রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:০৫ pm
আব্দুস সবুর, তানোর :
বছর না যেতেই প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভাবে কার্পেটিং করা রাস্তা বসেও গেছে এবং ব্যাপক হারে ফেটে গেছে। এমন জেনে যানবাহনের ঝুকি এড়াতে বিভিন্ন স্থানে লাল নিশানা দেয়া হয়েছে। রাজশাহীর তানোর টু চৌবাড়িয়া রাস্তার ধানতৈড় মোড়ে সম্প্রতি এই নিশানা দেন এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার ওয়াসিম।
তবে, উপজেলার মাদারিপুর বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ফাটল দেখা দিয়েছে। কাজ শুরুর সময় একেবারেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঠিকাদার করায় এভাবে দেবে ও ফেটেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এতে করে দ্রুত দেবে যাওয়া রাস্তটি জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের দাবি করলেও লাল নিশানা মেরে দায় সারা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নচেৎ জায়গাটিতে যানবাহন যাওয়া মাত্রই ভয়াবহ গর্তের সৃষ্টি হয়ে দূর্ঘটনা ঘটবে বলে মনে করছেন পথচারী ও বিভিন্ন যানবাহন চালকরা।
জানা গেছে, গত বছরের শেষের দিকে তানোর উপজেলা পরিষদ থেকে চৌবাড়িয়া পর্যন্ত ১০ দশমিক ১৪ কিলোমিটার রাস্তাটি নতুন ভাবে কার্পেটিং করা হয়। যদিও চাপড় থেকে চৌবাড়িয়া পর্যন্ত এজিং ডাবলু, বিএম ও প্রাইম বোর্ড করে কার্পেটিং করা হয়। কিন্তু উপজেলা পরিষদ থেকে চাপড় পর্যন্ত হ্যারো ট্যাক্টর দিয়ে পুরাতন রাস্তা উল্টিয়ে কয়েকদিন রাখার পরে পিচ দিয়ে কার্পেটিং করা হয়। যার কারনেই অল্প সময়ের মধ্যে রাস্তার অবস্থা বেগতিক হয়ে পড়েছে। মুলত নতুন ভাবে না করার জন্যই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লোকাল গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট (আরসিআইপি)। অর্থায়নে এডিবি এন্ড গোভোর্মেন অফ বাংলাদেশ (জিওবি)। রোর্ড আইডি ১৮১৯৪২০০২। কাজের ওয়ারকাডার দেয়া হয় ২০২০ সালের ৩০ আগস্টে। ঠিকাদারের নাম দেয়া আছে মইনদ্দিন বাসী লিমিটেড। মানেজিং ডিরেক্টর মইনদ্দিন ( বাসী)। ঠিকানা দেয়া আছে ৭ এইচএমএম রোড, ডোরটানা, যশোর ৭৪০০ যশোর। কাজের বরাদ্দ ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪৬ টাকা। কার্যাদেশ মইনদ্দিন পেলেও রাস্তার কাজ করেন রাজশাহী শহরের ঠিকাদার ওয়াসিম।
স্থানীয় ঠিকাদারেরা জানান, কাজটি মইনদ্দিন পেলেও অগ্রিম লাভ দিয়ে ওয়াসিম কিনে করেছেন। যে কোন কাজ কিনে করলে প্রচুর অনিয়ম করতে হয়। তাছাড়া কোন ভাবেই কাজ করতে পারবে না। রাস্তার দু’ধারে ঘাস লাগাতে হবে। কিন্তু ওয়াসিম কোন ধরনের ঘাষ লাগায়নি। মাঝে মাঝে উর্ধ্বতন কর্মকতারা রাস্তা পরিদর্শনে এলে যে সব জায়গা ভালো আছে সেগুলো দেখিয়ে এবং ভালো মানের আপ্যায়ন করে বিদায় দিয়ে থাকেন ঠিকাদার ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। কার্যাদেশ ২০২০ সালে পেলেও করোনার দোহায়ে অনেক দেরিতে কাজ করেন। যখন কাজ শুরু করেন তখন কাজের মালামালের দাম অনেক বাড়তি। এমন খোড়া অজুহাতে প্রতিটি রাস্তার কাজ অনিয়ম করে করা হয়েছে।
ধানতৈড় মোড়ের ব্যবসায়ীরা জানান, পুরাতন রাস্তা উল্টিয়ে রোলার মেরে কার্পেটিং করা হয়েছে। কোন ধরনের খোয়া বালু কিছুই দেয়া হয়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, ধানতৈড় মোড়ের জসিমের বালাইনাশকের দোকানের সামনে ও রাস্তার পশ্চিমে ৪/৫ হাত জায়গা দেবে গেছে এবং ব্যাপকহারে ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে। পশ্চিম দিকের দেবে যাওয়া জায়গাই উঁচু হয়ে আছে। সে জায়গায় মেরামত না করে দায় সারা বিপদ জনক চিহ্ন দেয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, রাস্তা নির্মানের শুরুতে ব্যাপক অনিয়ম করে। কোন ধরনের নতুন মালামাল দেয়া হয়নি। ওই জায়গা খনন করে বালু খোয়া দেয়ার কথা আমরা বলেছিলাম। কিন্তু তারা সাব জানিয়ে দিয়েছিল রাস্তা হচ্ছে শুকরিয়া আদায় করেন। জায়গাটি থেকে পিচ পাথর খোয়া উত্তোলন করে নতুন ভাবে করা দরকার ছিল। কারন ভারি যানবাহন উঠা মাত্রই ভেঙ্গে একাকার হয়ে পড়বে।
কাজ করা ঠিকাদার ওয়াসিম বলেন, রাস্তার কাজ শেষ করতে পেরেছি এটাই অনেক কিছু। রাস্তা নির্মানের পর সারা জীবন টিকসই হবে কি। ওই জায়গায় লাল নিশানা দেয়া হয়েছে বরাদ্দ পেলে নতুন ভাবে করা হবে বলে এড়িয়ে যান তিনি।
এব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, দেবে যাওয়া জায়গায় লাল নিশানা দেয়া হয়েছে। যাতে করে সাবধানতা অবলম্বন করতে পারেন পথচারী ও বিভিন্ন যানবাহন চালকরা। তবে, অল্প সময়ের মধ্যে জায়গাটি সংস্কার করা হবে জানান এই প্রকৌশলী সাইদুর। রা/অ