মসলা দিয়ে অত্যন্ত মুখরোচকভাবে মুড়ি মাখিয়ে গ্রাহকদের মন আকৃষ্ট করে এ বিষয়টি এলাকার মানুষের কাছে ব্যাপক ভাবে প্রচার হয়েছে।
এতে তার বিক্রি বেশি হয়। ঝালমুড়ি বিক্রি করেই আজ তিনি স্বাবলম্বী। আজকের তানোর