শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৩৩ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা : খাদ্য ও কৃষি বিভাগের আহ্বানে রাজশাহীর বাগমারার ৬৩ হাজার কৃষকের সাড়া নেই। বাজার বা সরকারের নির্ধারিত দামের মধ্যে সামান্য ফারাক থাকার কারণে কৃষকেরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করছেন না। ঝামেলা এড়াতে তাঁরা বাজারেই ধান বিক্রি করছেন। অথচ দুই বছর আগে বাজার মূল্যের চেয়ে সরকারের নির্ধারিত মূল্য বেশি থাকায় কৃষকেরা গুদামে ধান বিক্রিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন। ধান সংগ্রহ করতে না পারার কারণে বিপাকে পড়েছে খাদ্য বিভাগ।
উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মার্চ চলতি মৌসুমে বোরো ধান ক্রয়ের উদ্বোধন করা হয়। মুঠোফোনের মাধ্যমে স্থানীয় সাংসদ এনামুল হক ধান কেনার উদ্বোধন করেন। এবছর ২৮০০ মেট্রিকটন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি এক হাজার ৮০ টাকা মণ দরে ধান কেনার ঘোষণা দেওয়া হয়। সে মোতাবেক উপজেলা কৃষি অফিস সাড়ে ৬৩ হাজার কৃষকদের (ধানচাষি) তালিকা প্রস্তুত করে খাদ্য বিভাগের কাছে পাঠায়। কৃষি বিভাগ এই বার্তা কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়। খাদ্য বিভাগও কৃষকদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়ে সরকারের কাছে তাঁদের ধান বিক্রির জন্য আহ্বান জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) পর্যন্ত সাড়ে ৬৩ হাজার কৃষকদের মধ্যে মাত্র ১০১জন সাড়া দিয়েছেন। ওইসব কৃষকদের কাছে থেকে সাড়ে তিন মাসে মাত্র ৩০০ মেট্রিকটন ধান কিনতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। উপজেলার ১০১জন কৃষক সাড়া দিয়ে ওই পরিমান ধান বিক্রি করেছেন। অবশিষ্ট কৃষকেরা সরকারে কাছে ধান বিক্রিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অথচ আগামী ১৬ আগস্টের মধ্যে ২৮০০ মেট্রিকটন ধান কেনার জন্য সরকারের নির্দেশনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান বলেন, উপজেলায় কৃষিকার্ডধারী সাড়ে ৬৩ হাজার ধানচাষির নাম খাদ্যবিভাগে পাঠানো হয়েছে। এসব কৃষকদের সরকারের কাছে ধান বিক্রির জন্য বলা হয়েছে। তবে কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন। তাঁরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করছেন না এটা হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন।
কৃষক, ব্যবসায়ী ও খাদ্য বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার নির্ধারিত ও বাজার মূল্যের মধ্যে সামান্য তফাৎ থাকার কারণে ধান কেনা দুরুহ হয়ে পড়েছে। কৃষকেরা বিক্রির জন্য ধান গুদামে না নিয়ে সরাসরি হাটে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে তাঁরা দর-দাম করে বিক্রি করছেন। অথচ দুই বছর আগে বাজার মূল্যের চেয়ে সরকারি নির্ধারিত মূল্য ২৫০-৩০০ টাকা বেশি থাকায় কৃষকেরা প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচিত করা হয়েছিল।
গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার ভবানীগঞ্জ, তাহেরপুর, হামিরকুৎসা ও শিকদারী হাটে ঘুরে দেখা যায়, সেখানে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৮০-৯৯০ টাকায়। হাটেই সব রকমের ধান বিক্রি করতে পারছেন কৃষকেরা। মণে ৮০-৯০ টাকা কম হলেও দৌড়-ঝাঁপ এড়াতে হাটেই বিক্রি করে দিচ্ছেন ধান।
উপজেলার কালিকাপুরের কৃষক জেহের আলী, মধুপুরের ইদ্রিস আলী, রামরামার সোহরাব হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, দেউলার ইসমাইল হোসেন জানান, ঝামেলা এড়াতে ভালো দাম পাওয়াতে এবার তাঁরা ধান হাটেই বিক্রি করছেন। গত এক বছর আগে তাঁরা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করেছিলেন। বাজার দর ও সরকারি দাম প্রায় সমান থাকার কারণে সরকারের কাছে বিক্রি করছেন না। তাঁদের অভিযোগ গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে আদ্রতা, সঠিক মান ও ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন এবং কয়েক দফা গুদামে ঘোরাঘুরি করার পর টাকা যাওয়া যায়। একই রকম অভিযোগ করেছেন শতাধিক কৃষক।
এসব অভিযোগ আংশিক স্বীকার করে উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, সরকারি নিয়মানুসারে আর্দ্রতা ঠিক রেখে ধান কিনতে এবং প্রত্যেক কৃষকের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করা হয়। এটা হয়রানি নয়, সরকারি নিয়ম। এলাকায় বর্তমান বাজার সরকার নির্ধারিত দামের কাছাকাছি থাকায় কৃষকেরা তাঁদের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন না। এজন্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কিত বলে মন্তব্য করেন।
উপজেলা ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদ স্বীকার করেন, এখন পর্যন্ত সংগ্রহ হতাশাজনক। কীভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায় সে বিষয়ে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আজকের তানোর