রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৪৩ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর রাজনীতিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। সুযোগ পেলেই মিনুকে তুলোধুনো করেন বাদশা। মিনুও ছাড়েন না। কয়েকমাস আগেই একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টক-শোতে বাদশার অতীত নিয়ে নানা কথা বলেন মিনু।
সেই বাদশা-মিনু একসঙ্গে চা-চক্রে বসেছিলেন। গেল শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর তিনতারকা ‘হোটেল এক্স’-এর প্যানোরোমা ক্যাফেতে দুজনে কফি খেয়েছেন বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ক্যাফেতে বসে দুজনে সময় কাটিয়েছেন প্রায় ২০ মিনিট। তবে কী নিয়ে দুজনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।আর এ নিয়ে ১৪ দলের শরীক আওয়ামী লীগের রাজশাহী নেতাদের মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক ক্ষোভ। বাদশাকে এমনিতেই এবার পাশ কাটিয়ে চলছে আওয়ামী লীগ।
এর মধ্যে মিনুর সঙ্গে বৈঠকের খবরে যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা হয়েছে। সোমবার বাদশা আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে রাজশাহী মহানগর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়ায় ওই বৈঠক শেষ হয়েছে তার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে। ফলে এবার বাদশা নৌকা পেলেও তার ভরাডুবি হবে আওয়ামী লীগ সর্মথন না করায়-এমনটিই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ফজলে হোসেন বাদশা হোটেল এক্সের প্যানোরোমা ক্যাফেতে মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে শুধু ‘দেখা হওয়ার’ কথা স্বীকার করেছেন। তবে মিজানুর রহমান মিনু তা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। মিনু বলেছেন, মাস দুয়েক আগে বাদশার সঙ্গে বিমানের ভেতর দেখা হয়েছিল তাঁর। এর বাইরে কোথাও কোন সাক্ষাৎ হয়নি তাঁদের।
তবে ভোটের মাঝে হোটেল এক্সে দুজনের বসা নিয়ে শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। দুদিন পর সোমবার বিষয়টি জানতে পেরেছে বিভিন্ন সংস্থাও। সোমবার সকালে হোটেল এক্সে গিয়ে খবরের সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে একটি সংস্থা। সেই সূত্র বলছে, দুই দলের দুই নেতা এক টেবিলেই বসেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে হোটেলটির কোন কর্মীকে কারও সঙ্গে কথা বলাই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
তবে হোটেলটির অপারেশন ম্যানেজার ফখরুল আলম শোভন কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার আগে আগে ফজলে হোসেন বাদশা স্যার কিছুটা আগে এসেছিলেন। সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু এসেছিলেন পরে। তারা কফি খেয়েছেন। এরপর চলে গিয়েছেন। কী নিয়ে তাদের আলাপ হয়েছে তা বলতে পারব না।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘কাকতালীয়ভাবে ওইদিন হোটেল এক্স-এ বিএনপি নেতা মিনুর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। এটি পূর্ব কোনো সূচি ছিল না। নিছক সাক্ষাৎ হওয়ার ঘটনা মাত্র। সেখানে সৌজন্য বিনিময় হয়। এ সময় হোটেলের কর্মচারীরা তাদের কফি পরিবেশন করেন। এর বেশি কিছু নয়। এটা নিয়ে একটা বিশেষ মহলে জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে বলে শুনেছি। তাতে কোনো লাভ হবে না।’
মিজানুর রহমান মিনু দেখা হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘বাদশা ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক দিন দেখা হয়নি। মাস দুয়েক আগে শুধু একবার প্লেনের মধ্যে দেখা হয়েছিল। এছাড়া আর দেখা হয়নি। শুধু পেপার-পত্রিকায় বাদশা ভাইকে দেখি। তিনি বলেন, মানুষের সঙ্গে মানুষের দেখা হতেই পারে। তা নিয়ে কি হয়েছে?
গত তিনটি সংসদ নির্বাচনের মতো আসন্ন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও রাজশাহী-২ আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন ফজলে হোসেন বাদশা। কিন্তু এবার নৌকা পেলেও তাঁর স্বস্তি নেই। এখানে কাঁচি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা।
এ আসনে জোটের শরিক জাসদেরও মশাল প্রতীকের আলাদা প্রার্থী রয়েছে। নগর আওয়ামী লীগ রীতিমতো সভা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশাকে সমর্থন দিয়েছেন। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতা ফজলে হোসেন বাদশা। এই নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও তাদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। রা/অ