রবিবর, ১০ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৫০ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা :
রাজশাহীর বাগমারায় চাাঁদাবাজির মামলা দিয়ে ৭০ বছরের বৃদ্ধ অবসপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষককে জেল খাটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। মামলায় অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষকের বয়স জালিয়াতি করার অভিযোগ করা হয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং ওসির বিরুদ্ধে।
জমিজমা সংক্রান্তের জের ধরে বাদী পক্ষের নিকট থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে বাগমারার ওসি আমিনুল ইসলাম স্কুল শিক্ষক তোজাম্মেল হককে আটকের পর মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে অবসপ্রাপ্ত শিক্ষক তোজাম্মেল হক এই ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাগমারা উপজেলার চাপড়া মোহামম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক এটিএম তোজাম্মেল হক লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার বাবা লুৎফর রহমান বাগমারার হাসনিপুর গ্রামের সাবের আলীর নিকট থেকে ৫ শতাংশ জমি কিনে নেন। পরবর্তিতে আমার বাবা লুৎফর রহমান আমাকে সেই জমি দান করেন। এর পর থেকেই জমির খাজনা-খারিজসহ সমস্ত কাগজপত্র আমার নামে রয়েছে।
‘কিন্তু সম্প্রতি গণিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম ওই জমিটি আবুল কাশেম মন্টুর ছেলে মাসুম কবিরের নিকট থেকে কিনে নিয়েছেন বলে ভুয়া দলিল করেন। সেই ভুয়া দলিল মূলে শামসুল পরবর্তিতে কামরুজ্জামান নামের এক ভূমিদস্যুর নিকট বিক্রি করেন। এর পর তারা দুজনে মিলে ওই জমিটি দখল করতে যান সম্প্রতি।’
তোজাম্মেল হক এক সময় আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ওই জমিতে তাঁরই একটি টিনসেডের বাড়ি এবং গাছপালাসহ চারিদিকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরাও করা ছিল। সেই বাড়ি ভাংচুর করে সেই ভূমিদস্যূরা। এ নিয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুটিমামলা দায়ের করেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক তোজাম্মেল হক। আদালত মামলা দুটি গ্রহণ করে ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাগমারা থানা পুলিশের সহযোগিতায় গত ১ জানুয়ারি বাড়ি-ঘর ভাংচুর এবং গাছাপালা কেটে জমিটি দখল করে নেন।
এর পর গত ৭ জানুয়ারি অবসপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক তোজাম্মেল হককে গোপালপুর মোড় থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ধরে নিয়ে বাগমারা থানা পুলিশ। ধরে নিয়ে যাওয়ার পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তোজাম্মেল হকসহ তার ছেলে, এক ভাইসহ ৯ জনকে আসামি করে মামলা রেকর্ড করা হয়। ওই মামলায় তোজাম্মেল হকের বয়স দেখানো ৫৫ বছর। অথচ জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তোজাম্মেল হকের বয়স ৭০ বছর। তিনি জন্মগ্রহন করেন ১৯৫৩ সালের ২০ ফ্রেবুয়ারি।
তোজাম্মেল হক অভিযোগ করে বলেন, আমি ১০ বছর আগে .শিক্ষকতা পেমা তেকে অবসর নিয়েছি। কিন্তু তার পরেও ৫৫ বছর বয়স দেখানো হয়েছে। জমিজমা দখল নিয়ে পুলিশ কখনো মামলা নিতে পারে না। তার পরেও আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। এই বয়সে আমাকে জেল খাটালো পুলিশ। এখনো বাড়িতে গিয়ে আমার আত্মীয়-স্বজনকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছে। আমি এর বিচার চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে হায়দার নামের আরেকজন অভিযোগ করে বলেন, ‘তিনিও ২ শতক জমি কিনে ভোগ-দখল করে আসছেন। সেই জমিটিও দখল করার চেষ্টা করছেন ভূমিদস্যূ শামসুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান। এরা এর আগেও আবু বাক্কার নামের এক মুক্তিযোদ্ধার জমি দখল করেছিলেন।
এছাড়াও হাসনিপুর বাজারে আরও বিভিন্ন দোকানপাট ও জমি দখল করে এই শামসুল। দলীয় প্রভাবের কারণে সে দোকানদারদের নিকট থেকেও চাঁদাবাজি করে আসছে। কিন্তু পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আমাদের মতো জমির মালিকদেরই হয়রানি করে যাচ্ছে। এর বিচার চাই আমরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা ও মসজিদের ইমাম নাসিম উদ্দিন, চান্দের আড়া মসজিদের ইমাম হাফেজ মাইনুল ইসলাম।
বাগমারা থানার ওসি মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি, সেই কারণে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি স্কুল শিক্ষক ছিলেন কিনা সেটি বড় বিষয় নয়। জমি দখলের মতো অপরাধ করেছেন, তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে অপরাধ প্রমাণ না হলে তিনি খালাস পাবেন।’ রা/অ