রবিবর, ১০ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:২৬ am
এস.এইচ.এম তরিকুল ইসলাম :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের মেয়ে ট্যুরিজম এ- হসপিটালিটি বিভাগের প্রভাষক সানজানা সোবহানকে শিক্ষাছুটি শেষ করে যথাসময়ে যোগদান না করায় শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এ ঘটনায় প্রভাষক সানজানার দাবি, সাবেক উপাচার্যের মেয়ে হওয়ায় আমাকে উদ্দ্যেশ্যমূলকভাবে শোকজ করা হয়েছে।
গত ২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, ৩১ জুলাই ২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত ৫২৪তম সিন্ডিকেট সভার ২৫নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনি কেন শিক্ষাছুটি বাতিলের আদেশ জারি ও প্রাপ্তির পরেও দেশে না ফিরে অনুনমোদিতভাবে কোন অধিকার বলে বিদেশে অবস্থান করছেন, কেন আপনি যথা সময়ে বিভাগে যোগদান করেননি এবং কেন তদন্ত কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয়কে অসহযোগিতা ও অবজ্ঞা করেছেন এবং সিন্ডিকেটের আদেশ অমান্য করে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন তার ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হলো। আর এই পত্রের উত্তর প্রাপ্তির পরে আপনার বিভাগে যোগদান বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ ও চিঠির বিষয়ে প্রভাষক সানজানা সোবহান বলেন, ‘আমি সমস্ত নিয়ম মেনেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট পূর্ণ বেতনে আমার শিক্ষা ছুটিটিও মঞ্জুর করে। আমার ডিগ্রি শেষ হতে যখন সাত মাস বাকি তখন হঠাৎ করেই আমাকে জানানো হয়, আমার ছুটিটি মঞ্জুর হয়নি, অতিসত্বর আমি যেন বিভাগে যোগদান করি। কিন্তু স্কলারশিপের শর্তানুযায়ী, মাঝপথে ডিগ্রিটি ছেড়ে দিলে আমাকে প্রায় ৪২ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো। তাই, পুনরায় ছুটির আবেদন করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৭ মাস পর জানায়, যে তারা আমার পুনরায় করা ছুটির আবেদনটি আমলে নেননি। আমি গত ২৪ মে আমার বিভাগে যোগদানও করেছি। তারপরও দেখছি নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করে আমার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে। আসলে প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে আমি সাবেক উপাচার্যের মেয়ে, সে সময় হয়তো তাদের মধ্যে কোন মনমালিন্য থাকতে পারে, যেটি আমার জানার বিষয়ও না। অথচ, মূলত সে কারণেই আমার বিরুদ্ধে এসব করা হচ্ছে।’
এদিকে, সানজানা সোবহানের শিক্ষাছুটি সংক্রান্ত কিছু চিঠি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য স্কলারশিপ পান ট্যুরিজম এ- হসপিটালিটি বিভাগের এই প্রভাষক সানজানা সোবহান। পরে আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০২২ সালের ৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে দেড় বছরের শিক্ষাছুটি প্রদান করা হয়। একই বছরের ৮ মে, ছুটি চলাকালীন তার বেতন চালু রাখার বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে মর্মে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। এছাড়াও ২০২২ সালের ২৬ জুলাই অতিরিক্ত রেজিস্টার ড. শেখ সাদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ‘০৪-০৭-২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত ৫১৫তম সিন্ডিকেট সভার ৪৫নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবং এই অফিসের ২৩-০৩-২০২২ তারিখের ৬৬২/১(৩)/১ই-৭২৫৮/সাশা নং পরার অনুবৃত্তিক্রমে আদিষ্ট হয়ে জানাচ্ছি যে, আপনাকে ০১-০৩-২০২২ হতে ৩১-০৭-২০২৩ তারিখ পর্যন্ত ০১ (এক) বছর ০৫ (পাঁচ) মাস শিক্ষাছুটি পূর্ণবেতনে মঞ্জুর করা হয়েছে।’
অন্যদিকে, ওই চিঠির ঠিক তিন মাস পর আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, সানজানা সোবহানের ছুটি শিক্ষা পরিষদ সভার ৪৫ নং সিদ্ধান্ত এবং ০৮-০৭-২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত ৫১৫তম সিন্ডিকেট সভার ৪৫নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাকে ০১-০৩-২০২২ হতে ৩১-০৭-২০২৩ তারিখ পর্যন্ত সানজানা সোবহানের ০১ (এক) বছর ০৫ (পাঁচ) মাস শিক্ষাছুটির আবেদন অনুমোদিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সানজানা সোবহানের পুনরায় করা আবেদনটি বিবেচনায় না নিয়ে পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল আছে মর্মে আরেকটি চিঠি দেয় চলতি বছরের ১০ মে। তবে শিক্ষাছুটি শেষ করে প্রভাষক সানজানা সোবহান তার কর্মস্থল ট্যুরিজম এ- হসপিটালিটি বিভাগে ২৫ মে যোগদান করেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘বিভিন্ন অফিসিয়াল প্রক্রিয়া শেষে শিক্ষাছুটির বিষয়টি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদনের পর সিন্ডিকেটে যায়। সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের জামাতার (এটিএম শাহেদ জামান, শিক্ষক, আইবিএ) নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছিল। তদন্ত কমিটি সাবেক উপাচার্যের মেয়ে সানজানা সোবহানের বিষয়েও কিছু অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলেও বিষয়টি আলোচিত হয় এবং সানজানা সোবহানের শিক্ষাছুটি স্থগিত করা হয়।’
সানজানা সোবহানকে দেওয়া ২১ আগস্টের চিঠির প্রেক্ষিতে রেজিস্টার জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ওঁর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, তিনি সেগুলো দিবেন। এরপর, সেগুলো সিন্ডিকেটে যাবে। এরপর সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত জানাবে।’
এদিকে রাবির একটি সূত্র বলছে, ছুটি স্থগিত করা হলেও, সানজানা সোবহানের বেতন চালু রাখা প্রসঙ্গে কোনো চিঠি বা আদেশ দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
তবে ট্যুরিজম বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রভাষক সানজানা সোবহানের বেতন এবং অন্যান্য সুবিধা চলমান আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বারা হেনস্তার স্বীকার হচ্ছেন উল্লেখ করে সানজানা সোবহান বলেন, আমি সাবেক উপাচার্যের মেয়ে সে কারণেই আমার বিরুদ্ধে এসব করা হচ্ছে। কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগও নেই, আমি কোনো মার্ডারের আসামিও না, সকল নিয়ম মেনেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়েছি, তাহলে আমার ক্রুটি কোথায়?
প্রভাষক সানজানা আরও জানান, বিশ^বিদ্যালয়ের এহেন কর্মকান্ডের কারণে আমি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। শিক্ষাছুটি থেকে ফিরে আসার পর স্যালারিটার একটা ফিক্সেশন হয়, কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমার সেটি হয়নি। আমার প্রমোশনের জন্য নিয়োগ বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এটি বাতিল করা হয়। আমার প্রমোশনটিও আটকে রাখা হয়েছে।’ রা/অ