সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৩৯ pm
ডেস্ক রির্পোট : বাংলাদেশের জন্য ২৫ মে ছিল এক ঐতিহাসিক দিন। এদিন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার জন্য ২০ কোটি ডলারের মুদ্রা বিনিময় চুক্তি অনুমোদন দেয়। গত মাসে শ্রীলংকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে সাড়ে ৪ বিলিয়ন বা সাড়ে ৪শ কোটি ডলারে নেমে যায়। ঋণদাতাদের দেনা পরিশোধ করে এবং করোনাভাইরাসের অভিঘাতে তীব্র অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ে দেশটির অর্থনীতি।
তবে বিপরীতে বাংলাদেশ এ করোনা মহামারির সময় বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৫ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৫শ কোটি মার্কিন ডলার।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, একটি তলাবিহীন ঝুড়ি। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে জায়ান্ট প্রতিবেশী ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। সেই ভারত যার হস্তক্ষেপ ছাড়া বাংলাদেশের জন্মলাভ কঠিন হয়ে যেত, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ এত দ্রুত আয়ের ব্যবধান কমিয়ে এনেছে, যা এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক দক্ষতার এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনকে উপস্থাপন করছে।
নিক্কেই এশিয়ান রিভিউয়ে গত শুক্রবার প্রকাশিত ভারতীয় গবেষক ও কলামিস্ট রূপা সুব্রামণ্যর এক নিবন্ধে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্থানে তৈরি পোশাক শিল্পের বড় অবদান রয়েছে। ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোং-এর মার্চ পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী তৈরি পোশাক শিল্প দেশটির ৮৪ ভাগ রপ্তানি আয়ের জোগান দেয়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স হলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস।
২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটির ডলারের বেশি রেমিট্যান্স অর্জন করেছে বাংলাদেশ, যা একটি নতুন রেকর্ড। বাংলাদেশের বিশাল বৈদেশিক মুদ্রার উৎস এগুলোই। দেশটির অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি শক্তিশালী সামাজিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নের মধ্যে নিহিত রয়েছে। এর মধ্যে নারীদের উত্থানও একটি বড় কারণ। দেশটিতে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৬, যা ভারতের চেয়ে কম। ভারতে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৮। বাংলাদেশে নারীশিক্ষার হার ৭২ শতাংশ, যা ভারতে ৬৬ শতাংশ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, এ সূচকগুলোতে দিন দিন ভারতের অবনতি হচ্ছে, বিপরীতে বাংলাদেশের উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের বিকাশ ধারা ভারতের উপরে অবস্থান করছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ভারতের অর্থনীতি গত বছর বছর ৭.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। পক্ষান্তরে একই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৫.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যখন ভারত করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত, তখন ১৮ মে বাংলাদেশ দিল্লিতে হাজার বক্স জরুরি ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী ত্রাণ হিসেবে পাঠিয়েছে। এর কয়েক সপ্তাহে আগে, ভারতে ১০ হাজার রেমডেসিভির ভায়াল ত্রাণ হিসাবে পাঠিয়েছিল ঢাকা।
ভারতে ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বাচনের আগে তৎকালীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ‘উইপোকা’ হিসেবে উল্লেখ করে তাদের বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলার কথা বলেছিলেন। এখন বাংলাদেশ থেকে ত্রাণ সহায়তা গ্রহণ করার মাধ্যমে ভারত সরকার নিশ্চিতভাবেই তাদের ভুল বুঝতে পারবে। যদি বাংলাদেশের বর্তমান গতিপথ অব্যাহত থাকে, তবে ভারত ও বাকি বিশ্ব তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উদীয়মান নক্ষত্র হিসেবে রূপান্তরিত বাংলাদেশের গল্প লিখে রাখবে। সূত্র : যুগান্তর