রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৪৪ am
আশরাফুল ইসলাম রনজু :
২২ মে বিশ্বপানি দিবস। আর এই দিবস উপলক্ষে নদী খননের দাবীতে মরা নদীর হাঁটু পানিতে কাগজের তৈরি নৌকা ভাসিয়ে প্রতিবাদ জানান বাংলাদেশ রির্সোস সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) ও তানোর উপজেলার ১০টি কৃষক ও যুব সংগঠনের সদস্যরা।
শুক্রবার (২২ মার্চ) দুপুরে উপজেলার গোল্লাপাড়ার গোডাউন সংলগ্ন শিবনদী সেতুর উপর কাগজের ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে ও নদীর নিচে হাঁটু পানিতে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে শিব নদী খনন ও বিলকুমারী বিল রক্ষার দাবিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় তানোর উপজেলার কৃতি সন্তান বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক নূর মোহাম্মদ বলেন ‘আমরা এক সময় দেখেছি শিব নদী দিয়ে অনেক লঞ্চ-স্টিমার ও বড় বড় বাণিজ্যিক নৌকা চলতো। অনেক কৃষিপণ্য এই নদী পথ দিয়ে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া হতো। আজ ভরাট ও দখলের কারণে এই নদী মৃত প্রায়। নদীতে বছরের অধিকাংশ সময় পানি থাকে না। সেচ সংকটে অনেক কৃষক ফসল চাষাবাদ করতে পারছে না। আজকে পানি দিবসে আমরা চাই শিব নদী দখল মুক্ত হয়ে খনন হবে। নদীটি ফিরে পাবে এর প্রাণ প্রবাহ। তানোর ও মোহনপুর উপজেলার ৩৫টি গ্রামের মানুষের জীবনের সাথে মিশে আছে বিলকুমারী বিল। এই বিল থেকে ৪টি জেলে গ্রামের জনগোষ্ঠী মাছ আহোরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু দিন দিন এই বিলের জমি দখল করে ধান চাষের নামে প্রতিনিয়ত বিলের পানির সাথে কীটনাশক ও রাসায়নিক মিশ্রিত করা হচ্ছে। যার ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এই বিলের দেশীয় মাছের প্রজাতি। ফলে জেলে সম্প্রদায় হারাচ্ছে তাদের জীবিকা।’
এ বিষয়ে তানোর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ও অধ্যক্ষ অসীম কুমার সরকার বলেন ‘বিলকুমারী বিল তানোর উপজেলার বড় পানি আধার। এই বিল থেকে অনেক পানি ভূ-গর্ভে রিচার্জ হয়। কিন্তু দিন দিন এ বিলের পানি বিষাক্ত হয়ে উঠছে। আমরা চাই বিলকুমারী বিল দখল ও দূষণ মুক্ত হোক। এই বিলে মাছের ৪টি অভাশ্রমের মাধ্যমে দেশীয় মাছের প্রজনন হতো। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে উপজেলার ডাকবাংলো মাঠে বসতো মাছের মেলা। আজ সেই মেলা হারিয়ে গেছে। প্রবহমান শিবনদী পরিনত হয়েছে মরা খালে।’
প্রবীন কৃষক ও গোকুল-মোথুরা কৃষক সংগঠনের সভাপতি শ্রী জিতেন্দ্রনাথ সূত্রধর বলেন ‘বিল থেকে সিঙ্গার, লিখার, পদ্ম, শালুক, পানিফল আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রান্তিক মানুষ এখন থেকে খাদ্য সংগ্রহ করত এবং তা ছিলো অনেক পুষ্টি কর। আমরা চাই বিলকুমারীর পানি যেন বিশাক্ত না হয়।’
উক্ত মানববন্ধন অনুষ্ঠানে তানোর উপজেলার ১৪টি গ্রামের শতাধিক কৃষক, যুবক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত : খরা প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে সকল প্রাণের জন্য পানি খুবই অপরিহার্য উপাদান। জলবায়ু সহ নানা কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির লেয়ার প্রতিনিয়ত নিচে নামছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় মাটির নিচের পানির আধার ফুরিয়ে গিয়ে সংকট আরো প্রকট করে তুলবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এখনই উপজেলার মন্ডুমালাসহ বাধাইর ইউনিয়নের অনেক গ্রামে মাটির ১৪০ ফিট নিচেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না, ইতিমধ্যে চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার বেশীর ভাগ গভীর নলকূপ গুলোতে পানি উঠছে না। অনেক গভীর নলকূপ আবার পুন: খননও করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এখনই বড় ধরণের ব্যবস্থা না নিলে তানোর উপজেলায় পানি সংকট ভয়াভয় আকার ধারণ করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। রা/অ