বুধবা, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:২৯ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা :
খোলা আকাশে নিচে আছিয়া বেগম (৬০) চুলার ওপর ডালভর্তা আর ভাত রান্না করছেন। পাশে বসে আছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্বামী মইরুলদ্দিন (৬৭), প্রতিবন্ধী ছেলে মনিরুল ইসলাম (৪৫) ও প্রতিবন্ধী নাতি মিনারুল ইসলাম (১৮)।
তাদের থাকার জায়গা নেই। কোথাও জায়গা না পেয়ে চার সদস্যের পরিবার নিয়ে ১৫ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন আছিয়া বেগম। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে দেখা যায় অসহায় আছিয়া বেগমের জীবনচিত্র।
জানা যায়, ভূমিহীন-গৃহহীন আছিয়া বেগম। বাস করছিলেন অন্যের জমিতে। সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
আড়ানী রুস্তরপুর ভারতীয়পাড়া গ্রামের মইরুলদ্দিনের সঙ্গে ৫০ বছর আগে আছিয়া বেগমের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে জন্ম নেয় ৬টি সন্তান। এ গ্রামে তারা বসবাস করতেন। সন্তান মানুষ করতে গিয়ে যতটুকু জমি ছিল, তা বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে যান। সেখানে স্বামী মইরুলদ্দিনের পরিবার থেকে লাঞ্ছিত হয়ে ৫ বছর আগে চলে যান খুর্দ্দোবাউসা গ্রামে আছিয়া বেগমের মা ফুলজান বেগমের বাড়িতে।
ফুলজান বেগম মারা যাওয়ার পর এখানকার জমি নিয়ে ইনছার আলীর সঙ্গে আদালতে মামলা চলছে। এখান থেকেও তিনি লাঞ্ছিত হয়ে চলে যান বাউসা ইউনিয়নের টাইরীপাড়া বাউসা গ্রামে। সেখানে আলাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তির কাছে মাসে ভাড়া হিসেবে ছোট একটি কুঁড়েঘরে বসবাস করতেন। আলাউদ্দিন প্রয়োজনের তাগিদে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।
ফলে নিরুপায় হয়ে পড়েন আছিয়া বেগম। কোনো উপায় না পেয়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৭ দিন আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে তিনটি ছাগল ও কয়েকটি মুরগি নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছিলেন। এ অবস্থা দেখে পাঁচপাড়া গ্রামের সেকেন্দার আলীর বাড়িতে আশ্রয় দেন। সেখানে তারা থাকতে না পেরে ৯ জানুয়ারি থেকে পুনরায় আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
এ বিষয়ে আছিয়া বেগম বলেন, নিরুপায় হয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্বামী, প্রতিবন্ধী ছেলে ও প্রতিবন্ধী নাতিকে নিয়ে ১৫ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। খাওয়ার কিছুই নেই। ক্ষুধা লেগেছে তাই বাজার থেকে এক কেজি চাল ও এক কেজি বেগুন নিয়ে এসেছি। এগুলো এখন রান্না করছি। কোথায় যাব, কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না।
তবে আছিয়া বেগম দাবি করেন, সরকার ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিচ্ছেন। সরকারিভাবে গুচ্ছগ্রাম বা একটু থাকার ব্যবস্থা করে দিলে প্রতিবন্ধী স্বামী, সন্তান ও নাতিকে নিয়ে বাকি জীবনে কিছুটা হলেও ভালো থাকতে পারতাম।
এদিকে আছিয়া বেগমের মেয়ে ঝরনা বেগমের বিয়ে হয়ে স্বামীর সঙ্গে সংসার করছেন। ছেলে ইকবাল হোসেন স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে অন্যের জমিতে বসবাস করছেন। আরিফ হোসেন নামে আরেক ছেলেকে ২০১৮ সালে কে বা কারা হত্যা করে মাঠের মধ্যে লাশ ফেলে রেখেছিল। আতাউল হোসেন নামের আরেক সন্তান কয়েক বছর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তার সন্ধান আজও পাননি তারা। এ কথাগুলো বলতে বলতে আছিয়া বেগম হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।
এ বিষয়ে আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, এর আগেও এখানে এসে কিছু দিন ছিল। আবারও হঠাৎ দেখছি ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে আছিয়া বেগম তার পরিবার নিয়ে বসে আছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব। রা/অ