সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:০১ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীতে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বরাবরই কয়েকজন মিলে একটি গরু কোরবানি করে থাকেন। এবার তাঁদের এই ভাগে টান পড়েছে। ভাগীদার (অংশীদার) মেলাতে না পেরে গরু কোরবানি নিয়ে অনেকেই অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। তাঁরা বলছেন, সব জিনিসের দাম বাড়তি। তাই এবার মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের হাত টান। গরুর ভাগীদারই পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে হাটে উঠেছে পর্যাপ্ত গরু। যাঁরা ভাগে গরু কিনবেন তাঁরা বলছেন, দামে পোষাচ্ছে না। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাটে ক্রেতা বেশি, কিন্তু কেনার লোক কম।
রাজশাহী প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর রাজশাহীতে কোরবানি করা হয়েছিল ৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭৭টি পশু। এই সংখ্যাকেই এবার চাহিদা হিসেবে ধরা হয়েছে। এবার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫৭টি। চাহিদা অনুযায়ী উদ্বৃত্ত থাকছে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৯৮০টি। মোট গরুর প্রাপ্যতা রয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ২৮৬টি। আর মহিষ রয়েছে ৩ হাজার ৯২১টি। বাকিগুলো ছাগল ও ভেড়া। তবে নির্দিষ্ট করে গরু-মহিষের চাহিদার পরিমাণ জানা যায়নি।
এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আর্থিক সংকটের কারণে অনেকেই এবার কোরবানি দিতেই পারছেন না। আবার ভাগীদার না পেয়ে একা একটি গরু কিনতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে অনেকে ছাগল কোরবানি দিচ্ছেন। বাঘা উপজেলা নওটিকা গ্রামের কৃষক বয়েজুল ইসলাম বললেন, গত বছর তাঁরা পাড়ায় সাতজন মিলে একটি গরু কোরবানি দিয়েছিলেন। এবার নিজে গরুর একটা অংশ নেওয়ার জন্য ভাগীদার খুঁজছিলেন। গতবার যে সাতজন গরুর ভাগীদার হয়েছিলেন, তাঁরা এবার এভাবে কোরবানি দিচ্ছেন না। তাঁদের কেউ কেউ ছোট আকারের ছাগল কোরবানি দিচ্ছেন।
মোহনপুর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের সোহরাব হোসেনের সিএনজিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। তিনি নিজেই এটি চালান। তিনি গত বছর ২২ হাজার টাকা দিয়ে গরুর ভাগ নিয়েছিলেন। এবার তিনি কোরবানি দিচ্ছেন না। সোহরাব হোসেনের ভাষায় ‘সব জিনিসের দাম বাইড়ি যাচ্ছে, হাতে ট্যাকা দাঁড়াচ্ছে না। ইচ্ছা থাকলেও এবার কোরবানি দিতে পারিচ্ছি না।’
দুর্গাপুর উপজেলার খিদরোলক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল গত বছর ১৮ হাজার টাকায় একটি গরুর ভাগ নিয়েছিলেন। এবার তিনি কোনো কোরবানি দিতে পারছেন না। তিনি বলেন, তাঁর গ্রামে গত বছর ১২টা গরু কোরবানি হয়েছে। এবার ভাগীদার না পাওয়ার কারণে আটটির বেশি গরু কোরবানি হচ্ছে না।
তবে গোদাগাড়ী উপজেলার প্রসাদপাড়া গ্রামের চিত্র একটু ভিন্ন। এই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মুজিবুর রহমান বলেন, গত বছর গ্রামে ২৬টি গরু কোরবানি হয়েছিল। এবারও সেই রকমই হচ্ছে। তিন-চারটি একক এবং বাকিগুলো ভাগে হবে।
উত্তরাঞ্চলে বড় পশুহাটগুলোর মধ্যে অন্যতম রাজশাহীর সিটি হাট। গতকাল রোববার এই হাটে গিয়ে বিপুলসংখ্যক গরুর উপস্থিতি দেখা যায়। সেখানেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির গরু কেনার একই রকম চিত্র পাওয়া যায়। নগরের পূর্ব রায়পাড়া মহল্লার আশরাফুল ইসলাম পাঁচজন মিলে কোরবানি দেওয়ার জন্য একটি গরু কিনতে এসেছেন। তিনি বললেন, তাঁরা যেমন গরু পছন্দ করছেন, সেই গরুর দাম ১ লাখ ১০ থেকে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা। কিন্তু তাঁরা ৮০-৮৫ হাজার টাকায় গরু কিনতে চান।
দুর্গাপুর উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রাম থেকে এসেছেন আবদুর রহিম। তাঁরা সাতজন ২ লাখ টাকার মধ্যে একটি গরু কিনতে চান। ওই দামের মধ্যে পছন্দের গরু মেলাতে পারছেন না।
একই কারণে বিক্রেতারাও ভুগছেন গরু নিয়ে। পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন সিটি হাটে ছয়টি গরু এনেছিলেন। তিনি বিকেল পর্যন্ত শুধু একটি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, গরু বিক্রি হচ্ছে না। রা/অ