শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৪৭ am
ডেস্ক রির্পোট :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি (বুধবার) অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) ঘোষণা করা হতে পারে নির্বাচনের এ তফশিল। এ লক্ষ্যে ওইদিন সন্ধ্যায় টেলিভিশন ও বেতারে জাতির উদ্দেশ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের ভাষণ দিতে পারেন। নেয়া হচ্ছে প্রস্তুতি। এ তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে নির্বাচন কমিশন। রাষ্ট্রপ্রধানের দিক থেকে নতুন কোনো নির্দেশনা না থাকলে নিজেদের ঠিক করা সূচি অনুযায়ী অগ্রসর হবে ইসি। বঙ্গভবনে বৈঠকের পর কমিশন সভা করে আনুষ্ঠানিকভাবে তফশিল অনুমোদন করা হবে।
বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যাপারে অনড় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে সরকারবিরোধী বিএনপি ও তার জোট সঙ্গীরা। এর মধ্যেই নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। এখন শুধু তফশিল ঘোষণার অপেক্ষা।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তফশিল ঘোষণার আগে কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সাক্ষাতের সূচি রয়েছে। সিইসি ও অন্য কমিশনাররা রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত সব রকম অগ্রগতি অবহিত করবেন।
ইসির একাধিক সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। তখন থেকে ভোটের দিন হিসেবে ৪ জানুয়ারিকে সামনে রেখেই সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আর তফশিল ঘোষণার কথা ছিল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই লক্ষ্যেই অটল ছিল কমিশন। তবে গত অক্টোবর থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটা বদলে যাওয়ায় কমিশনকেও নতুন করে ভাবতে হয়েছে। নানা দিক বিবেচনায় তফশিল ঘোষণা পিছিয়ে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নেওয়া হয়েছে। তবে ভোট গ্রহণের তারিখ এক দিন এগিয়ে আনার পেছনে বিবেচনায় এসেছে ভিন্ন বিষয়। ৪ জানুয়ারি একটি বৃহৎ ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ কারণে ওই দিন ভোট গ্রহণ না করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে কমিশন। সেক্ষেত্রে ভোট পরবর্তী নানা আনুষ্ঠানিকতা ও সম্ভাব্য আইনি প্রক্রিয়া বিবেচনায় সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ কারণে পূর্বনির্ধারিত তারিখের এক দিন আগে ৩ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথা অনুযায়ী ভোট গ্রহণের আগে ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় রেখে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয়। এ ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহার এবং প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারের জন্য যৌক্তিক সময় রাখতে হয়। প্রচারের জন্য সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ, মনোনয়নপত্র জমায় ১০ থেকে ১৫ দিন, বাছাইয়ের জন্য চার দিন, আপিল নিষ্পত্তি করতে চার থেকে সাত দিন এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য সাত দিনের মতো সময় দেওয়া হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনুষ্ঠিত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ প্রথম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। বিএনপি দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জয় পায়।
অন্যদিকে, জাতীয় পার্টি তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। সে হিসেবে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি জয়লাভ করে সরকার গঠন করেছে। এগারোটি সংসদ নির্বাচনে ঘুরেফিরে তিনটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ পাঁচবার, বিএনপি চারবার এবং জাতীয় পার্টি দুবার ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চার দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর অনুষ্ঠিত প্রথম এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান করে সরকার গঠন করে। এ ছাড়াও জাসদ একটি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ একটি এবং পাঁচটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। প্রথম সংসদে ১১ প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ৭ এপ্রিল সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। এ সংসদ দুই বছর ছয় মাস স্থায়ী ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। পরবর্তীতে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত এ সংসদ কার্যকর ছিল।
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। এতে বিএনপি ২০৭টি আসনে জয়লাভ করে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ (মালেক) ৩৯টি, আওয়ামী লীগ (মিজান) দুটি, জাসদ আটটি, মুসলিম লীগ ও ডেমোক্র্যাটিক লীগ ২০টি, ন্যাপ (মোজাফফর) একটি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ দুটি, বাংলাদেশ গণফ্রন্ট দুটি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল একটি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন একটি, জাতীয় একতা পার্টি একটি এবং ১৬টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেন।
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসনে বিজয়ী হয়। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ ৭৬টি জামায়াতে ইসলামী ১০টি, সিপিবি পাঁচটি, ন্যাপ (মোজাফফর) দুটি, ন্যাপ পাঁচটি, বাকশাল তিনটি, জাসদ (রব) চারটি, জাসদ (সিরাজ) তিনটি, মুসলিম লীগ চারটি, ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩২টি আসনে জয়লাভ করেন। বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করে।
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসনে জয়লাভ করে। অন্যদিকে আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত বিরোধী দল ১৯টি, জাসদ (সিরাজ) তিনটি, ফ্রিডম পার্টি দুটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২৫টি আসনে বিজয়ী হন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও সিপিবিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করে।
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। এতে বিএনপি ১৪০টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ ৮৮টি, জাতীয় পার্টি ৩৫টি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ১৮টি, সিপিবি পাঁচটি, বাকশাল পাঁচটি, জাসদ (সিরাজ) একটি, ইসলামী ঐক্যজোট একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি, এনডিপি একটি, গণতন্ত্রী পার্টি একটি, ন্যাপ (মোজাফফর) একটি এবং অন্যান্য দল তিনটি আসনে জয়লাভ করে।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনে বিএনপি ২৭৮টি আসনে, ফ্রিডম পার্টি একটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০টি আসনে জয়লাভ করে। ভোটকেন্দ্রে গোলযোগের কারণে বাকি ১১টি আসনের ফল স্থগিত থাকে। নির্বাচনে ৪৯টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। ফলে তিন মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন দিতে হয়।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১২ জুন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এ ছাড়াও নির্বাচনে বিএনপি ১১৬টি, জাতীয় পার্টি ৩২টি, জামায়াতে ইসলামী তিনটি, ইসলামী ঐক্যজোট একটি, জাসদ একটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একটি আসনে বিজয়ী হন।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর। নির্বাচেন বিএনপি ১৯৩টি আসনে জয়লাভ করে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ ৬২টি, জাতীয় পার্টি ১৪টি, জামায়াতে ইসলামী ১৭টি, বিজেপি চারটি, জেপি (মঞ্জু) একটি, ইসলামী ঐক্যজোট দুটি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ একটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ছয়টি আসনে বিজয়ী হন।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসনে জয়লাভ করে। এই নির্বাচনে বিএনপি ৩০টি, জাতীয় পার্টি ২৭টি, জাসদ তিনটি, জামায়াতে ইসলামী দুটি, ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, বিজেপি একটি, এলডিপি একটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চারটি আসনে জয়লাভ করেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। এই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বাকি ১৪৭টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩৪টি, জাতীয় পার্টি ৩৪টি, ওয়াকার্স পার্টি ছয়টি, জাসদ পাঁচটি, জাতীয় পার্টি (জেপি) দুটি, তরিকত ফেডারেশন দুটি, বিএনএফ একটি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৬টি আসনে জয়লাভ করেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। একটি আসনের প্রার্থী মারা যাওয়ায় ২৯৯টি আসনে নির্বাচন হয়। একটি আসনের ফল স্থগিত থাকায় বাকি ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে এককভাবে ২৫৯টি আসনে জয়লাভ করে। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টি লাঙল প্রতীকে ২০টি, বিএনপি ধানের শীষ প্রতীকে পাঁচটি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) দুটি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ দুটি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি, তরিকত ফেডারেশন একটি ও গণফোরাম দুটি আসনে জয়লাভ করে। অন্যদিকে, তিনটি আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সূত্র : বাংলা টাইমস