রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:১৬ am
ডেস্ক রির্পোট :
রংপুর নগরীর নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ার বাসিন্দা জাকির হোসেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার তার বাসার বিদ্যুৎ চলে যায়। ভেবেছিলেন লোডশেডিং। কিন্তু রাত ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ না আসায় বাসা থেকে বের হন। গলির মাথায় গিয়ে দেখেন আশপাশের বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ আছে। শুধু তার ভবনে নেই। পরে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ারা যাচাই-বাছাই করে দেখেন ভবনের সামনে থাকা খুঁটি থেকে বৈদ্যুতিক পোল পর্যন্ত সংযোগ লাইন কাটা পড়ে আছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না তার চুরি হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পাড়ার আরও কয়েকটি ভবনের সংযোগ লাইনের তার চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা।
এভাবে প্রতিদিন নগরীতে তার চুরি হচ্ছে। গত এক মাসে ছয় শতাধিক বাসাবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নর্দান ইলেকট্রিসি সাপ্লাই কোম্পানি পিএলসির (নেসকো) প্রধান প্রকৌশলীর দফতরের তারও চুরি হয়েছে। নিত্যদিন এমন ঘটনা ঘটার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকর কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন পাড়া-মহল্লার বাসিন্দারা।
রংপুরে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন নগরীতে খুঁটি থেকে বৈদ্যুতিক পোল পর্যন্ত তার চুরির খবর পাচ্ছেন। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন নেসকোর কর্মকর্তারা। বিশেষ করে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানা এলাকায় চুরির ঘটনা বেশি ঘটছে। এতে গ্রাহকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাদের নতুন করে তার কিনে সংযোগ নিতে হচ্ছে। এমনও বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো থেকে তিন-চারবার তার চুরি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নেসকোর রংপুর কার্যালয়ের এক প্রকৌশলী বলেছেন, ‘নেসকোর সাবেক প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন এবং বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো. জিয়াউল ইসলামের কার্যালয়ের মূল সংযোগ লাইনের তার চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। কার্যালয়ের পাশে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। এভাবে গত এক মাসে ছয় শতাধিক বাসাবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তার চুরি হয়েছে। পুলিশকে জানানোর পরও চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না।’
নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ার বাড়িওয়ালা নাজমা বেগম বলেন, ‘আমার বাসা সড়কের পাশেই। মূল সংযোগ লাইন থেকে তার টেনে বাসার বাইরে পোলের সঙ্গে সংযুক্ত করা। সেখান থেকে বাসায় সংযোগ দেওয়া। গত ২৯ জানুয়ারি রাতে মূল লাইনের ১০০ মিটার তার কেটে নিয়ে যায় চোরেরা। এরপর নতুন তার কিনে বাসায় সংযোগ নিতে হয়েছে। বিষয়টি নেসকোর কর্মকর্তাদের জানানোরও পর কোনও পদক্ষেপ নেননি।’
একই রাতে ওই পাড়ার সেকেন্দোর আলীর বাড়ির মূল লাইনের তার চুরি হয়েছে। এর আগের মাসেও বিদ্যুতের খুঁটি থেকে তার বাসা পর্যন্ত দেড়শ মিটার তার চুরি হয়েছিল। বাসার সামনে লাগানো ছিল সিসিটিভি ক্যামেরা। খবর পেয়ে পুলিশ ও নেসকোর কর্মকর্তারা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ওই দিন ভোর ৪টা ২২ মিনিটে দুই ব্যক্তি সেকেন্দারের বাড়ির সামনে আসে। নিজেদের কাছে থাকা মোবাইল ফোনের লাইট জ্বালিয়ে মূল লাইন থেকে বাসা পর্যন্ত তার কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ভোররাত ৪টা ২২ থেকে ৫৩ মিনিট পর্যন্ত ঘটনাস্থলে অবস্থান করেছিল তারা। মুখে মাফলার বাঁধা ও মাথায় টুপি থাকায় তাদের চেনা যায়নি। ফলে ঘটনায় জড়িতরা আটক হয়নি।
সেকেন্দোর আলীর ছেলে সজিব হোসেন বলেন, ‘রাত ৩টার দিকে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় বাসায় বিদ্যুৎ ছিল। ভোর ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখি বিদ্যুৎ নেই। কিন্তু আশপাশের বাসায় আলো দেখে সন্দেহ হয়। বাইরে গিয়ে দেখি, মূল লাইন থেকে বাসা পর্যন্ত তার কেটে নিয়ে গেছে চোরেরা। পরে নতুন সংযোগ নিই।’
নগরীর কেরানি পাড়া, লালবাগ ও মুন্সীপাড়াতে প্রতি রাতে চুরির ঘটনা ঘটছে। এসব এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন, জাকির হোসেন, রাজু আহমেদ ও শামীম রেজা জানিয়েছেন, রাত ৩টা থেকে ৪টার দিকে গভীর ঘুমে থাকেন মানুষজন। এই সময়টা বেছে নিয়েছে চোরেরা। তারা বিদ্যুতের মূল লাইন থেকে বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংযোগ লাইনের তার কেটে নিয়ে যাচ্ছে। মূল লাইনের তারের দাম বেশি হওয়ায় সংঘবদ্ধ চোরেরা কাজটি করছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। ফলে প্রতিদিন রাতেই পাড়া-মহল্লার একাধিক স্থানে চুরির ঘটনা ঘটছে।
অভিনব পদ্ধতিতে চোরেরা তার কেটে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে নেসকোর রংপুর বিতরণ বিভাগ-১-এর সহকারী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘অনেক বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তার চুরি হয়েছে। বিদ্যুৎ চালু অবস্থায় মূল লাইনের তার কেটে নিয়ে যাওয়া আসলেই আশ্চর্যজনক। চোরেরা দক্ষ। তা না হলে অবশ্যই দুর্ঘটনার কবলে পড়তো। বিষয়টি আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মো. আবু মারুফ হোসেন বলেন, ‘ওসব এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে চোরদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি আমরা। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের তার চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারবো।’ রা/অ