রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:২৩ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
রাজশাহীর তানোরে এমপি ফারুক চৌধুরীর সভাকে কেন্দ্র করে ইউপির উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক স্কুলের ক্লাস বন্ধ করে দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার ৬ নভেম্বর সকাল থেকে উপজেলার তালন্দ ইউনিয়ন আ.লীগের বর্ধিত সভার নামে হয়েছে উপকার ভোগী ও শিক্ষক-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে আ.লীগের বর্ধিত সভা।
ওই ইউপির সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদেরর লালপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সভার ঘটনা ঘটে। এতে করে জাতীয় নির্বাচনের আগেও বিতর্কের জন্ম দিতেই আছেন এমপি ফারুক চৌধুরী। ফলে শিক্ষক শিক্ষার্থীরাই যেন সভার মুল কর্মী হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার তালন্দ ইউনিয়ন (ইউপির) লালপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঝখানে রয়েছে মাঠ। মাঠের দক্ষিণে সভার মঞ্চ। মাঠের পশ্চিম ও পশ্চিম উত্তরে লালপুর উচ্চ বিদ্যালয়। পূর্বে প্রাথমিক বিদ্যালয়। মুল রাস্তার উত্তরে হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং মঞ্চ থেকে কয়েক হাত দূরে মডেল কলেজ।
লালপুর স্কুলের প্রতিটি ক্লাসে বই ব্যাগ রেখে শিক্ষার্থীরা সভায় বসে আছে। সপ্তম, ষষ্ঠ, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর বেশকিছু শিক্ষার্থীরা হঠাৎ সভা থেকে নিজ ক্লাসে আসেন। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় ক্লাস হয়েছে কি না তারা বলেন, মাত্র একটি ক্লাস হয়েছে, আর কোন ক্লাস হয়নি, সবাইকে প্রধান শিক্ষক শরিফুল ও প্রাইভেট শিক্ষক সাফিউল স্যার সভায় যেতে বলেছেন। এজন্য আমাদের ক্লাস বন্ধ ছিল।
প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরাও একই কথা বলেন। ইউপি এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সভায় দেখা যায়। তারা বলেন, ইউপি এলাকার যতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সবগুলোর শিক্ষকদের আসতে বাধ্য করা হয়েছে। তাহলে কি স্কুল বন্ধ ছিল জানতে চাইলে তারা বলেন, শিক্ষকরা সভায় আসলে ক্লাস কে নিবে বলে তারাও ক্ষোভ প্রকাশ করে।
সভা শেষ হয় বিকেল ৩টার দিকে। সভা শেষে খাবার নিয়ে সবাই চলে যান। কিন্তু হাফিজিয়া মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুদের তখনও খাবার দেয়া হয়নি। পরে অবশ্য দেয়া হয়। কিন্তু অনেকে পাইনি।
জানা গেছে, উপজেলার তালন্দ ইউনিয়ন আ.লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইউপি আ.লীগ সভাপতি আব্দুল করিম মেম্বারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হাসান মেম্বারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এমপি ফারুক চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না, সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার, কৃষক লীগ সভাপতি প্রধান শিক্ষক রাম কমল সাহা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সোনিয়া সরদার, ভাইস চেয়ারম্যান কৃষকলীগ সম্পাদক আবু বাক্কার সিদ্দিক, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের ইসলাম, ইউপি যুবলীগের সভাপতি মুকলেসুর রহমান সম্পাদক মইফুল ইসলাম প্রমুখ।
একাধিক শিক্ষকরা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু ইউপি সভাপতি আব্দুল করিম ও সম্পাদক আবুল হাসানের কঠোর নির্দেশ সভায় যেতে হবে।
দলের এক সিনিয়র নেতা বলেন, বর্ধিত সভায় দলীয় নেতাকর্মীরা থাকবে। এখানে শিক্ষক কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও উপকার ভোগীরা কেন থাকবে। এসব নেতৃত্বের দূর্বলতা। কারন যাদের হাতে নেতৃত্ব তাদের ডাকে কর্মীরা আসবে না। এসব করে এমপিকে বিতর্কিত করা ছাড়া কিছুই নয়।
উপজেলার লালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল বলেন সকালে ক্লাস হয়েছে। এমপি আসার পর আর ক্লাস হয়নি। লালপুর স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, সকালে ক্লাস হয়েছে এমপি আসার পর আর হয়নি। মাত্র একটি ক্লাস হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন এসব নিয়ে কিছু বলার নেই।
চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু বলেন, এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। সভাপতি ও সম্পাদক বলতে পারবেন। সভাপতি করিম ও সম্পাদক হাসানের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, স্কুল মাঠে সভা এজন্য ক্লাস বন্ধ। সরকারি দলের সভা এসব একটু হবেই বলে এড়িয়ে যান তারা।
তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমানের মোবাইল বিজি পেলেও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মনিরা বেগম বলেন, স্কুল বা ক্লাস বন্ধ করে সভা করা কোন সুযোগ নেই। আমি এবিষয়ে জানি না খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একই দিন বিকেলে সরনজাই স্কুল মাঠে ইউপি আ.লীগ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভাকে কেন্দ্র করে সরনজাই স্কুলের ভিতরে সকাল থেকে চলে রান্নার কাজ এবং সভাস্থলে স্কুল চলাকালীন সময়ে চলে ডিজে ব্যান্ড পার্টি। রা/অ