রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:০৬ am
আর কে রতন, বিশেষ প্রতিবেদক :
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী তালের ডোঙ্গা নৌকা। নতুন জন্মের কাছে অদ্ভুদ নাম। নাম শুনতেই বোঝা যায় তাল গাছ বা তালের সাথে কোন না কোন সম্পর্ক রয়েছে। তালের ডোঙ্গা অথ্যাৎ তাল গাছ থেকে তৈরী ছোট নৌকা নামে এক সময় পরিচিত ছিলো। ডোঙ্গা শব্দের মূল উৎপত্তি হয়েছে ডিঙ্গি থেকে। ডিঙ্গি অর্থ ছোট। তালের ডোঙ্গা মূলত নির্মান করা হয় তাল গাছ থেকে। মাত্র এক প্রজন্ম আগেও উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ খাল বিল নদী নালা ও ডোবাতে প্রচুর তালের ডোঙ্গা চোখে পড়ত, কিন্তু কালের স্রোতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারনে তালের ডোঙ্গা আজ বিলুপ্তির পথে। এক সময় উত্তরাঞ্চলের সবকটি জেলার প্রতিটা গ্রামের মানুষের জলপথের প্রধান বাহন ছিল এই তালের ডোঙ্গা।
রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর তালের ডোঙ্গার ব্যাবহার ছিলো। মূলত তালের ডোঙ্গা মৎস্য আহরনকারিদের প্রধান যন্ত্র ছিলো এবং বিলে শাপলা ফুল, শামুক সংগ্রহ অথবা কোন বিল বা নদী খাল পারাপারের হওয়ার জন্য। রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উপজেলার নদী, খাল বিলে এখনও তাল গাছের তৈরী ডোঙ্গা কিছু এলাকায দেখা যায়।
১৪ ফেব্রুযারি মোহনপুর উপজেলা সদর হতে মীরপুর গ্রামে যাওয়ার পথে এ প্রতিবেদক মহানগর বিলে হটাৎ তালের একটি ডোঙ্গা চোখে পড়ে। ডোঙ্গাটির মালিক কে স্থানীয় এক ব্যাক্তির নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, মীরপুর গ্রামের আজিজুল খানের এটি। ডোঙ্গার মালিকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি অনেক বছর ধরেই এই ডোঙ্গাটি ব্যবহার করে আসছি। এই গ্রামে শুধু আমারও তালের ডোঙ্গা আছে। আমি এই ডোঙ্গাটি গরুর ঘাষ কাটার কাজে এবং কি মাছ বিলের মাছ ধরার কাছে ব্যবহার করে থাকি। তিনি আরো বলেন, বর্তমান যুগের সন্তানরা তো এখন তালের ডোঙ্গা কি সেটা চিনে না।
তবে মোহনপুর উপজেলার বরইকুড়ি গ্রামের শত বছর বয়সে প্রবীণ ব্যাক্তি বাদল প্রামানিক বলেন, এক সময় কাঠের নৌকার প্রচলন ছিলনা। সে বর্ষা মৌসুমে আমাদের রাস্তা ঘাটও তমন ছিল না। ফলে সে কালে তাল গাছের তৈরী ডোঙ্গায় একমাত্র চলাচলের যন্ত্র ছিল। কিন্তু বর্তমানে এটি আর চোখে পড়ে না।
গোদাগাড়ি উপজেলার প্রবীণ ব্যাক্তির কাছ থেকে জানা যায় একসময় ছোট খাটো কাজ করার জন্য তালের ডোঙ্গা প্রশিদ্ধ ছিলো। বিনোদনের জন্য নদী ও খাল বিল এলাকায় আয়োজন করা হতো “ডোঙ্গার বাইচ”। সর্বোচ্চ দুজন মানুষ এক সাথে ডোঙ্গায় চলাচল করতে পারতো, এর বেশি হলে ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। বর্ষা মৌসুমে চলাচলের জন্য তালের ডোঙ্গা বহুল ব্যাবহৃত হতো।
বাকশিমইল গ্রামের মৎস্যজীবি জাবেদ আলীর জানান, সে নিজে প্রায় ৩০ বছর আগে ডোঙ্গা তৈরী করে সেই ডোঙ্গা দিয়ে সারা বছর খাল থেকে মাছ ধরে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। ডোঙ্গা নির্মাতা হওয়ায় এলাকার মানুষ তার কাছে ডোঙ্গা তৈরীর জন্য বায়রা দিয়েও দিয়ে থাকতেন। তার কাছ থেকে জানা যায়, তাল গাছের অধিক্যতার কারনে এই এলাকায় ডোঙ্গা নির্মান কাজ সহজ ছিলো, ডোঙ্গা তৈরীর কাজ করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতো।
নানা প্রতিবন্ধকতার কারনে তালের ডোঙ্গা নির্মাতারা হারিয়ে গেছে, সেই সাথে ডোঙ্গাও হারিয়ে গেছে। বর্তমানে দেশের ডোঙ্গা নির্মান হয় না বলেই বলা যায়। তার কাছে কাছে এলাকার অনেকে দাবি জানিয়ে বলেন ডোঙ্গা টিকিয়ে রাখতে নদী খনন করতে করা প্রয়োজন। তালের ডোঙ্গা পরিবেশ বান্ধব ও সহজ নৌযান। এ ধরনের নৌযান টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারি উদ্দ্যোগ খুব প্রয়োজন। না হলে নতুন প্রজন্মের সন্তানরা তালের ডোঙ্গা কি চিনবে না। রা/অ