সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:২৭ am
বিনোদন ডেস্ক : বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসর কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ প্রশংসিত হয়েছে। ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে অফিশিয়াল সিলেকশনে প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা এটি।
চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের পর ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয়কারী আজমেরী হক বাঁধনকে নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেহানা মরিয়ম নূরকে কেন্দ্র করেই নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি।
বুধবার ছবির প্রদর্শনীর আগে দক্ষিণ ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরের তীরঘেঁষে পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের দুবুসি থিয়েটারের সামনে লালগালিচায় হেঁটেছেন ছবিটির অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন।
পর দিন পালে দে ফেস্টিভ্যালের পাশে উত্তাল সমুদ্রের নীল জলরাশিকে পেছনে ফেলে ঢাকাই জামদানি জড়িয়ে ক্যামেরার সামনে দেখা গেছে বাঁধনকে; কখনও হাইহিলের সঙ্গে মখমলি জাম্পস্যুটে মোহনীয়তা ছড়িয়েছেন এ নায়িকা। তাবৎ বিশ্বের প্রভাবশালী সব গণমাধ্যমের ক্যামেরার লেন্স খুঁজে নিয়েছে তাকে।
হলিউডের নন্দিত নায়িকাদের হরহামেশাই এমন দৃশ্যে দেখা মিললেও বাংলাদেশের কোনো নায়িকা এতদিন ছিল শুধুই কল্পনায়; ৫০ বছরের কল্পনাকে বাস্তবে পরিণত করলেন বাঁধন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঁধন বলেছেন, কানে অংশ নেওয়া আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। এমন সুযোগ পাওয়া খুব কঠিন। আমি ছবিটির অংশ হতে পেরেছি বলে গর্বিত।
বাঁধন বলেন, ছবির জন্য দেড় বছর আমি অন্য কোনো কাজ করিনি। এই ছবির কাজের দেড় বছর আমার জন্য মূল্যবান সময় ছিল। এখানে কাজ করতে গিয়ে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছি। চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি এই কাজটি করেছি। যে সময় সবার একটিই কথা ছিল— আমি হারিয়ে যাচ্ছি, আমার ক্যারিয়ার শেষ; ঠিক সেই সময়ে আমি এই কাজ শুরু করি। অবশেষে আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।
জীবনের স্মরণীয় মুহূর্তের অংশ হতে পেরে নির্মাতা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাঁধন।
বাঁধন বলেন, পুরো কৃতিত্ব পরিচালক সাদের। আমাদের সমাজব্যবস্থায় নারীপ্রধান গল্পের সিনেমা করা কঠিন। নারীর দৃষ্টিতে সমাজকে কেউ দেখতে চায় না, আবার দেখাতেও চায় না।
তিনি আরও বলেন, পারিপার্শ্বিক কারণে নারীরা তা পারে না; আর ছেলেদের পক্ষে বিষয়টি বুঝতে পারা কঠিন। কেউ কেউ বুঝলেও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ঝুঁকি নিতে চান না। এ ছবিতে নারীকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা বোঝার ক্ষমতা খুব কম পুরুষেরই রয়েছে। সাদ আলাদাভাবে চিন্তা করতে পেরেছে। আমাকে ইতিহাসের অংশ করার জন্য সাদের প্রতি সারাজীবনের জন্য কৃতজ্ঞ থাকব।
বুধবার দর্শকদের সঙ্গে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবার ছবিটি দেখেছেন বাঁধন। প্রদর্শনের পর হলভর্তি দর্শকের করতালিতে অভিভূত হয়ে আনন্দে কেঁদেছেন বাঁধন।
সিনেমাটি দেখে এক ফরাসি নারী দর্শক হলের ভেতরে বাঁধনকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেই মুহূর্তে জোর চেষ্টায়ও নিজের কান্না লুকাতে পারেননি বাঁধন।
হল থেকে বেরিয়েও কেউ কেউ চরিত্র হিসেবে রেহানার প্রতি ও বাঁধনের অভিনয়ের প্রতি মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন।
প্রদর্শনী শেষে বুধবার লাঞ্চের ফাঁকে এক বিদেশি পরিচালক বাঁধনের অভিনয়ের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘ইউ আর অ্যামাজিং’।
ডিনার থেকে ফেরার পথে এক ফরাসি নারী বাঁধনকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছেন, ‘তুমি তো রেহানা, তোমার ছবিটি দেখেছি। দুর্দান্ত। আমি কি তোমায় একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি?’ বাঁধন বলছেন, এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়ে তিনি বোকা বনে গিয়েছিলেন। তাকে এভাবে কেউ চিনবে সেটি জীবনে কল্পনা করার সাহসই পাননি। সূত্র : যুগান্তর