সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৩৭ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীতে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়ে দুই সাংবাদিকদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনায় পুলিশ ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে তিন আসামিকে পলাতক দেখানো হয়। কিন্তু এই তিন আসামি পুলিশের খাতায় পলাতক থাকলেও তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এই মামলার অন্যতম আসামি এবং সাংবাদিক বুলবুল ও রুবেলের ওপর হামলার নেতৃত্ব দানকারী জীবনকে শ্রমিক লীগ নেতাদের সঙ্গে ঘুরতে দেখা গেছে। ওই অনুষ্ঠানে ছবি তুলে সেটি ফেসবুকেও পোস্ট করা হয়েছে। এ নিয়ে সাংবাদিকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাজশাহী সাংবাদিক নেতারা দ্রুত পলাতক তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন ।
সূত্র মতে, টেলিভিশনে লাইভ চলাকালীন সময়ে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার নেতৃত্বে দিয়েছিলেন বিএমডিএর ভান্ডাররক্ষক জীবন। কিন্তু এই জীবনকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে রাজশাহী ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা শ্রমিক লীগের সভাপতি সাগরসহ কয়েকজন নেতাকে। জীবনসহ দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর আদালত থেকে জামিন নেন তারা। আর তিনজন আসামি মামলার পর থেকেই পলাতক আছেন। পরবর্তিতে নগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশ অভিযোগপত্রে ওই তিন আসামিকে পলাতক দেখান। তার মধ্যে রয়েছে বিএমডিএর প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাদেরিয়া কিবরিয়া, সহকারী প্রমাসনিক কর্মকর্তা শরিফুল হক ও সহকারী হিসাব রক্ষক আখতার হোসেন। আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক তিন আাসমির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেন। অথচ তিন আসামিই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের ধরতে পুলিশ কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী এটিএন নিউজের সাংবাদি হাবিবুর রহমান বুলবুল।
তিনি বলেন, আমাদের ওপর আসামিদের এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে। তারা সরকার দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘুরে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। আবার পলাতক আসামিদেরও গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। এতে আমরা শঙ্কিত।’
এদিকে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী পলাতক আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ শ্রমিলীগের কয়েকজন নেতার প্রশ্রয়ে নেতা হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এরা এক সময় বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। আবার সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের গাফলিতের কারণে গ্রেপ্তারী পরোয়ানাভূক্ত আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে প্রয়োজনে আবার মাঠে নামবে রাজশাহীর সাংবাদিকরা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে আমি এখন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করবো। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে আমরা ব্যবস্থা নিব।’
গত ৫ সেপ্টেম্বর সরাসরি সম্প্রচার (লাইভ) চলাকালে বিএমডিএ কার্যালয়ের সামনে হামলার শিকার হন এটিএন নিউজের রাজশাহী প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরাপার্সন রুবেল ইসলাম। বিএমডিএএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদের নির্দেশে কর্মচারীরা এ হামলা চালান। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে দুই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিএমডিএ।
ঘটনার পর সেদিন রাতেই ভুক্তভোগী সাংবাদিক বুলবুল হাবিব সাতজনের নাম উল্লেখসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় নানা কর্মসূচি পালন করছিলেন সাংবাদিকেরা।
এর মধ্যেই আসামিরা ঢাকায় গিয়ে উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে উচ্চ আদালতের একটি বেঞ্চ তাঁদের জামিন আবেদন গ্রহণই করেননি। অবশেষে ঘটনার ১৩ দিন পর পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলো। রা/অ