বৃহস্পতিবর, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:৩৭ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাঘায় কোন এক সময় আওয়ামীলীগের রাজনীতির কথা মুখে আনলে চলে আসতো দুই নেতার অভ্যান্তরীন ও রাজনৈতিক দ্বদ্ব ফ্যাসাদের কথা । এরা ১৯৯৮ সাল থেকে পৃথক-পৃথক ব্যানারে রাজনৈতিক কর্মসুচী পালন করে আসছে। এদের একজন এড: লায়েব উদ্দিন লাভুল, অপরজন আক্কাছ আলী। অবশেষে তাদেরকে এক কাতারে মিলিত করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এর ফলে মেয়র হয়েছেন আক্কাছ আলী ,অপর দিকে ২০১৯ সালের ১০ মার্চ স্থানীয় সাংসদের সমর্থন ও আর্শিবাদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এড: লায়েব উদ্দিন লাভুল । বর্তমানে এরা দু’জনই নৌকার বিপক্ষে।
দুই উপজেলা আওয়ামী নেতারা জানান, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ কে সামনে রেখে আলহাজ শাহরিয়ারের দুর্গে আ’লীগের দলীয় মনোনন ক্রয় করেন তিন নেতা। এরা হলেন, বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড: লায়েব উদ্দিন লাভলু ,বাঘা পৌর মেয়র আক্কাস আলী ও চারঘাট উপজেলা থেকে সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক রায়হান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দৃশ্যমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও দুই উপজেলা আ’লীগের সমর্থনে চতুর্থ বারের ন্যায় আবারও দলীয় মনোনন নৌকা পেয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
এর ফলে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত চারঘাট উপজেলার বাসিন্দা রায়হানুল হক রায়হান সতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন ও জমা দিয়েছেন। অত:পর তার পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারনায় নেমেছেন আক্কাছ আলী। অপরজন বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রাজশাহী জেলা আ’লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এড: লায়েব উদ্দিন লাভুল নিরব ভুমিকা পালন করলেও তার সমর্থীত কতিপয় কর্মীকে এ প্রচারনায় দেখা গেছে।
এদিকে নৌকার প্রার্থী ও পরপর তিন বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম মনোনয়ন জমা দেয়ার জন্য ৩০ নভেম্বর লায়েব উদ্দিনকে ডাকার পরেও তিনি আসেননি বলে উপজেলা আ’লীগের বর্ধিত সভায় দু:খ প্রকাশ করেছেন শাহরিয়োর আলম। এ ঘটনায় ক্ষোভ ফেটে পড়েন দলীয় নেতা-কর্মী-সহ তৃণমুল আওয়ামীলীগ।
দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে বাঘা উপজেলা আ’লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই কাউন্সিলে প্রয়াত আব্দুস সামাদ সকার সভাপতি নির্বাচিত হন। একই সাথে সাধারণ সম্পাদক হন আক্কাছ আলী। সেইবার সামান্য ভোটে পরাজিত হন বাঘা শাহদৌল্লা ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক মকবুল হোসেন। এতে মকবুল হোসেনের পক্ষে থাকা তৎকালিন রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি লায়েব উদ্দিন লাভলুর সাথে আক্কাছ আলীর দুরুত্ব সৃষ্টি হয়।
এর আগে ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহী ৬ চারঘাট-বাঘায় নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করেন বাঘার কৃতিসন্তান (অবসর প্রাপ্ত)ব্রিগেডিয়ার আনিছুর রহমান । তাঁর পক্ষে ভোট করেন লায়েব উদ্দিন লাভলু । অপর দিকে নৌকা প্রতিক নিয়ে বার-বার পরাজিত হয়ে দলবদলের পর বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী ডাক্তার আলাউদ্দিনের পক্ষে ভোট করেন আক্কাছ আলী। এ ঘটনায় দুই নেতার মধ্যে দুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। এর কিছুদিন পর ডা: আলাউদ্দিন মৃত্যুবরণ করলে ২০০১ সালে এ আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আ’লীগের বহিরাগত দলীয় প্রার্থী নুরুল ইসলাম ঠান্ডুর পক্ষ নেন আক্কাস আলী। প্রক্ষান্তরে স্থানীয় স্বতন্ত্র প্রাথী রায়হানুল হক রায়হানের (প্রজাপতি)মার্কার পক্ষ নেন লায়েব উদ্দিন লাভলু। তাতে জয়যুক্ত হন রায়হানুল হক । এমনি ভাবে চলতে থাকে দুই নেতার মধ্যে দুরুত্ব।
পরবর্তী সময় ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আ’লীগের দলীয় মনোনয় পান রায়হানুল হক রায়হান। তাতে বিদ্রোহী প্রার্থী হন আক্কাস আলী। এর ফলে এখানে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন বর্ষীয়ান নেতা কবির হোসেন। পরবর্তী সময় ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আজকের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শাহরিয়ার আলমের পক্ষে একসাথে ভোট করেন লাভলু-আক্কাছ। এতে নৌকার জয় হয়। কিন্তু ওই ভোটের পর ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এসে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক লভিং-গ্রুপিং আবারও প্রকাশে রুপ নেয়। কারণ ওই নির্বাচনে আ’লীগের দু’জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে নামেন। একজন লায়েব উদ্দিন লাভুল এবং অপরজন প্রয়াত মিজানুর রহমান। এখানে মিজানুর রহমানের পক্ষে ভোট করেন আক্কাছ আলী । ফলে সেইবার বিএনপি থেকে এখানে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বয়েজুল ইসলাম খান।
স্থানীয় ত্যাগী আ’লীগ নেতারা জানান, এই দুই নেতার মধ্যে পরবর্তী খেলা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। সেইবার রাজশাহী জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এড: লায়েব উদ্দিন লাভলু, বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী, পৌর আ’লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস সরকার এবং জেলা আ’লীগের সদস্য আমানুল হাসান দুদু জাতীয় নির্বাচনে জনপ্রিয় নেতা আ’লীগের দলীয় প্রার্থী শাহরিয়ার আলমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সাংসদ রায়হানুল হক রায়হান এর প্রতিক (প্রজাপতির) পক্ষে ভোট করতে নামেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আক্কাছ আলী ওয়াদা ভঙ্গ করে ফের শাহরিয়ার আলমের পক্ষে চলে যান। এতে করে শাহরিয়ার আলম বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। যার সত্যতা স্বীকার করেন আব্দুল কুদ্দুস সরকার ও প্রয়াত আমানুল হাসান দুদু। অত:পর নির্বাচন শেষে আব্দুল কুদ্দুস সরকার ক্ষামা চেয়ে আহরিয়ার আলমের কাছে ফিরে আসেন।
তবে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয় ওই নির্বাচনের পর উপজেলা আ’লীগের কাউন্সিলে। সেখানে শাহরিয়ার আলমের সাথে অভ্যান্তরীন বিষয় নিয়ে দুরুত্ব সৃষ্টি হয় আক্কাস আলীর। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে আক্কাস আলীকে পরাজিত করে আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে সাধারণ সম্পাদক তৈরীতে সহায়তা করেন লাভুল। এরপর ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাঘা পৌর সভার ভোটে আবারও পরাজিত হন আক্কাস আলী। এতে করে জনপ্রিয়তা হারান তিনি।
আক্কাছ আলীর ঘনিষ্ঠজনরা জানান, পৌর নির্বাচনে আক্কাছ আলীকে পরাজিত করে এখানে বিএনপির প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ী হওয়ার পর তাকে পরাজিত করানোর অপবাদ চলে আসে স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল সহ-তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে। তখন থেকে নতুন করে একজোট হতে শুরু করেন আক্কাস-লাভুল।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চান এই দুই নেতা আক্কাস ও লাভু। এরপর তারা মনোনয়ন না পেয়ে নৌকার মাঝি ও দলীয় প্রার্থী শাহরিয়ার আলম এর বিপক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন । সেইবার বিদ্রহী প্রার্থী হন রায়হানুল হক রায়হান। কিন্তু শেষে পর্যন্ত উন্নয়নের ধারবাহিকতা ও তৃণমুল আওয়ামী লীগের ভালোবাসায় আবারও শাহরিয়ার আলমই নির্বাচিত হন।
এদিকে সরেজমিন লক্ষ করা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বাঘার মেয়র আক্কাছ আলী প্রকাশে সতন্ত্র প্রার্থী ও নৌকার বিদ্রোহী রায়হানুল হক রায়হানের পক্ষে পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ থেকে শুরু করে ভোট চাচ্ছেন। অপর দিকে এখন পর্যন্ত নিরব ভুমিকায় রয়েছেন এড: লায়েব উদ্দিন লাভলু। এ বিষয়ে লাভলুর সাথে সোমবার সকালে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাঁর ফোন রিসিভ করেননি।
তবে দলীয় প্রার্থী শাহরিয়ার আলম জানান, নিজেদের স্বার্থে আঘাত হানলে চারঘাট-বাঘার তিন নেতা সব সময় নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেন। এদিক থেকে এবারও নির্বাচনের নীতিমালা ভঙ্গ করে দুই নেতা যথাত্রমে রায়হানুল হক ও আক্কাছ আলী এক সাথে প্রচারনায় নেমেছেন। আমি অপর একজন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও রাজশাহী জেলা আ’লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এড: লায়েব উদ্দিন লাভলুকে মনোনয়ন জমা দেয়ার জন্য ডেকে ছিলাম। তিনি আমাকে বলেছেন , আপনি জমাদেন। এখনো সময় আছে।
এই নির্বাচন প্রসঙ্গে বাঘা উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আমরাফুল ইসলাম বাবুল ,আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তার আলী এবং চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলের চারঘাট উপজেলা আ’লীগের সধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলাম ও চারঘাট পৌন মেয়র একরামুল হক সহ বিভিন্ন ইউনিয়ন আ’লীগের চেয়ারম্যানরা জানান, এসব বিরোধিতা আগেও ছিলো-এখনো আছে। এ নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। কারণ শাহরিয়ার আলম গত তিনটার্ম নিজ অর্থায়ন সহ সরকারি প্রচেষ্টায় দুই উপজেলায় যে সকল উন্নয়ন করেছেন তাতে করে এ অঞ্চলের মানুষ আবার ও তঁকেই বিজয়ী করবেন। রা/অ