শাহীন আলম, দুর্গাপুর (রাজশাহী) :
শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ করার কারণেই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ভয়াবহ রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দশরথ চন্দ্র কবিরাজের পরিবার। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন যে তিনি আওয়ামী লীগ করতেন তাই তার উপর এত নির্যাতন হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ৫নং ঝালুকা ইউনিয়নের আমগাছি গ্রামের দশরথ চন্দ্র কবিরাজ। তাকে সবাই দশরথ মাস্টার নামেই চেনেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন এলাকায় সংগঠকের কাজ করেছেন তিনি। তার এক ছেলেও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দশরথ মাস্টার বেঁচে নেই এখন। বেঁচে আছেন তার ১০৩ বছর বয়সী স্ত্রী লক্ষ্মী রানী কবিরাজ।
জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি একবারের জন্য হলেও শেষ দেখা করতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। অসহায় এই নারীর এখন নেই আর কোনো অবলম্বন। স্বামীর ভিটা আঁকড়ে পড়ে প্রহর গুনছেন শেষ দিনের জন্য।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আজন্ম সৈনিক দশরথ মাস্টার ছিলেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ সহচর। পঁচাত্তর পরবর্তী সব আন্দোলন-সংগ্রামে সমানভাবে ছিলেন সক্রিয় ছিলেন। শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কারণে বারবার সইতে হয়েছে জুলুম-নির্যাতন। তারপরও এক মুহূর্তের জন্য আওয়ামী আদর্শচ্যুত হননি।
এদিকে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০০৬ সালের ১৩ আগস্ট অনেকটাই বিনা চিকিৎসায় মারা যান দশরথ মাস্টার। তবে তার আগে বসতভিটা দখলের জন্য দুই দফায় তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়। লুট করা হয় পুকুরের মাছ। কেটে সাবাড় করা হয় বাগানের গাছ। রাজনীতির এ ভয়াবহ দাবানল সহ্য করে স্বামীর বিরান ভিটায় কালের সাক্ষী হয়ে এখনও বেঁচে আছেন দশরথ মাস্টারের ১০৩ বছর বয়সী স্ত্রী লক্ষ্মী রানী কবিরাজ।
লক্ষ্মী রানী বলেন, ২০০১ সালে শুধু আওয়ামী লীগ করার কারণে তার স্বামীকে নৃশংসভাবে নির্যাতন করে বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। রাতের আঁধারে জ্বালিয়ে দেয়া হয় বাড়িঘর। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক লুট করে পুকুরের মাছ। বাড়ির চারপাশের বাগানের গাছগাছালি কেটে সাবাড় করা হয়। চেয়ে চেয়ে দেখলেও বাধা দেয়ার ক্ষমতা ছিল না। কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। পুলিশকে বারবার ডেকেও পাওয়া যায়নি। থানায় বারবার অভিযোগ দিলেও পুলিশ একটিবারের জন্য আসেনি। অসহায় পরিবারটিকে সইতে হয়েছে সীমাহীন নির্যাতন। লক্ষ্মী রানী কবিরাজ জানালেন, দশরথ মাস্টারের পরিবারের ওপর চালিত ভয়াবহ নির্যাতনের খবর ওই সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হয়। দেশ-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে নির্যাতিত অন্য পরিবারগুলোর সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান। প্রধানমন্ত্রী কিছু আর্থিক সহায়তাও করেন।
লক্ষ্মী রানী বলেন, তিনি আর একটিবার শেষবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান। বলতে চান তার পরিবারের ওপর হওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের কিছু কথা। এই তার শেষ ইচ্ছা।
জানা যায়, লক্ষ্মী রানী কবিরাজের বর্তমান বয়স ১০৩ বছর। ১৯১৭ সালের ১৫ মে জন্ম তার। সাত সন্তানের এ মা দেখেছেন ব্রিটিশ রাজ। ভারত পাকিস্তান ভাগ। দেখেছেন পাকিস্তানি শাসন। দেখেছেন মুক্তিযুদ্ধ।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সহায় সম্পদ সব ফেলে স্বামী দশরথ মাস্টারের সঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে সন্তানদের নিয়ে ভারতে চলে যান। পাক হানাদার বাহিনী তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।
ভয়াবহ নির্যাতনের কথা স্মরণ করে লক্ষ্মী রানী আরও বলেন, ওই সময় বাড়িতে থাকতে না পেরে নির্যাতনের সম্বল করে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে লুকিয়ে থেকে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে আজ এ বাড়ি কাল ওবাড়ি করে কেটেছে তাদের দিন। পালিয়ে থাকতে হয়েছে দিনের পর দিন। সেই সঙ্গে দশরথ মাস্টারের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। একসময় একরকম বিনা চিকিৎসায় দশরথ চন্দ্র মাস্টার মারা যান।
দুঃসহ জীবনের না বলা কিছু কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাতে চান উল্লেখ করে ১০৩ বছর বয়সী লক্ষ্মী রানী বলেন, আমার বিশ্বাস বঙ্গবন্ধুকন্যা দশরথ মাস্টারের পরিবারের ওপর হওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের কথা ভুলে যাননি। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে শুধু একবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চাই।
দেশে সাম্প্রতিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে প্রধানমন্ত্রী কারো সাথেই দেখা করছেন না যদি সম্ভব হয় প্রধানমন্ত্রী আমার মোবাইল ফোনেও (+৮৮০১৭১২৫২৬২১৭) যদি অনুগ্রহ করে একটাবার আমার সাথে কথা বলতো তাহলেও আমি মরলেও শান্তি পেতাম। হয়ত আমি যে কোন মুহূর্তে মরে যেতে পারি আমার। আজকের তানোর