রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:০৩ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তিন ফসলি জমির উপরি ভাগের মাটি কেটে পুকুর ভরাটের কাজ শুরু করেছেন এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উপজেলার কলমা ইউপির আজিজপুর এলাকার নলপুকুরিয়া গ্রামে ফসলি জমি কেটে এমন পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। সম্প্রতি চলতি সপ্তাহ হতে শুরু করে ১৫ মে বুধবার দুপুর পর্যন্ত এই পুকুরটি ভরাট কাজ করতে দেখা গেছে।
অনুমতি ছাড়াই এভাবে ভেকু মেশিন দিয়ে পাশের ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর ভরাটের খবর স্থানীয়রা জানালেও ব্যবস্থায় উদাসিন উপজেলা প্রশাসন। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন যেমন হচ্ছে, তেমনি ভাবে শব্দে অতিষ্ঠ পাশে বসবাসকারীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, যেকোন পুরাতন পুকুর পুনঃসংস্কার করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা না করে শ্রেণি পরিবর্তন ছাড়াই দাপটের সাথে পুকুর ভরাট করলেও রহস্য জনক কারণে নীরব প্রশাসন।
বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কলমা ইউপির কুজিশহর থেকে আজিজপুর যাওয়ার রাস্তার পাশে নলপুকুরিয়া মাঠের দক্ষিণ পশ্চিমে বাঁশঝাড় সংলগ্ন ফসলি জমির মাটি কেটে ওই জমি সংলগ্ন পশ্চিমে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। পুকুরের উত্তরে, পশ্চিমে ও দক্ষিণে ধানী জমি। আর পূর্বদিকে বাঁশঝাড় ও কয়েকটি বসতবাড়ি রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে দিনরাত সমান তালে ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে দাপটের সাথে।
সেখান থেকেই তানোরে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত বাঘা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলামের মোবাইলে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ইউএনও স্যারকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করুণ। পরে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনে কি আছে জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে, ফসলি জমি কেটে পুকুর ভরাটের কোন সুযোগ নেই। খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক আইনজীবী জানান, পুরাতন পুকুর সংস্কার করতে হলে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। এতে শর্তও থাকে। কিন্তু কামাল হোসেন কিভাবে কার ক্ষমতায় পুকুর ভরাট করছে বুঝে আসে না। উপজেলাটি প্রচন্ড খরা ও তাপ প্রবন এলাকা। আবার ভূ-গর্ভের পানি দিনের দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। উপরি ভাগের পানি রক্ষা করার জন্য বিএমডিএ থেকে খাসপুকুর ও খাল খনন করা হচ্ছে। তাহলে কামাল হোসেন কোন ক্ষমতা বলে পুকুর ভরাট করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে এমন নানা প্রশ্ন বইছে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর মাঝে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত দু’বছর আগে উপজেলার সরনজাই ইউপির সরকারপাড়া বাজারে ছোট আকারের একটি খাসপুকুর ভরাট করা হয়। এঘটনায় আদালতে তৎকালীন ইউএনও পংকজ চন্দ্র দেবনাথ ও সরনজাই ইউপির চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক খাঁনের নামে মামলা দায়ের করা হয়। পরে অবশ্য মিমাংসা হয়।
এবিষয়ে মান্দা উপজেলার ফেরিঘাট এলাকার ভেকু মেশিন মালিক জামাল উদ্দিন জানান, আমার জানা মতে কৃষি জমিতে পুকুর খনন এবং পুকুর ভরাটের কোন নিয়ম নেই। আমি ভেকু মেশিন দিতে চায়নি। কিন্তু মালিক কালাম হোসেন সবার কাছ থেকে নাকি অনুমতি নিয়েছেন, এজন্য পুকুর ভরাটের কাজ করছি।
তানোর উপজেলার আজিজপুর এলাকার নলপুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা পুকুর ভরাটকারী প্রভাবশালী কামাল হোসেন বলেন, আমার পুকুর আমি ভরাট করব না খনন করব, সেটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। আর নিজের ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর ভরাট করছি প্রশাসনের কি করার আছে বলে দাম্ভিকতা দেখান তিনি।
এব্যাপারে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমানের সরকারি মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি। রা/অ