বৃহস্পতিবর, ২১ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:১৩ pm
ডেস্ক রির্পোট :
জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরের পল্লিতে স্ত্রী পান্না বেগমের (৩১) গলা কেটে হত্যার পর শবেবরাতের নামাজ আদায় ও মিলাদ মাহফিলে যোগ দিতে মসজিদে যান স্বামী সিরাজুল ইসলাম। এ ঘটনায় স্বামী সিরাজুল ইসলামকে (৪৪) আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গুডুম্বা পূর্বপাড়া গ্রামে এ নৃশংস ঘটনা ঘটে।
পান্না বেগম বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার ঘোড়াদহ মধ্যপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের মেয়ে। প্রায় ১৩ বছর পূর্বে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের গুরুম্বা-পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তার শেখের ছেলে সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়; কিন্তু এত বছরেও তাদের কোনো সন্তান হয়নি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সন্তান না হওয়াসহ নানান কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি হতো।
বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ নূরে আলম জানান, দাম্পত্য কলহের কারণে মঙ্গলবার বিকাল থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কয়েক দফা কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রাতে সিরাজুল ইসলাম তার স্ত্রী পান্না বেগমকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন। এরপর রক্তাক্ত স্ত্রীর নিথর দেহ মেঝেতে ফেলে রেখে ঘটনাটি ‘দুর্বৃত্ত কর্তৃক স্ত্রীহত্যা’ বলে নাটক সাজাতে ওজু করে শবেবরাতের নামাজ আদায় ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নিতে গ্রামের অন্যান্য মুসল্লিদের সঙ্গে মসজিদে চলে যান। ঠিক ঘণ্টাখানেক পরে মসজিদ থেকে বাড়িতে ফিরে এসে নিজের ঘরে ঢুকে রক্তাক্ত স্ত্রীর নিথর দেহ দেখে- অবাক হওয়ার ভান করে (অভিনয়) চিৎকার শুরু করেন।
সিরাজুলের আর্তচিৎকার শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা; দেখতে পান মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে রয়েছে পান্না বেগমের গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এ হত্যা রহস্যের মোটিভ উদ্ধারে কাজ শুরু করে। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হতে পারে বলে ধারণা করে পুলিশ।
এ ব্যাপারে সিরাজুল ইসলামের শ্বশুর আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে আক্কেলপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুলিশের সন্দেহ হয় গৃহবধূ পান্না বেগমের স্বামী সিরাজুল ইসলামকে। ওই রাতেই নিহত পান্না বেগমের স্বামী সিরাজুল ইসলাম ওরফে লালু, ভাসুর আসাদুল ইসলাম (৪২), ভাবি সাগিরা বেগম (৩৬) ও প্রতিবেশী মাসুদ রানাকে (২২) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আক্কেলপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এসপি বলেন, পান্না বেগমের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগেই পুলিশের জেরার মুখে স্বামী সিরাজুল ইসলাম তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে সিরাজুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দি রেকর্ড করার পর তাকে জয়পুরহাট জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পরে আটক আসাদুল ইসলাম, সাগিরা বেগম, মাসুদ রানাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে এসপি জানিয়েছেন। সূত্র : যুগান্তর