শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:১৫ am
দ্রব্যমূল্য সহনীয় থাকুক-এটা চাইছেন তো? যারা মওজুদদার, মুনাফাখোর এবং অসাধু ব্যবসায়ী তাদেরকে দমন ছাড়া এটা সম্ভব? ১৬০০ টাকার এলাচি ৩২০০ টাকা বিক্রি করা সেই ব্যবসায়ীর ‘হোল্ড অন’ বলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কঠোরতায় আপনার কোমল হৃদয়ে দরদ উথলে উঠছে? বয়স্ককে সম্মান করা স্বাভাবিক আদব তবে সেটা যে বয়স্কদেরককে অর্জন করতে হয় এবং ভালোকাজ করে সম্মানের অবস্থান ধরে রাখতে হয সে পাঠ আপনি এখনো পাননি বোধহয়! যে ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ইচ্ছামত মুনাফা করছে তাদেরকে সোনা-মনু বলে কুকর্ম থেকে ফেরানো যাবে না-সেই বোধ যতদিনে না হবে ততদিন এই রাষ্ট্রের অনেক ক্ষত অক্ষত থেকে যাবে। বক্তৃতা-সেমিনারের মাধ্যমে অসভ্য-জোচ্চোরদের স্বভাব বদলানো সম্ভব নয়!
আপনি হয়তো জানেন না, যে ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়গণ মিডিয়ার উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তাদের ক্যারিয়ার হুমকির সম্মুখীন হয়। জনবান্ধব ম্যাজেস্ট্রেট গোলাম সরোয়ার মহোদয়ের পরিনতি আপনার মনে আছে? অসাধু ব্যবসায়ীদের কারো কারো ক্ষমতার হাত প্রচন্ড লম্বা এবং শক্তিশালী। কখনো কখনো জীবনও হুমকির মুখে পতিত হয়। এসব হুমকি মাথায় নিয়েও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেও তারা জনতাকে কিছুটা স্বস্তি দিতে সামর্থ্য হচ্ছে। সরকারি চাকুরি করে বলে ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে আপনাদের জনম জনমের শত্রুতা এবং সবকিছুর নগ্ন সমালোচনা করবেন-এটা সভ্য সমাজের বিপরীত চরিত্র। যেখানে তাদের সাহসী কাজের প্রশংসা করা উচিত ছিল, বাহবা পাওনা ছিল সেখানে সেটা নেতিবাচক অর্থে ভাইরাল করে আমরা ইতিবাচক মানসিকতা দেখাই নি। অতীতেও দেখাইনি, ভবিষ্যতে সেই মানসিকতা দেখাবো কি-না সেটাও সন্দেহের!
আমরা বোধহয় সবাই একমত যে, দ্রব্যমূল্যের দাম কমা উচিত। বাজার করতে গিয়ে আমাদের যে ভোগান্তি তা জন্য দায়ী ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সিন্ডিকেট। এই অসাধু চক্রকে ভাঙার জন্য এবং সবার সামনে উদাহরণ সৃষ্টি করতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা এবং ত্বরিত শাস্তি নিশ্চিত করার ছাড়া গ্রহনযোগ্য বিকল্প আমাদের সামনে নাই। এলাচির ধূর্ত কারবারি হোল্ড অন বলার পরেই যখন ম্যাজিস্ট্রেটের রাগ বেড়েছে তখন তড়িঘড়ি করে বলেছে, ‘ইংরেজিতে তার একটু সমস্যা! ইংরেজিটা ঠিকঠাক আসে না! বোঝেন না! অথচ এই ব্যবসায়ী সেই চালানে ১১ হাজার কেজি এলাচি আমদানি করেছে এবং এর প্রত্যেক কেজিতে ১৬০০ টাকা ব্যবসা করেছে! এলাচি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ওষুধ শিল্পে! আমরা প্রয়োজনীয় খাদ্যের পরে সবচেয়ে বেশি খাচ্ছি ওষুধ! ওষুধের দাম যেভাবে হু হু করে বাড়ছ তাতে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তাতেও হুমকি!
বিভিন্ন সময়ে প্রতীয়মান হচ্ছে, সরকারি কর্মচারিদের কেউ কোন রকমের একটু ভুল করলেই জনতা একত্রিত হয়ে চেপে ধরে! চোখ রাঙায়। যেন জনমের সংঘাত। মিডিয়া তাদের পেছনে সংঘবদ্ধ ভাবে লেগে থাকে! অথচ কত অল্প বেতনে কত বেশি সেবা তারা দিচ্ছে সেই ভাবনা আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত। রাতদিন এক করে সেবা দিয়েও জনতার মন জয় করা যাচ্ছে না! তাদের পক্ষে পরিবারের জন্য আলাদা একটু সময় বের করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে! সরকারি কর্মচারীদের সাথে এক অঘোষিত যুদ্ধ জনতার সাথে ছড়িয়ে আছে! কিছু কর্মচারী বিপথগামী হয়েছে বটে কিন্তু অধিকাংশই ভালো সেবক। দেশপ্রেম ও জনস্বার্থে তাদের ডেডিকেশনের লেভেল অনেক উঁচু। কাজেই অসাধুদের দৌরাত্ম্য রুখে দিতে হলে কখনো কখনো কঠোরতা দেখাতেই হবে! একই সাথে আপনি তাড়া খাওয়া হরিণের এবং তাড়া করা সিংহের পক্ষ নিবেন-এমন চরিত্র দুশ্চরিত্রের!
যে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট রোজাদারের বাজারকে কঠিন করে দিয়েছে তাদের জন্য বেহেশত কঠিন হয়ে যাক-এই দোয়া করে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে? দোয়ার সাথে কিছু ধাওয়াও থাকতে হব। পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট আইনের সীমার মধ্যে থেকে যেটুকু কঠোর হতে হয় সেটুকু না হলেই বরং অন্যায়! শুধু বক্তৃতায়, মিষ্টি কথায়, পিঠে হাত বুলানোয় বড় মাপের বাজ্জাতেরা শুধরে যাবে-সেই আশা দুরাশার! কখনো কখনো লাঠি তুলতে হবে, কাঠি ভাঙতে হবে, কখনো কখনো চোখ লাল করতে হেেব, এবং কখনো কখনো কণ্ঠসবর উচ্চ করতেই হবে। সামগ্রিক কল্যাণের জন্য সোনা-মনু বলে যে কাজ সাধন করা যাবে না, সে কাজ উদ্ধার করার জন্য শালা বলার প্রয়োজন হলে সেটা বলতেই হবে! জোরসে খামোস বলার মাঝে অন্যায় নাই। বরং জায়গামত বলতে পারলে পূণ্য হবে। পুলিশের প্রয়োজন হলে লাঠি তুলবে, প্রশাসকের দরকার হলে কলম তুলবে। তাও দুষ্টের দমন করতে হবে। সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতেই হবে।
বাজারের ব্যাগ হাতে প্রত্যেকবার সাধারণ মানুষকে কম-বেশি গলদঘর্ম হতে হয়। একজন চাকুরিজীবী যা বেতন-ভাতা পায় তাতে চারটে ডাল-ভাতের জোগাড় করা কঠিন কিছু নয়। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের সেই উচ্চ কন্ঠ, রাগে দাঁড়িয়ে যাওয়া কিংবা কাউকে দন্ড দেওয়া সেটা নিম্নবিত্ত মানুষের স্বার্থের জন্য, সমগ্র মানুষের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য। কিছু কিছু ব্যাপার নেগেটিভ ভাবে উপস্থাপন করা, ভাইরাল করা-এটা অরুচির পরিচায়ক। দ্রব্যমূল্যের জন্য সরকারকে বকাবকি করবেন আবার যারা অসাধু দমাতে যায় তাদেরকে দমিয়ে দিবেন-এমন ডাবল স্টান্ডার্ড চরিত্রের খোলস থেকে বেরিয়ে এসে মানুষ হলে সেটা কওমের জন্য উপকারী হবে। ভালো কাজে প্রেরণা ও উৎসাহ দেওয়াও সাদকাহ!ডাক্তারের অপারেশনে ছুড়ি-কাঁচি হাতে কেন-এমন প্রশ্ন উত্থাপন করা স্রেফ আহাম্মকি! কলাম লেখক। সূত্র : [email protected]