সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৩৩ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
এমপি ফারুক চৌধুরীর বড়ভাই মোর্তুজা আজিজ চৌধুরী ওরফে হাসনাথ চৌধুরীর প্রভাবে রাজশাহীর তানোরে শালিশি বৈঠকে ওসি দ্বারা লাঞ্ছনার শিকার হয়ে থানা গেটেই সন্ত্রাসি হামলার শিকার হয়েছেন শুকুরমন্ডল ওয়াক্ফ এস্টেট মোতোয়াল্লী রেজিয়া বিবি, তার মেয়ে মমতাজ বিবি, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাই সওদাগর হোসেন। ঘটনার দিন ১ এপ্রিল মোতোয়াল্লী রেজিয়া বিবি বাদি হয়ে ১০ জন নামধারী সন্ত্রাসির বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু থানা পুলিশ আসামি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অভিযোগটি আমলে নেয়নি।
ফলে নিরুপাই রেজিয়া বিবি গত ৪ এপ্রিল রাজশাহীর আমলী-১ নম্বর বিজ্ঞ আদালতে আসামি সাহানুল ইসলামসহ ১০ জন নামধারী সন্ত্রাসির বিরুদ্ধে মামলা করেন। যার নম্বর-০৫/২০২৩। এহেন মামলা আমলে নিয়ে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক ২ দিনের মধ্যে থানায় এজাহার হিসেবে গণ্য করে ওসিকে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু থানার ওসি আসামি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আজও কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করনেনি তিনি। ফলে আসামিদের অব্যাহত হুমকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন মামলার বাদি রেজিয়া বিবি ও তার সন্তানরা।
অপরদিকে, ওই ঘটনা নিয়ে জাহাঙ্গীর ইসলাম (৪৫) নামের একব্যক্তি ৬ এপ্রিল একই বিজ্ঞ আদালতে দেলোয়ারসহ ৯ জন নামধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কাউন্টার মামলা করেন। যার নম্বর- ০৬/২০২৩। এই মামলার সূত্রধরে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ারকেই উল্টো গ্রেফতারের চেস্টায় আছেন ওসি বলে জানান মোতোয়াল্লী রেজিয়া বিবি।
মামলার এহাজার ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির প্রাণপুর গ্রামের বাসিন্দা শুকুর মন্ডলের প্রাণপুর মৌজায় অবস্থিত ৬৪ বিঘা সম্পত্তি ‘বাংলাদেশ ওয়াক্ফ এস্টেট’ নামে রেজিস্ট্রী করে দেন। যার- ই.সি.নং-১৮১৬৪। বিরাশি জে.এল নম্বরে ৫৭ ও ৯৫ নম্বর আরএস খতিয়ানের ২৩টি দাগে ধানী, ডোবা, বাড়ি, পুকুর ও পতিত তফসিল পরিচয়ে সম্পত্তি রয়েছে। তাতে শর্ত দেয়া হয়, তিনি অভাবে ‘বাংলাদেশ ওয়াক্ফ এস্টেট’ বিধি বিধান মতে তার বংশের ওয়ারিশকে মোতোয়াল্লী নিযুক্ত করে ষোল আনা সম্পত্তির উৎপাদিত ফসল হতে কিছু অংশ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান করে এস্টেট পরিচালনা করতে হবে। সেই নিয়মমতে শুকুর মন্ডল মৃত্যুর পর প্রথমে তার স্ত্রী পাতানী বেওয়া মোতোয়াল্লী নিযুক্ত হন। তার মৃত্যুর পর বড় মেয়ে রাবিয়া বিবি ভারসাম্যহী (পাগল) হওয়ায় ছোট মেয়ে রেজিয়া বিবি বাংলাদেশ ওয়াক্ফ এস্টেট হতে মোতোয়াল্লী নিযুক্ত হন। এঅবস্থায় ৩০ বছর ধরে এস্টেট সম্পত্তি পরিচালনা করে আসছেন রেজিয়া বিবি। কিন্তু রাজশাহী শহেরর কিছু ভূমিদস্যু ওই সম্পত্তির ওপর কু-নজর পড়ে। ফলে সম্পত্তির ওয়ারিশদের কালো টাকার লোভ দেখিয়ে ওয়াক্ফ এস্টেট’ আইন অমান্য করে একাধিকবার সম্পত্তি জবর-দখলের চেস্টা করা হয়। এতে ফলোপ্রসূ না হওয়ায় ওয়াক্ফ এস্টেট’ আইন অমান্য করে রাবিয়া বিবির ওয়ারিশরা সম্পত্তি দেদারসে বিক্রি করছেন। অনুযায়ী কোন অবস্থায় ওই সম্পতি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না কেউ।
তবে, ২০০৩ সালের ৪ জানুয়ারী ১/২০০৩ নম্বর দলিল দ্বারা বড় মেয়ে রাবিয়া বিবি ওই ওয়াক্ফ এস্টেট সম্পত্তির মধ্যে ২.৯৬ একর সম্পত্তি আজমুল সরকারের কাছে বিক্রি করেন। পরে ক্রয়কৃত সম্পত্তির মধ্যে আজমুল সরকার ১.৫২ একর জমি খারিজ করে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বড়ভাই মোর্তুজা আজিজ চৌধুরী ওরফে হাসনাথ চৌধুরীর কাছে বিক্রি করেন। তিনি ওই ওয়াক্ফ এস্টেট সম্পত্তি ক্রয় করে বিক্রয়ের জন্য সাইনবোর্ড দেন। এমন সাইনবোর্ডের দুই পার্শ্বে সম্পত্তিটি বিক্রয় যোগ্য নহে মর্মে মোতোয়াল্লী রেজিয়া বিবিও সাইনবোর্ড দেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে দ্বদ্বের রুপ নিলে ওসির উদ্যোগে গত ১ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে থানায় শালিশি বৈঠক বসে। বৈঠকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাগবিতন্ডা শুরু হলে ওসি তাদের থানা হতে বের হতে বলেন। এহেন অবস্থায় থানা থেকে বের হবার পথে গেটেই হামলা চালায় উপজেলার প্রাণপুর গ্রামের বাসিন্দা সাহানুর ইসলাম ওরফে মুকুল (৪২)। তিনি আমিনুল ইসলামের পুত্র। হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সারোয়ার হোসেন ও সাইদ হোসেন ছাড়াও ১০/১২ জন সন্ত্রাসি বাহিনী।
এবিষয়ে ওয়াক্ফ এস্টেট মোতোয়াল্লী রেজিয়া বিবির আহত পুত্র দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিয়মমতে তার মায়ের নামে শুকুরমন্ডল ওয়াক্ফ এস্টেট পরিচালিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারী বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসকের অফিসে ২৮ হাজার টাকা চাঁদা দেয়া হয়। এভাবে বেশ কয়েক বছর ধরে আমার মাতা রেজিয়া বিবির নামে আমরা কয়েক লক্ষ টাকা চাঁদা দিয়েছি। কিন্তু গত ১ এপ্রিল থানায় শালিশি বৈঠক বসে। বৈঠকে ওসির সামনে কিভাবে অস্ত্র নিয়ে হামলা করে সন্ত্রাসিরা। এতে অবশ্যই ওসির ইন্ধন রয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করি। ওসি অভিযোগটি আমলে না নেওয়ায় বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেছি। কিন্তু আসামি দ্বারা ওসি প্রভাবিত হয়ে এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এব্যাপারে সারোয়ার হোসেন বলেন, শুকুরমন্ডল ওয়াক্ফ এস্টেট মোতোয়াল্লী তাদের কোন হিস্যা দেয় না। ফলে তানোর থানায় বসা হয়। এসময় দেলোয়ার ও তার ভাইয়েরা উগ্র মেজাজ দেখায়। এতে তাদের লোকজন উত্তেজিত হয়ে কিল-ঘুষি মারে। এর বেশি কিছু হয়নি বলে এড়িয়ে গেছে তিনি।
তানোর থানার ওসি কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, শালিশ বিচার শেষের দিকে এমন সময় দেলোয়ার উস্কানি মুলুক কথা বলা শুরু করে। এসময় সবাইকে থানা থেকে বের করে দিয়েছি। থানা চত্বরে নয়, গেটের সামনে হামলা হয়েছে। এঘটনায় আদালতে উভয় মামলা করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওসি। তা/অ