শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:২১ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : নিষ্ঠুর দারিদ্র্যকে জয় করে মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া পাবনার সুজানগরের জান্নাতুম মৌমিতা মুন্নীর দু:খ ঘুচতে বসেছে। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত মুন্নীর ভাগ্যাকাশে আঁধার কেটে আলোর দেখা মিলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তার মেডিকেল কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করেছে। পাবনার জেলা প্রশাসক মুন্নীর বাবার ঋণ করে কেনা ভ্যানের টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠান মুন্নীর পড়াশোনার সব ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে এসেছেন।
গত মঙ্গলবার বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় ও অনলাইনে ‘মেডিকেলে চান্স পেয়েও ভর্তি নিয়ে দু:শ্চিন্তায় মুন্নী’ শিরোনামে একটি মানবিক স্টোরি ছাপা হলে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের মর্ম স্পর্শ করে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে বৃহস্পতিবার পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ মুন্নী ও তার পরিবারকে দপ্তরে ডেকে পাঠান।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রওশন আলী গাড়ির ব্যবস্থা করে পাবনায় জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আসার সহায়তা করেন। দুপুর দেড়টায় জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদের কার্যালয়ে মুন্নীর বাবা ভ্যানচালক বাকীবিল্লাহ মেয়ে মুন্নীকে নিয়ে আসেন। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
এ সময় জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ মুন্নী ও তার বাবাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করে আনুষ্ঠানিকতার জন্য মুন্নীর কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়ে দেন। এছাড়া তিনি ব্যক্তিগতভাবে মুন্নীর বাবার ভ্যান কেনা বাবদ ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য ২০ হাজার টাকা নগদ প্রদান করেন।
মুন্নীর বাবার জন্য একটি সরকারি ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। এদিকে মুন্নীর ভর্তিপরবর্তী পড়ালেখা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সব ব্যয় বহন করার সহায়তার প্রস্তাব করেছেন বেশ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। হুইপ ইকবালুর রহিম মুন্নীর পড়ালেখার সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন এবং তিনি বৃহস্পতিবার মুন্নী ও তার বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথাও বলেছেন।
আরও পড়ুন: মেডিকেলে চান্স পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত মুন্নীর
রানার গ্রুপের পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান উজ্জল, গিভেন্সি গ্রুপের চেয়ারম্যান খতিব আব্দুল জাহিদ, দেশের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. খাজা নাজিমুদ্দিন, ঢাকার প্রতিষ্ঠান সাইল্যান্স হ্যান্ডস সাপোর্ট সোসাইটিসহ দেশ-বিদেশের অনেক ব্যক্তি, সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠান মুন্নীর পড়ালেখার দায়িত্ব নেয়ার জন্য যোগাযোগ করেন।
এছাড়া সুজানগর উপজেলা চেয়াম্যান শাহিনুর ইসলাম শাহিন, ইউএনও রওশন আলী মুন্নীর পরিবারের প্রতি বিশেষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
মেডিকেল কলেজের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৩১১০তম হয়ে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ দিনাজপুরে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন সুজানগরের হতদরিদ্র ভ্যানচালকের মেয়ে মোছা. জান্নাতুম মৌমিতা মুন্নী।
তিনি পাবনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন। ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৬৯.৭৫ নম্বর। শিক্ষা জীবনজুড়েই আর্থিক দুশ্চিন্তা ছিল মুন্নীর নিত্যসঙ্গী।
কিন্তু অদম্য মেধা এবং ইচ্ছাশক্তির জোরে সব বাধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেলেও আবার সেই আর্থিক দুশ্চিন্তাই তাকে ঘিরে ধরে। ভর্তির সুযোগ পেলেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। কোথায় পাবেন অর্থ এবং কে দেবেন অর্থের জোগান-এ শঙ্কায় দিন কাটতে থাকে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে মুন্নীর।
মুন্নী পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তাঁতীবন্দ ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের বাকীবিল্লাহ ও মোছা. রওশন আরা খাতুনের মেয়ে। ৪ সন্তানের মধ্যে মুন্নী বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মুন্নীর পিতা একজন দরিদ্র ভ্যানচালক।
মুন্নীর পিতার নিজ বাড়ির ২ কাঠা জায়গা ছাড়া তেমন কিছুই নেই। বাড়িতে রয়েছে মাটির ডোয়ার একটি ছোট টিনের ঘর। সেই একটি ঘরেই থাকেন পরিবারের সবাই। পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় মুন্নীর পিতার। মেডিকেলে ভর্তি ও পড়ার খরচ জোগানোর সামর্থ্য তার পিতার নেই।
মুন্নীর পিতা বাকীবিল্লাহ ব্র্যাকের স্থানীয় শাখা থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ভ্যান ক্রয় করেন এবং সেই ভ্যান চালিয়ে দিনে যে দুই-তিনশ’ টাকা আয় করেন-তা দিয়েই কোনোরকম কষ্টে পরিবারের ৬ জনের মুখের আহার তুলে দেন।
সুজানগর প্রতিনিধি আব্দুল আলীম রিপনের পাঠানো প্রতিবেদন মুন্নীর এই দু:খগাথা গত মঙ্গলবার দৈনিক যুগান্তরের অনলাইনে এবং বুধবার প্রিন্ট ইস্যুতে ‘মেডিকেলে চান্স পেয়েও ভর্তি নিয়ে দু:শ্চিন্তায় মুন্নী’ শিরোনামে ছাপা হয়।
এতে অসংখ্য মানুষের মর্ম স্পর্শ করে। দেশ-বিদেশের অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করেন। তবে জাতীয় সংসদের হুইপ এবং দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিমের প্রস্তাব মুন্নীর পরিবার গ্রহণ করে।
মুন্নীর বাবা বাকীবিল্লাহ জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ইকবালুর রহিম ভিডিও কলের মাধ্যমে তার সঙ্গে ও মেয়ে মুন্নীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি মুন্নীর এমবিবিএস পাস করা পর্যন্ত যাবতীয় ব্যয় বহন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিকে সবার ভালোবাসায় সিক্ত মুন্নী এবং তার পরিবার প্রধানমন্ত্রীসহ সব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন যারা তার সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছেন-তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিশেষ করে দৈনিক যুগান্তরের প্রতি তারা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মুন্নী সুজানগর পোড়াডাঙ্গা হাজী এজেম আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
পোড়াডাঙ্গা হাজী এজেম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ১৯৮৪ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলেও বিগত ৩৬ বছরে এই বিদ্যালয় থেকে কোনো শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পায়নি। কিন্তু এবার দরিদ্র পরিবারের এই অত্যন্ত মেধাবী মেয়ে মুন্নী সেই সুযোগ পাওয়ায় আমরা গর্বিত। আজকের তানোর