সমবার, ৩০ িসেম্র ২০২৪, সময় : ০৯:৩৭ pm
এম এম মামুন :
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চালু রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহীর পাঠক সমাজ ও ভ্রাম্যমান লাইব্রেরির কর্মীরা। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার সময় নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে গাড়িটি দাঁড়িয়ে ছিল। কার্যক্রম বন্ধ না করার দাবিতে এই গাড়ির সামনেই জড়ো হতে থাকেন পাঠকেরা। তারা বিভিন্ন ধরনের মার্কারি কালি দিয়ে পাঠকেরা লিখতে থাকেন নানা স্লোগান। পরে সেই দাবি-স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে গাড়িটির সামনেই দাঁড়িয়ে যান পাঠকেরা। কর্মসূচি থেকে শুধু বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চলমান রাখাই নয়, এই লাইব্রেরিকে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ারও দাবি জানিয়েছেন পাঠকেরা।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ সফি উদ্দিন। তিনি বলেন, বই পড়াকে উদ্বুদ্ধ করার কাজটি এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘকাল থেকে করে আসছে। হাজার হাজার পাঠককে বই পড়ার সেবা দিচ্ছে। অথচ, দুর্ভাগ্যজনক যে এটা নাকি অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই লাইব্রেরিকে ঢাকায় নিয়ে যাওযার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন,রাজশাহীবাসী হিসেবে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এটি চালু রাখতে হবে। সেই সঙ্গে বই পড়ার এই সুব্যবস্থা গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। কোনভাবেই বন্ধ করা যাবে না।
রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ লাইব্রেরিটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এই খবরে সিঅ্যান্ডবি মোড়ে এসেছিল। সে প্ল্যাকার্ডে লিখেছে ‘আমি বই চাই, বই কোথায় পাই?’। আব্দুল্লাহ বলে, ‘আমি এই লাইব্রেরি থেকে নিয়ে বই পড়ি। এই লাইব্রেরি বন্ধ করা যাবে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশকিছু শিক্ষার্থী এসেছিলেন মানববন্ধনে। হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রেজাউল কবীর বলেন, এখান থেকে খুব সহজেই পাঠক বই নিয়ে পড়তে পারেন। এখান থেকে বই নিয়ে পড়তে খরচ নেই। অনেক শিক্ষার্থীর টাকা থাকে না বই কেনার জন্য। সামনের প্রজন্মের জন্য হলেও এটি অব্যাহত থাকা দরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্পটি সরকারি অনুদানে চলে। সরকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মচারীদের বেতন এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বহন করে। আর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তাদের গাড়ি এবং বই দিয়ে এই প্রকল্প সঙ্গে যুক্ত থাকে। প্রথমে দুই বছর মেয়াদি প্রকল্প ছিল। এরপর দুই বছরের জন্য আবার মেয়াদ বাড়ানো হয়। দ্বিতীয়বার আবার মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ নিয়ে প্রকল্পের বয়স এখন ছয় বছর। এবার আর মেয়াদ বাড়েনি। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কার্যক্রম এই মাসেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ জন্য কর্মচারীদের চার মাসের অগ্রিম বেতন দেওয়া হয়েছে। বকেয়া বেতনও পরিশোধ করা হয়েছে। যে কোন সময় এই লাইব্রেরির গাড়ি ঢাকায় চলে যেতে পারে।
ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রমের রাজশাহী ইউনিটের কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এই খবরে পাঠকেরা এসে প্রতিবাদ জানাতে এসেছেন। এটি চালু হওয়ার পর থেকে একদিনও বন্ধ হয়নি। আমরা চাই এটি চালু থাকুক। প্রয়োজনে আমরা বেতন নেব না।
রাজশাহী শহরে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির ১৯ হাজার ১৩৯ জন কার্ডধারী সদস্য রয়েছেন। তার মধ্যে নিয়মিত সদস্য ২ হাজার ২০০ জন। শনিবার এক দিন সাপ্তাহিক ছুটি ব্যতীত প্রতিদিন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই গাড়িটি আট ঘণ্টা ধরে শহরের ৪৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে বই বিলি করে। লাইব্রেরিতে বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা ১৯ হাজার। পাঠকের মাসিক সদস্য ফি মাত্র ১০ টাকা। ফেরতযোগ্য সাধারণ সদস্যদের জামানত ১০০ টাকা। এই পাঠক সর্বোচ্চ ২০০ টাকা মূল্যের বই বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন।
বিশেষ সদস্যের জামানত ২০০ টাকা। তাঁরা সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা মূল্যের বই বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন। অগ্রবর্তী সদস্যের জামানত ৫০০ টাকা। তাঁরা ৭০০ টাকা মূল্যের পর্যন্ত বই বাড়িতে নিয়ে পড়তে পারেন। বিশেষ অগ্রবর্তী সদস্যের জামানত ৮০০ টাকা। তিনি যেকোনো মূল্যের বই বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পড়তে পারেন। সদস্যপদ বাতিল হলে জামানত ফেরত দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুনকে ফোন করা হলে, তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। রা/অ