রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:২৭ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
মহাজোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির নিজস্ব ভোটব্যাংক রাজশাহী সদর আসনে খুব সামান্য। তার পরও গত তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের সমর্থনে রাজশাহী সদর আসনের এমপি হয়ে আসছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তবে তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক মোটেও ভালো নেই। উল্টো নেতাদের সমালোচনা করে প্রকাশ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। গত রাজশাহী সিটি নির্বাচনের পর থেকে সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাদশা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বাদশার কার্যক্রম পুরোটাই ছিল লোক দেখানো। নির্বাচনে তিনি কোনো কাজ করেননি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বা জনগণের জন্যও তেমন কোনো কাজ করেননি এই সংসদ সদস্য।
নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বাদশার এই ঠান্ডাযুদ্ধের রেশ কাটাতে না পারলে আগামী সংসদ নির্বাচনে বাদশাকে ভুগতে হতে পারে। আবার আওয়ামী লীগের কেউ মনোনয়ন পেলে ওয়ার্কার্স পার্টির ভোট থেকেও তিনি বঞ্চিত হতে পারেন।
একাধিক নেতা বলছেন, রাজশাহী সদর আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির ভোট ১০ হাজারেরও কম। মূলত আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকের ওপর ভরসা করেই নৌকা প্রতীক নিয়ে বাদশা তিন মেয়াদে এমপি হয়েছেন। তবে ২০০৮ সালের এমপি হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি তিনি। এ নিয়ে বারবার দূরত্ব বাড়লেও নির্বাচনের সময় নৌকা প্রতীকের কারণে তা ঘুচে যায়। গত সংসদ নির্বাচনের পর বাদশা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে নিয়ে প্রকাশ্যে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। এ নিয়ে লিটনের সঙ্গেও বাদশার দূরত্ব তৈরি হয়। প্রায় দুই বছর তাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকে। গত সিটি নির্বাচনের আগে ১৪ দলীয় জোটের সভায় সভাপতিত্ব করেন বাদশা। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন খায়রুজ্জামান লিটন। মহাজোটের পক্ষ থেকে লিটনকে সমর্থন দিয়ে সিটি নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীকে মাঠে নামান বাদশা।
তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, বাদশা আওয়ামী লীগের ভোটে এমপি হয়ে দলটির সিনিয়র নেতাদের সমালোচনায় ব্যস্ত থেকেছেন। আওয়ামী লীগের কোনো নির্বাচনেই তিনি সহযোগিতা করেননি। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ বা জেলা আওয়ামী লীগের কারও সঙ্গেই বাদশার সম্পর্ক ভালো নেই।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ওয়ার্কার্স পার্টির ভোট রাজশাহী সদর আসনে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার। বাদশা এমপি হয়ে জনকল্যাণমূলক কোনো কাজ করেননি। আওয়ামী লীগের কারও জন্যই কোনো সুপারিশ করেননি। কোনো সুযোগ-সুবিধাও দেননি। তিনি খুবই জ্ঞানী মানুষ। পার্লামেন্টে থাকেন। বড় বড় কথা বলেন। আমাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। আবার বিরোধও নেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা যদি বাদশাকে আবারও নৌকা প্রতীক দেন, তাহলে আমরা কাজ করতে বাধ্য থাকব। তবে আওয়ামী লীগের কারোই আন্তরিকতা থাকবে না। একজন নেতাও আন্তরিকভাবে বাদশার জন্য কাজ করবেন না। এবার নেত্রী তাঁকে নৌকা নাও দিতে পারেন বলে শুনছি।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, আমার সঙ্গে বা আওয়ামী লীগের কারও সঙ্গেই ফজলে হোসেন বাদশার কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের ভোটে এমপি হয়ে একের পর এক আমাদের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করেছেন। মাঠপর্যায়ের আওয়ামী লীগের কেউ চান না দলের বাইরের কেউ আবারও রাজশাহী সদর আসনের এমপি হোন। আমরা সবাই দলীয় এমপি চাই।
এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক বেশ ভালো আছে। সম্পর্ক না থাকলে একসঙ্গে কীভাবে সিটি নির্বাচন ও কর্মিসভা করলাম। ১৪ দলের নেতাকর্মীকে নিয়ে খায়রুজ্জামান লিটনের মেয়র ভোট করলাম। একসঙ্গে রাজনীতি করতে গেলে কিছু সমস্যা হয়েই থাকে, এটাকে বড় করে দেখার অবকাশ নেই। আমাদের সমস্যাও সমাধান হয়ে গেছে।
রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু বলেন, আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেই বিভক্তি। সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। এক সঙ্গেই আমরা ১৪ দলের হয়ে নির্বাচন করেছি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীর স্থানীয় রাজনীতিতে কার সঙ্গে কেমন সম্পর্ক এটা তো সবারই জানা। এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাই ভালো বলতে পারবেন। রা/অ