রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:১৪ pm
ডেস্ক রির্পোট :
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই। এ অবস্থায় বাইরে থেকে চিকিৎসার সব উপকরণ কিনতে হচ্ছে রোগীদের। একবার ডায়ালাইসিস করতে তিন হাজার টাকার উপকরণ কিনতে হচ্ছে। ফলে ডায়ালাইসিস করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন বিভাগের সব জেলার রোগী।
এদিকে, অর্থের অভাবে অনেকের ডায়ালাইসিস বন্ধ রয়েছে। কারও কারও শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। এরই মধ্যে গত ১০ দিনে আট কিডনি রোগী মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কিডনি রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চিকিৎসার যন্ত্র ছাড়া কোনও উপকরণ নেই। সবকিছু বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে রোগীদের। এ নিয়ে বারবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করলেও কোনও উপকরণ সরবরাহ করেনি। উপকরণ কিনতে না পেরে সপ্তাহে দুই বারের পরিবর্তে মাসে একবার ডায়ালাইসিস করছেন দরিদ্র রোগীরা। যারা প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতে পারছেন না, তাদের চিকিৎসা চলছে না। এতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে কারও কারও মৃত্যু হচ্ছে বিনা চিকিৎসায়।
ডায়ালাইসিস বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা বলছেন, কর্তৃপক্ষকে বারবার লিখিতভাবে জানানোর পরও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে ডায়ালাইসিস সেবা অনেকটা বন্ধ অবস্থায় রয়েছে।
সরেজমিনে ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডে ঘুরে এবং কিডনি রোগীদের সঙ্গে কথা বলে আট জনের মৃত্যু ও অনেকের শারীরিক অবস্থার অবনতির তথ্য জানা গেছে।
ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে এসেছেন সালমা বেগম (৫৫)। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে এই নারী বলেন, ‘চিকিৎসা উপকরণ কিনতে না পারায় আমার ডায়ালাইসিস হচ্ছে না। শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারছি না।’
হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজন কিডনি রোগী ২০ হাজার টাকা জমা দিয়ে সপ্তাহে দুদিন করে ৪৮ বার ডায়ালাইসিস করাতে পারেন। এটি রোগীদের প্যাকেজ সুবিধা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যাদের দুটো কিডনি বিকল, একমাত্র তাদের সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিস করানো হয়। আগে সব ধরনের উপকরণ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হতো। দেড় মাস ধরে প্রত্যেক রোগীকে ডায়ালাইসিসের সব উপকরণ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। সব উপকরণ বাইরে থেকে কিনে আনলে ডায়ালাইসিস করানো হয়। এসব উপকরণ কিনতে ২৭০০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। সপ্তাহে দুবার করলে ছয় হাজার টাকা লাগে। সে হিসাবে মাসে আটবার ডায়ালাইসিস করতে ২৪ হাজার টাকা লাগে। একজন রোগীর পক্ষে এই ব্যয় বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
ডায়ালাইসিস রোগী ও তাদের স্বজনরা বলছেন, কেউ কেউ সব উপকরণ কিনতে না পারায় বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। গত ১০ দিনে আট রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অনেকে এসব উপকরণ বাইরে থেকে কিনতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। অথচ এসব উপকরণ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করার কথা ছিল।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থেকে ডায়ালাইসিস করতে এসেছেন মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘তিন হাজার টাকার উপকরণ কিনতে না পারায় মাসে আটবারের পরিবর্তে চারবার ডায়ালাইসিস করছি। এতে আমার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। এভাবে আরও কিছুদিন চললে মারা যাবো।’
একই কথা বললেন গাইবান্ধা থেকে আসা শাহজাহান আলী ও দিনাজপুরের সোলায়মান মিয়া। তারা জানান, দুটি ছাগল ও একটি করে গরু বিক্রি করে উপকরণ কিনে ডায়ালাইসিস করাচ্ছেন। এখন আর কোনও উপায় নেই। পরিবারের সক্ষমতা নেই, এত টাকা ব্যয় করে চিকিৎসা করানোর। এখন বিনা চিকিৎসায় পড়ে আছেন তারা।
শাহজাহান আলী বলেন, ‘সরকার কিংবা স্বাস্থ্যমন্ত্রী কী রংপুর মেডিক্যালের ডায়ালাইসিস চিকিৎসাসেবার এই দুরবস্থার কথা জানেন না। তাহলে কেন জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আমরা কি বিনা চিকিৎসায় মারা যাবো?’
ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডের নার্স মো. রানা বলেন, ‘এখানে ২৬টি ডায়ালাইসিস মেশিন আছে। সবগুলো সচল। কিন্তু উপকরণ সরবরাহ না থাকায় অনেকের পক্ষে ডায়ালাইসিস করা সম্ভব হচ্ছে না। আগে রোগীদের জায়গা দিতে পারতাম না। এখন রোগী নেই। যারা আসছেন তারা বাইরে থেকে সব উপকরণ কিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আ ম আখতারুজ্জামান বলেন, ‘কিছুদিন হলো আমি এখানে যোগ দিয়েছি। অনেকদিন ধরে ডায়ালাইসিস চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।’
গত ১০ দিনে আট কিডনি রোগী মারা যাওয়ার তথ্য আমার কাছে নেই উল্লেখ করে ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘যারা ডায়ালাইসিস করতে আসেন তারা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন। সবার খবর রাখা সম্ভব হয় না।’ সূত্র : বাংলাট্রিবিউন