শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৫২ pm
ডেস্ক রির্পোট : ১৯৭৩-৭৪ সালে ৫২৫ কোটি টাকার উন্নয়ন ও পুনর্গঠন বাজেট দেন অর্থ ও পাটমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। এই দিনে (১৪ জুন) জাতীয় সংসদে তিনি বাজেট পেশ করেন। এ দিনের পত্রিকাগুলোতে বাজেটের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রকাশ করা হয়। বাজেট পেশের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদের ছবি পরের দিনের পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। বাজেটের ৩৫২ কোটি টাকা বিদেশ থেকে আসবে বলেও বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে আমদানি-রফতানি শুল্ক বাড়ানো হয়। ওই বছরের বাজেটের বিশেষত্ব—শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল সবচেয়ে বেশি। এর আগের অর্থবছর সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ ছিল কৃষি খাতে।
জাতীয় সংসদের প্রথম বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তার ভাষণে বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন সাধনের জন্য নিজেদের তার মূল্য জোগাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রশাসন ও জনগণকে ন্যূনতম মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হতে হবে।’
বিভিন্ন খাতের বরাদ্দ
১৯৭৩-৭৪ সালের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন ও পুনর্গঠন পরিকল্পনা খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয় যোগাযোগ ও পরিবহন ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১০৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। এরপর অগ্রাধিকার পেয়েছে কৃষি খাত—৮৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা কৃষি খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।
মোটা কাপড়ের শুল্ক প্রত্যাহার
দেশের সাধারণ মানুষের কর হার লাঘবের জন্য ১৯৭৩-৭৪ সালে সুতি কাপড়ের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে বলে উল্লেখ হয়। তবে উন্নয়ন ও পুনর্নির্মাণ পরিকল্পনার জন্য অতিরিক্ত কর আরোপ করে ২৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করা চলছে বলেও একইসঙ্গে উল্লেখ করা হয়।
জনসংখ্যা নিয়ে শঙ্কা
১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত হবে? ১৯৭৩ সালে সেই বিষয়ে শঙ্কার পরিস্থিতি তৈরি হয়। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সে সময় যেমন ছিল, সেভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ দাঁড়াবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্বব্যাংকের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পুষ্টি বিভাগের পরিচালক সেদিন (১৪ জুন) এ কথা জানান। স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক ভোজসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের স্কিম বাস্তবায়নের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য অর্থ সাহায্য করতে ইচ্ছুক।’ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘পরিবার-পরিকল্পনার মতো রাষ্ট্রীয় সম্পদের মধ্যে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধে সরকারের সদিচ্ছার কোনও অভাব নেই।’ তিনি এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সাহায্যের কার্যকরী ও ফলপ্রসূ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে বরাদ্দ
বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে ১৭ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানান অর্থ ও পাটমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। এদিন জাতীয় সংসদে তিনি বলেন, ‘‘বেতন কমিশনের সুপারিশ গুরুত্ব বহন করবে বলে আশা করা যায়। এই সুপারিশ কার্যকর করার জন্য আগামী বছরের বাজেটে ১৭ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য একটি উপযুক্ত বেতন কাঠামো তৈরি করে ‘শ্রমিক মজুরি কমিশন’ সুপারিশ পেশ করতে পারে।’’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিক মজুরি কমিশনের সুপারিশ এবং বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।’
এদিকে পহেলা জুলাই থেকে রেশনের চাল-ডাল ও তেলের দাম বাড়ানোর কথা জানান অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় তিনি জানান, আগামী অর্থবছর থেকে প্রতিমাসে ২ লাখ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হবে। পহেলা জুলাই থেকে চালের দাম ৪০ এবং গমের দাম ৩০ টাকা করা হয়েছে। প্রসঙ্গ, (বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৪ জুনের ঘটনা।) সূত্র : বংলাট্রিবিউন