শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৩৭ pm
আবুল কাশেম বাবু (নিজস্ব প্রতিবেদক) তানোর :
ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে কীটনাশকমুক্ত ধান চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউপির ধানুরা গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম (বাবু) ও মিরাপুর গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির। তারা ৩ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে ভার্মি কম্পোস্ট ও নিম সার ব্যবহার করে ধান চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন তিনি।
পূর্ব পুরুষের এনালগ যুগের কীটনাশক ব্যবহার রোধ করে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষকদের ডিজিটাল যুগে ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন।
কৃষক রেজাউল ইসলাম বাবু বলেন, আমি এ বছর ১ বিঘা জমিতে কীটনাশক ছাড়ায় আমন ধান চাষ করেছি এবং ভালো ফলনের আশা করছি। চলতি রবি মৌসুমে সরিষা আবাদ করবো সেটাও হবে বিষ মুক্ত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও তানোর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আকবর হোসেন বলেন, প্রতি মৌসুমে কৃষকরা মাজরা পোকা, পাতামোড়ানো পোকা বাদামী পোকা, বাদামি গাছফড়িং ও গান্ধি পোকা দমনের জন্য গড়ে তিন থেকে চারবার ধানের জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। কীটনাশক প্রয়োগে একদিকে যেমন মাটি, পানি ও বায়ু বিষাক্ত হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন খরচ ও বেড়েযাচ্ছে।
এতে করে কৃষকরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন ও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কীটনাশক দীর্ঘমেয়াদী মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
কীটনাশক প্রয়োগ না করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে উপপরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি রাজশাহী কৃষিবিদ মো. মোজদার হোসেন বলেন, রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো এবং কীটনাশক মুক্ত চাষাবাদ করার জন্য উপজেলা পর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে জোরালো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার এবং কীটনাশক এর ব্যবহার কমিয়ে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে অল্প খরচেই চাষাবাদ করা সম্ভব। জৈবপদ্ধতিতে চাষাবাদে ফসলের ক্ষেতে বন্ধুপোকার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। যেগুলো পরবর্তীতে ক্ষতিকর পোকা মাকড়ের ডিম ও লার্ভা খেয়ে দমন করবে। ফলে কীট নাশকের ব্যবহার ৫০ থেকে ১০০%পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। পাশাপাশি বিঘা প্রতি ধান উৎপাদন খরচ এক হাজার থেকে ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় হবে। কীটনাশকের ব্যবহার কমলে কৃষক ও ভোক্তা দীর্ঘমেয়াদী বিষ ক্রিয়া থেকেও বাঁচবে।
এই বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আকবর হোসেন বলেন, ধানের জমিতে ২৬৬ প্রজাতির ক্ষতিকর পোকা ও ৩৪৬ প্রজাতির উপকারী পোকা রয়েছে। ধানের চারারোপনের পরপরই কীটনাশক প্রয়োগ করলে উপকারী ও ক্ষতিকর উভয় পোকাই মারা যায়।পরবর্তীতে ক্ষতিকর পোকা দমন করা কষ্টকর হয়, তাই চারা রোপণের পর থেকে ফুলআসা পর্যন্ত জমিতে ডালপালা পুথে পোকা খেকো পাখি বসার ব্যবস্থা (পার্চিং) করে দিলে মাজরা সহ অন্যান্য ক্ষতিকর পোকা দমন করা সহজ হয়।
তানোর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, চারা রোপনের পর মাজরা পোকা কিছু গাছের কান্ড কেটে দিলেও ফলনের কোন ক্ষতি হয়না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পরবর্তীতে যে কুশিগুলো জন্মে সেগুলো থেকে ক্ষতিগ্রস্থ কুশি পূরণ হয়ে যায়। কিন্তু কৃষকরা ১/২টি পোকা দেখলেই কীটনাশক প্রয়োগ করা শুরু করেন। এর ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন বাড়ে তেমন চাষাবাদ খরচও বৃদ্ধি পায়।
বিষমুক্ত ধানচাষের এ প্রযুক্তির ব্যাপারে তানোর উপ সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ আকবর হোসেন বলেন, মাজরাসহ অন্যান্য ক্ষতিকর পোকা দমনে নিম পাতা, নিমের ছাল, নিম তেল, মেহগনি ফলের বীজ, নিম শ্যাম্পু ব্যবহার করে সহজেই ফসলের ক্ষতিকর পোকা দমন করা যায়। পর্যায়ক্রমে এ পদ্ধতি সম্পর্কে তানোর উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউপি কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।
তিনি আরও জানান, বিষমুক্ত ধান চাষের এ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে একদিকে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হবেন, তেমনি কৃষকদের স্বাস্থ্য ঝুকিও কমে যাবে। এছাড়াও দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণের পাশা পাশি নিরাপদ খাবার উৎপাদনে এগিয়ে যাবে। রা/অ