রবিবর, ১০ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৫৭ am
ডেস্ক রির্পোট :
খুলনা সিটি করপোরেশন ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে নগরপিতা নির্বাচনের দিন আজ। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) টানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ ভোটেই নির্বাচিত হবেন দুই সিটি করপোরেশনের সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলররাও। অলৌকিক কিছু না হলে খুলনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক আবারও মেয়র নির্বাচিত হচ্ছেন তা অনেকটাই নিশ্চিত। যদিও এ পদে আরও চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। ভিন্নচিত্র রয়েছে বরিশালে। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছেন। এ সিটিতে সাতজন মেয়র প্রার্থী হলেও চতুর্মুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এদিন কক্সবাজার পৌরসভা ও নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌরসভায়ও ভোটগ্রহণ হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এ দুটি সিটি করপোরেশনে ভোট হচ্ছে। এতে বিএনপি অংশ নেয়নি। দুটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত চারটি রাজনৈতিক দল-আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাকের পার্টি ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। এসব কারণে মেয়র পদেও ভোট নিয়ে অনেকটাই আগ্রহহীন ভোটাররা। এ অবস্থায় ভোটার টানতে দুই সিটিতেই কাউন্সিলর পদে প্রার্থী সমর্থন দেয়নি আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখায় দুই সিটিতে একই ওয়ার্ডে দলটির একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটকেন্দ্রে তাদের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ নিয়েই দুশ্চিন্তায় নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চেয়েও খুলনা ও বরিশালে ভালো ভোট হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান। গতকাল কয়েকজন সাংবাদিকের মোবাইলে পাঠানো এক বার্তায় তিনি এ আশা প্রকাশ করেন। এতে তিনি বলেন, ভোটের দিন আমরা সরাসরি সিসি ক্যামেরায় এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করব। ইসির নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমাদের নির্দেশনা প্রশাসন, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা শতভাগ পালনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশন দুটিতে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধের জন্য চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন গাজীপুরের নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে বলে বিশ্বাস করি। অনিয়মের সঙ্গে কেউ জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে অতীতের চেয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১৭ এপ্রিল খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে ইসি। ২৬ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থীরা। গতকাল দুই সিটির সব কেন্দ্রে নির্বাচনি মালামাল পাঠানো হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল চলছে। ভোটগ্রহণ উপলক্ষ্যে নির্বাচনি এলাকায় আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যানবাহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
খুলনা সিটিতে মেয়র প্রার্থী ৫ জন : খুলনা সিটি করপোরেশনে পাঁচজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন-আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক, জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আব্দুল আউয়াল, জাকের পার্টির এসএম সাব্বির হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান। তবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তালুকদার আব্দুল খালেক আবারও খুলনার মেয়র নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বলে জানান স্থানীয়রা। মেয়র পদে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় তার জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে। এ নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ ও মহিলা ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ২৮৯টি ও ভোটকক্ষের সংখ্যা ১৭৩২টি।
এদিকে এ সিটিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী আছে। এছাড়া বিএনপির ৯ ও জামায়াতের ৫ জন কাউন্সিলর পদে লড়ছেন। বিএনপি তাদের ৯ নেতাকে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় ‘মীরজাফর’ আখ্যায়িত করে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে। তাদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় আরও ১১ জনকে শোকজ করা হয়েছে। অপরদিকে জামায়াতের পাঁচজন কাউন্সিলর পদে ভোট করলেও তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। খুলনায় মেয়র পদ নিয়ে তেমন আলোচনা না থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রভাব বিস্তার নিয়ে শঙ্কায় আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাদের প্রতিবেদনে দুই-তৃতীয়াংশ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সেসব ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এছাড়া খুলনা সিটি করপোরেশনের ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলররা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। তারা দুজনই আওয়ামী লীগের নেতা।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৯ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটের পরিবেশ ভালো রয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা। গতকাল খুলনা পুলিশ লাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তফশিল ঘোষণার পর থেকে অব্যাহতভাবে আমরা কাজ করছি। আমরা প্রার্থী ও ভোটারদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বিপুল পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করেছি। আশা করি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, এ নির্বাচনে পুলিশের ৪ হাজার ৮২০ জন, আনসার সদস্য ৩ হাজার ৪৬৮ জন, ১৬ প্লাটুন বিজিবিতে ৩২০ জন, সাদা পোশাকে ১৯৫ জন, ডিবি পুলিশের ৮টি টিম, র্যাবের ১৬টি টিমে ১০৭ জন মাঠে রয়েছেন। এছাড়া ৩১টি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের টিম এবং ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
বরিশালে মেয়র পদে লড়ছেন সাত প্রার্থী : বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাতজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। নৌকা প্রতীকে খোকন সেরনিয়াবাত, লাঙ্গল প্রতীকে ইকবাল হোসেন তাপস, হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম ও টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী কামরুল আহসান রুপনের মধ্যে মূল লড়াই হবে। স্থানীয়রা জানান, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের ফলে ভোটারদের মধ্যে এ নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের কমতি নেই।
মেয়রের মতো কাউন্সিলর পদেও একই অবস্থা। বরিশালের ৩০টি ওয়ার্ডে ১১৫ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪২ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটি করপোরেশনেরও বেশিরভাগ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। ভোটকেন্দ্রে তাদের প্রভাব বিস্তার নিয়ন্ত্রণ নিয়েই বেশি চ্যালেঞ্জে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
বরিশাল সিটি করপোরেশনে ১২৬টি ভোটকেন্দ্র ও ৮৯৪টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন ও মহিলা ভোটার এক লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন। সূত্র : যুগান্তর