শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:১১ am
এম এম মামুন, নিজস্ব প্রতিবেদক :
আমাদের জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি চাই, জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের রোগ বালাই বৃদ্ধি পেয়েছে, আমাদের বিনোদনের কোন ব্যবস্থা নেই, আমরা আমাদের পছন্দমতো খাবার খেতে পারিনা, আমরা পানির অধিকার চাই, বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রবীণদের জন্য জলবায়ু ফান্ড থেকে আলাদা বরাদ্দ চাই। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু প্রবীণবান্ধব কোন তথ্য প্রযুক্তি নেই। আমাদের মতো করে সকল উন্নয়ন হোক। উন্নয়ন হোক প্রবীণবান্ধব। খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রবীণরা উক্ত দাবিগুলো তুলে ধরেন। একই সাথে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
রোববার (১ অক্টোবর) সকাল ১০ টার রাজশাহীর পবা উপজেলার দর্শনপড়া ইউনিয়নের বিলনেপাল পাড়া বাজারে খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রবীণরা তাঁদের জন্য সুপেয় পানির অধিকার ও জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে প্রবীণবন্ধনের আয়াজন করেছে। বরেন্দ্র অঞ্চল জনসংগঠন ফোরাম ও উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্টান বারিসক (বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ) এর যৌথ আয়োজনে উক্ত প্রবীণবন্ধনে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রবীণরা অংশগ্রহণ করেন। এতে বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ সংহতি জ্ঞাপন করেন। প্রবীণ মো. আব্দুল খালেক ( ৬৯) এর সভাপতিত্বে প্রবীণরা তাঁদের পানির অধিকার, জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিগুলো তুলে ধরেন। একই সাথে পানি নিয়ে রাজনীতি না করার দাবি করেন। আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উপলক্ষে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রবীণরা তাঁদেও দাবিগুলো তুলে ধরেন।
প্রবীণবন্ধনে বিভিন্ন দাবি সম্বিলিত প্লেকার্ড ফেস্টুন নিয়ে প্রবীণরা জলবায়ু ফান্ড থকে প্রবীণদের জন্য আলাদা বরাদ্দেরর দাবি করেন। প্রবীণ বন্ধনে নারী প্রবীণ মোসা: নুরুন্নেছা বেওয়া (৭১) বলেন- জলবায়ু তহবিলে অনেক বড় বড় ফান্ড আসে, কিন্তু সেগুলো প্রবীণদের জন্য ব্যবহার হয়না বা তাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়না, অথচ জলবায়ু পরিবর্তনে প্রবীণরা,আমরাই বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছি।” জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড থেকে প্রবীণদের জন্য আলাদা বরাদ্দের দাবি করেন তিনি। একইসাথে তিনি বলেন- আমাদের পানি চাই। প্রবীণ মো.ওয়াহাব উদ্দিন(৬৮) বলেন- তীব্র তাপদহ , গরমে আমাদের রোগবালাই বেড়ে গেছে, আবার পানির কষ্ট হয়, আমাদের পানি আনতে যেতে হয় দুরে, আমরা পানির কষ্টে এবং গরমে আরো বেশি সমস্যা পড়ে যাচ্ছি। আমাদের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ দেয়া দরকার। তিনি দাবি করেন সকরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে প্রবীণদের সেবা দেবার জন্য আলাদা সেল থাকা উচিত , যাতে প্রবীণরা আলাদা সুযোগ পায়।
প্রবীণ কৃষক মো: আব্দুল খালেক (৬৯) বলেন- কৃষিতে ভূর্তকী, চিকিৎসা সেবা ভাতা চালু করতে হবে এবং গ্রামে গ্রামে প্রবীণদের বিনোদনের জন্য বিনোদন সেন্টার চালু করা দরকার। তিনি আরো বলেন- বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রবীণবান্ধব নয়, আমরা এসব কঠিন বিষয় থেকে বিনোদন নিতে পারিনা, এসব প্রবীণবান্ধব করতে হবে।
প্রবীণ নারী ফুলজান বেওয়া বলেন ( ৭০) বলেন- বয়স্ক ভাতা এতোই কম যে এটা দিয়ে কিছু হয়না। আমাদের বয়স্ক ভাতার টাকা বাড়াতে হবে। এসব নামকাওয়াস্তে টাকা দিয়ে আমাদের কোন চাহিদাই মিটছে না।” তিনি নারী প্রবীণদের জন্য আলাদা ভাতা এবং সুরক্ষার দাবি করেন।
কৃষক মোঃ রুস্তম আলী (৬৮) বলেন- “সারাটিকাল পরিশ্রম করে দেশের মানুষকে খাওয়ালাম, আমার জন্য দিন শেষে কিছু নেই, কোন ভাতা পাইনা, আমার জন্য পেনশন হয়না, সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন হয়, আমাদের জীবদ্দশায় বয়স্ককালে আমরা কোন পেনশন পাইনা। আমাদেরর পেন ব্যবস্থা চালু করা দরকার। ” তিনি প্রবীণ কৃষকদের জন্য পেন ব্যবস্থা চালুর দাবি করেন।
প্রবীণ কৃষক মিজানুর রহমান (৬৩) বলেন- “আগের মতো আর সেই ঋতুগুলো নেই, অনেক তাপমাত্রা, সারাবছর বেশিরভাগ গরম থাকে, আবার অনাবৃষ্টি, কোথাও পানি নেই, পানির অভাবে ফসল চাষ করা সমস্যা হয়, তীব্র দাপদহের কারনে রোগবালাই বৃদ্ধি পেয়েছে, আমাদের প্রবীণদের সমস্যাও বেড়েছে, কিন্তু আমাদের কে নিয়ে ভাবার লোক কম। আমাদের পানির অধিকার দিতে হবে, আমাদের জন্য জলবায়ু তহবিল করতে হবে।
প্রবীণ বন্ধনে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রবীণরা তাঁদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন ও কার্যকর পদক্ষেপ দেবার দাবি জানান।
তারা বলেন- বরেন্দ্র অঞ্চলের তাপামাত্রা দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে অনাবৃষ্টির কারনে তীব্র দাপদহ এবং বিলঝিলগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। পাতালের পানি দিনে দিনে নীচে নামার কারনে পাতাল থেকেও পানি পাওয়া যাচ্ছেনা। এর ফলে প্রবীণদেও বেশি সমস্যা হচ্ছে। কারন তারা দুর থেকে পানি আনতে পারেনা, আবার বরেন্দ্র অঞ্চলের জলবায়ু আগের তুলনায় বিরুপ হওয়ার কারনে রোগবালাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবীনরা দাড়িয়ে বিভিন্ন ফেস্টুন এবং পোস্টারে মাধ্যমে বরেন্দ্র অঞ্চলের জলবায়ু পরির্তন ও খরার কারনে সমস্যাগুলো সমাধানে দাুিব জানান। একদিকে যেমন জলবায়ু পরির্বতনের জন্য দায়ী ধনীদেশগুলো অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে সরকার যেন তাদের সমস্যাগুলো স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট সমস্যার কারনে বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের যে আর্থিক, স্বাস্থ্য এবং মানসিকসহ নানা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তার জন্য ক্ষতিপুরণের জোর দাবি জানান। একইসাথে বরেন্দ্র অঞ্চলের পানির সমস্যা সমাধানে স্থায়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবার দাবিও করেন।
উক্ত প্রবীণবন্ধনে অংশগ্রহণ , সংহতি জ্ঞাপন ও সঞ্চালনা করেন বারসিক’র গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো: শহিদুল ইসলাম। তিন বলেন- বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রবীণরা দিনে দিনে পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে একই সাথে বৈশি^ জলবায়ুর আঞ্চলিক অভিঘাতের কারনে বরেন্দ্র অঞ্চলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যার কারেন এখানে তীব্রদাপদহ, অনাবৃষ্টি এবং তাপমাত্রা বেড়েইে চলেছে। এর বড় ভুক্তভোগী হচ্ছে প্রবীণরা। অথচ জলবায়ু তহবিল থেকে প্রবীণদের জন্য আলাদা কোন বরাদ্দই রাখা হয়না। তিনি বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রবীণদের মতো করে পানি ব্যবস্থাপনা এবং তাদের দাবিগুলো পূরণে সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্টানের প্রতি আহবান জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বারিসিকের প্রোগ্রাম অফিসার অমৃত কুমার সরকার, ইয়ুথ ফেসিলিটেটর অমিত কুমার সরকার ও সুলতানা খাতুনসহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। রা/অ