শুক্রবার, ২০ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৪১ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
সারা বিশ্বে চলছে খাদ্য ঘাটতি ও অর্থনৈতিক মন্দা। বিপাকে খেটে খাওয়া জনসাধারন। সেই বিবেচনায় বর্তমান সরকার সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার নিম্ম মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য বিশাল ভূর্তুকি দিয়ে মাত্র ৩০ টাকা ধরে ওএমএস চাল বিক্রি শুরু করেন। রাজশাহীর তানোর পৌরসভায় তিন জন ডিলার ও মুন্ডুমালা পৌরসভায় তিন জন ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করার নিয়ম। শুক্রবার শনিবার বাদে প্রতিদিন একেকজন ডিলার এক মে:টন করে চাল বিক্রি করবেন। কয়েক মাস আগে দুই টন চাল ও আটা বিক্রি করা হত।
কিন্তু গমের ঘাটতির কারনে বাদ রেখে শুধুমাত্র এক টন করে দুই পৌর এলাকায় ছয়জন ডিলার ছয় টন করে সপ্তাহে পাচদিন বিক্রি করবেন। সঠিক নিয়মে বিক্রির জন্য প্রতি ডিলার পয়েন্টে একজন করে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় ট্যাগ অফিসারেরা কিছুই জানেন না। তাদের কাছ থেকে ভূয়া মাস্টাররুল তৈরি করে স্বাক্ষর নেয় প্রভাবশালী ডিলারেরা। আবার কেউ স্বাক্ষর ছাড়াই দেদারসে অনিয়ম করছেন। এতে করে সরকারের মহৎ উদ্দোগ ভেস্তে দিচ্ছেন অসাধু ক্ষমতাধর ডিলাররা। ফলে ওএমএসের চাল না পেয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন খেটে খাওয়া দিন মজুর জনসাধারণ।
খাদ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, তানোর পৌরসভার কলেজ গেট পয়েন্টে ওএনএসের ডিলার উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা সুনিল। তার পয়েন্টে ট্যাগ অফিসার একটি বাড়ি একটি খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল রানা।তিনি জানান, আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি ট্যাগ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা যাবে না। কারন আমি যে প্রকল্পে কাজ করি সেখানেই সময় দিয়ে শেষ করতে পারিনা। সুতরাং এদায়িত্ব পালন করা অসম্ভব। আমি তো জানি অন্যজনকে দায়িত্ব দিয়েছে। মাস্টাররোল কপিতে কি স্বাক্ষর দেওয়া লাগেনা জানতে চাইলে তিনি জানান, হ্যাঁ লাগে, তবে আমার বাড়ি মোহনপুর উপজেলায় সকালে অফিসে আসার সময় পয়েন্টে চাল বিক্রি হয় কিন্তু যাওয়ার সময় দেখতে পায়না।
তালন্দ বাজারের ডিলার আরেক প্রভাবশালী নেতা তারেক সরকার। ট্যাগ অফিসার কৃষি অফিসের মাঠ কর্মী (বিএস) এমদাদুল হক। তিনি জানান, পয়েন্টে মাঝে মধ্যে যাওয়া পড়ে। আমার জানা মতে দু চার বস্তা চাল অন্য জায়গায় বিক্রি করতে পারে, তবে বেশির চাল নিয়ম অনুযায়ী বিক্রি হয়।
কাশেম বাজার পয়েন্টের ডিলার ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি আলফাজ উদ্দিন। ট্যাগ অফিসার মৎস্য কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, আমি দীর্ঘদিন বাহিরে ছিলাম, আমি জানি অন্যজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাকেই রাখা হয়েছে এটা অজানা। ডিলার আলফাজ গত বছরে চাল বাহিরে পাচারের অপরাধে জরিমানা দেন। সে প্রতিনিয়ত চাল পাচার করেন বলে অহরহ অভিযোগ।
মুন্ডুমালা পৌরসভার মুন্ডুমালা বাজার পয়েন্টের ডিলার উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক জুবায়ের ইসলাম। তিনিও গত বছর অনিয়মের দায়ে শোকজ হন। তার ট্যাগ অফিসার মুন্ডুমালা মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সহিদুল ইসলাম। ডিলার জুবায়ের কোন সময় চাল বিক্রি করেন না। তিনি অধিক দামে বিভিন্ন চাল কল মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। প্রকাশ্যে দিবালোকের মত সিন্ডিকেট করলেও কেউ কিছুই বলতে পারেন না। কারন সে উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক।
ট্যাগ অফিসার প্রভাষক সহিদুল ইসলামের ০১৭৮২৯৯০০৩৬ মোবাইল নম্বরে একাধিক বার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ করেন নি তিনি।
মুন্ডুমালা পৌর এলাকার আয়ড়া মোড়ের পয়েন্টের ডিলার বাধাইড় ইউপির যুবলীগ নেতা দেবানন্দ। ট্যাগ অফিসার এলজিইডি অফিসের সার্ভেয়ার আসাদুজ্জামান রিপন। তিনি জানান কাগজে কলমে দায়িত্বে থাকলেও আমার পরিবর্তে এলজিইডির ওয়ার্কশ্টেন শরিফুল ইসলাম, তিনি জানান ডিলার সঠিক নিয়মে চাল বিক্রি করে এবং আমি উপস্থিত থাকি। নামমাত্র চাল বিক্রি করে পাচার করে আপনি কি বিক্রির শেষ পর্যন্ত থাকেন জানতে চাইলে তিনি জানান, দেবানন্দ যতটুকু হোক বিক্রি করে, কিন্তু আরেক ডিলার জুবায়ের ও নুর আলম সিদ্দিক বিক্রি করেন না। উপজেলায় আসেন স্বাক্ষাতে কথা হবে।
কাউন্সিল মোড় পয়েন্টের ডিলার নুর আলম সিদ্দিক। ট্যাগ অফিসার মুন্ডুমালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামিল মার্ডি। তার ব্যক্তিগত ০১৭২০৪৯৭০৭৩ মোবাইল নম্বরে একাধিক বার ফোন দিলেও রিসিভ করেন নি।
অসহায় দরিদ্র একাধিক ব্যাক্তিরা জানান, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের আগে চাল কিনতে পাওয়া যেত। কিন্তু এরপর থেকে আর চাল পাওয়া যায় না। যে চাল বিক্রি হয় সেটা তানোরের উৎপাদন কৃত চাল না। খেতে পারা যায় না। বিকট গন্ধ ও প্রচুর মোটা চাল।
তবে ডিলারেরা জানান, চাল কিনতে না এলে কি করা যাবে বলে দায় সারেন অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা নুরনবী জানান, আমি জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে দায়িত্ব পেয়েছি। দুই উপজেলার দায়িত্বে আছি। তবে, ওএমএসের চালের বিষয়ে আগেও শুনেছি। অতিদ্রুত ডিলারদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। রা/অ