বুধবা, ১৮ িসেম্র ২০২৪, সময় : ১২:৫৮ pm
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘিরে দেশের বিভিন্ন থানা-ফাঁড়িতে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র-সরঞ্জাম লুটপাট হয়। পরে আগস্ট মাসেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লুট হওয়া এসব অস্ত্র ফেরত পেতে সময়সীমা বেঁধে দেয় প্রশাসন। তবে নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রম করলেও এখনও লুণ্ঠিত অনেক অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলি বেশিরভাগই পেশাদার অপরাধীচক্রের হাতে চলে গেছে। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরির শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকি কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী এ অস্ত্রগুলো ব্যবহার করছে বলেও গুঞ্জন উঠেছে। ফলে লুটের এসব অস্ত্র বিভিন্ন গ্যাং বা দস্যুদের হাতে থাকাটা নিরাপত্তাহীনতা ও বড় হুমকি বলে মনে করছেন অনেকে।
এদিকে পুলিশের অস্ত্র ও গুলি বেহাত থাকা নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে এসব অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে অপরাধীরা। এসব লুণ্ঠিত অস্ত্র যাদের হাতেই থাকুক উদ্ধার করতে হবে। উদ্ধার না করা গেলে তা আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে।
এছাড়া সম্প্রতি রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় এসব লুণ্ঠিত অস্ত্র ব্যবহার করে ইতোমধ্যে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। এসব অস্ত্রসহ অনেককে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সর্বশেষ মুন্সীগঞ্জের শ্রীপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে সাহিদা ইসলাম নামে এক তরুণীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়কে গ্রেফতার করা হয়। এর পর বেরিয়ে আসে, ৫ আগস্ট রাজধানীর ওয়ারী থানা থেকে লুট করা অস্ত্রে গুলি চালিয়ে সাহিদাকে হত্যা করেন তৌহিদ। এর আগে মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে দফায় দফায় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মহড়া দেয় মাদক কারবারিরা। সেখানেও লুণ্ঠিত অস্ত্র ব্যবহারের কথা শুনা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, কাঠামো দেখে বোঝা যায়, সেখানে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ছিল লুণ্ঠিত। তাছাড়া পার্বত্য এলাকা, এমনকি লুণ্ঠিত অস্ত্র সুন্দরবন এলাকার জলদস্যুদের হাতে চলে গেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট সরকার পতন-পরবর্তী সময়ে ঢাকাসহ সারা দেশে ৫ হাজার ৮১৮টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র বেহাত হয়েছে। এসময় গোলাবারুদ লুট হয়েছে ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯ রাউন্ড। এর মধ্যে গত ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ৩ হাজার ৯৩৩টি। উদ্ধার হয়নি ১ হাজার ৮৮৫টি অস্ত্র। এছাড়া গত ৪ আগস্ট শুরু হওয়া যৌথবাহিনীর অভিযানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৫৫৪টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসব নিয়ে মামলা হয়েছে ২৮৮টি এবং গ্রেফতার হয়েছে ৪২০ জন। আর পুলিশের যে সমস্ত অস্ত্র লুণ্ঠিত হয়েছিল এ সংখ্যাটি হচ্ছে ৫ হাজার ৭৫০টি। এর মধ্যে চার হাজার ৩৩১টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, অর্থাৎ উদ্ধার ৭৫ ভাগের বেশি।
পুলিশ সদর দফতর বলছে, তাদের লুণ্ঠিত প্রায় ২৫ ভাগ অস্ত্রের এখনও কোনও খোঁজ মেলেনি। এ ছাড়া ৫ আগস্ট গণভবন থেকে নিরাপত্তা সংস্থা এসএসএফের বেশ কিছু স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র খোয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ৫ আগস্টে আমাদের অস্ত্র লুট হয়েছিল এবং যে অস্ত্রগুলো এখনও লুণ্ঠিত অবস্থায় আছে সেগুলো অবৈধ অস্ত্র হয়ে গেছে। যেহেতু আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়েছিলাম এ সময়ে মধ্যে অস্ত্রগুলো জমা দিতে। এসময়ে মধ্যে যারা অস্ত্র জমা দিয়েছেন আমরা রিসিভ করেছি, সে সময়টি ছিল ৩ সেপ্টেম্বর। এরপরে যাদের কাছে এসব অস্ত্র আছে সেগুলো কিন্তু অবৈধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি যে সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে সেগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল জমা দেওয়ার জন্য। সেগুলো যারা জমা দেননি সে অস্ত্রগুলোও এখন অবৈধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, অস্ত্রগুলো উদ্ধারে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অস্ত্রগুলো অপরাধীদের কাছে থাকুক বা যার কাছেই থাকুক এগুলো কিন্তু অবৈধ। অবৈধ অস্ত্র যার কাছেই থাকুক না কেন তাকে সেভাবেই বিবেচনা করা হয়। এজন্য আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছি। জনগণকে আমরা আহ্বান জানাই, কারও কাছে যদি কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকে সেই তথ্য দিলে আমরা অস্ত্র উদ্ধার করতে পারি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সারাদেশে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের ফলাফল খুব একটা প্রত্যাশিত নয়। আমরা দেখেছি, অনেক ছোট ছোট অস্ত্র এখন উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আমাদের ধারণা যাদের কাছে এসব অস্ত্র রয়েছে তারা সাধারণ মানুষ না। আর সাধারণ মানুষ কখনও এভাবে থানা থেকে অস্ত্র লুট করে নিজের কাছে রেখে দিতে পারে না। অস্ত্রগুলো খারাপ মানুষ অর্থাৎ দুষ্কৃতকারীদের হাতেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ফলে শুধু অস্ত্র উদ্ধার করলেই হবে না পাশাপাশি অস্ত্র লুটকারীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। নাহলে অস্ত্র লুটের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। যেটি রাষ্ট্র, সমাজ কারও জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। তিনি আরও বলেন, অস্ত্র ও গুলি বেহাত থাকা দেশের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ অস্ত্রগুলো বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে ও আরও বিভিন্ন সন্ত্রাসীকর্মকাণ্ডে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। ফলে এসব লুন্ঠিত অস্ত্র যাদের হাতেই থাকুক উদ্ধার করতেই হবে। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন