শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৩৪ pm
ফুডআপ্পির মাসে ১০ লাখ টাকা ইনকাম, জায়েদ খানের হাতঘড়ির দাম ২৬ লাখ টাকা, টিকটকার অপু ভাই নামের একজনকে ভাড়া করে দুবাই নিয়ে বহর সমেত গাড়ির শোডাউন করে শপিংমল উদ্বোধন করতে নিয়ে যাওয়া, হিরো আলমের আর্ধেক এমপি হওয়া, নোবেল-পরীমনির সংবাদে মিডিয়ার দেশ কাঁপিয়ে দেয়া-এসব নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নাই! দুশ্চিন্তা হয়, এরাই দেশের তরুণ-তরুণীদের কাছে আইডল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে! তাদের ভিউ বেশি! সস্তা সুড়সুড়ি দেয়া কৌতুকে সমাজ সয়লাব!
দিনরাত এক করে পড়া ডাক্তারদের ইন্টার্নশীপে ২৫ হাজার টাকা সম্মানির জন্য রাস্তায় আন্দোলন করতে হয়, বুয়েট-কুয়েট-রুয়েট থেকে পাশ করা মেধাবীদের জন্য দেশে চাকুরি সুযোগ সীমিত! অর্ধলাখ টাকায় প্রবেশ করা যায় দেশে এমন পেশার সংকট! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত বেকারদের বছরের পর বছর পরিবার, সমাজ থেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য সহ্য করতে হয় অথচ টিকটকার, কাপল ব্লগাররা দেশ কাঁপিয়ে দিচ্ছে! মিডিয়া তাদের বিজ্ঞাপনের দায়িত্ব নিয়েছে! দু’পক্ষই লাভবান হচ্ছে! সমাজ তাদের আয়কে বৈধতা দিবে, নাচানাচি দেখবে কিন্তু কাজকে স্বীকৃতি দেবে না! এ এক জটিল ফ্যালাসি! ফুডআপ্পিদের ফাঁদা গল্পের চেয়েও জটিল!
মিডিয়াও বুঝে গেছে, ভালো কোন সংবাদে তাদের টিআরপি বাড়ছে না!একটু অশ্লীল, কিছুটা সাসপেন্স, আধেকটা গুজব পাবলি খায় বেশি! স্ক্যান্ডাল কিংবা ভাইরাল তাদের ব্যবসাকে তুঙ্গে তুলে দিচ্ছে! সমাজের আইকন হিসেবে এমন সব কুলাঙ্গারদের প্রতিষ্ঠা করিয়ে দেয়া হচ্ছে যা আবর্জনা, পয়জনের স্তুপ! শালীনতা-সভ্যতা ধ্বংসের জন্য যারা অগ্রগামী ভূমিকায় তাদেরকে সম্মূখ সারিতে রাখা হচ্ছে! রসিয়ে রসিয় গল্প বানানো হচ্ছে!
এখানে চোরা সিদ্দিককে ব্রান্ডিং করা হয়। তাকে দিয়ে সভা-সমিতির ফিতা কাটানো হয়! প্রধান অতিথি বানানো হয়! সবাই সমানভাবে রাজনীতির মহানায়ক, সৎ, যোগ্য, নির্ভীক, নীতিবান, দক্ষ, যোগ্য, সমাজসংস্কারক, সমাজসেবক, ফুলপাতা-এমন তাবৎ উপাধি ব্যবহার করছে! স্লোগানে স্লোগানে মানুষকে খেপিয়ে তুলছে! ঘুষ-দুর্নীতি, লাম্পট্য-পরকীয়া ধরা পড়লে দন্ত মোবারক বের করে বলে, ‘আমার ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করে দেন’ কিংবা ‘তখন আমার আবেগ কাজ করেছে, বিবেক কাজ করেনি’-এর মত জঘণ্য লজ্জাজনক সংলাপ!
নতুন নতুন কোন পদ্ধতি জাতির পতন রোধ করতে পারবে না যতক্ষণে সামগ্রিক অবক্ষয় দূর না হবে। রাষ্ট্র উদ্যোগী না হয়ে অশ্লীল শর্ট-রিলসের দৌরাত্ম্যের লাগাম টানবে-তবেই স্বস্তি! পারিবারিক মূল্যবোধ শক্ত না হলে, মন্দ সঙ্গ নিরোধ না হলে এই প্রজন্মের খেসারত সমগ্র জাতিকে দিতে হবে! আমরা বোধহয় দিতে শুরু করেছি! কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান সর্বহারাদের ধ্বংসযজ্ঞের চেয়েও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
প্রজন্মের মধ্যে দুষ্টামির চেয়ে বেয়াদবি বেশি! কথায় সত্যের চেয়ে মিথ্যা বেশি! আচরণে সততার চেয়ে অসততা দেখি। সম্মান প্রদর্শন, বিনীতভাব দেখানো-এসবের চরম অনুপস্থিতি লক্ষনীয়! যে প্রজন্মের আদর্শ পাড়ার বড়ভাই, ফুডআপ্পিদের মত তালগোল পাকানো সত্যমিথ্যার কথকদের যারা অনুসারী, অপু ভাইদের মত বিকৃতি যাদের কোমল মস্তিষ্কে জায়গা পেয়েছে সেই তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শঙ্কা হয়! প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচারের চেয়ে ভাইরাল গার্বেজে এরা আসক্ত হয়ে পড়েছে! সন্তানরা এখন অনেকটাই অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে! সন্ধ্যায় ঘরে ফেরে এমন সংখ্যা আশঙ্কাজনক!
প্রজন্মের আদর্শ বদলাতে না পারলে, মিডিয়ার ব্যবসায়িক নিচুতা না পাল্টালে, অশ্লীলতার পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ না হলে সমাজ ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হবে। বিয়া ছাড়াও কোলে তুলে ছবি প্রকাশকারীদের দমিয়ে দিতে না পারলে, আড়ালে ঠেলা না হলে সমাজ রুগ্নতায় ভূগবে। সবার আগে নেশার লাগাম টানতে হবে! যা শুরু হয়েছে এবং চারিদিকে যা প্রকাশ পাচ্ছে তাতে ভয় হয়। সত্যি সত্যি বুকে কাঁপন ধরে। আমাদের সামনে আশার দিন অপেক্ষা করছেতো? নাকি শ্রেষ্ঠত্ব হারাবো? অনেকটা বোধহয় হারিয়ে ফেলেছি! কলাম লেখক, [email protected]