শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৪৭ am
শরিফুল ইসলাম, মোহনপুর :
রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা গ্রামে বসবাসরত পৃথিবীর দ্বিতীয়তম উচ্চতা সম্পূর্ণ (৩৮ ইঞ্চি) মাসুরা বেগম। এমন এক নারীর ব্যাপারে সোস্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি হয়। ফলে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। এরপর ওই ক্ষুদ্রতম নারীকে ডেকে পাঠান জেলা প্রশাসক (ডিসি)। পরে মহানুবতার হাত বাড়িয়ে দেন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল।
প্রাথমিক ভাবে জেলা প্রশাসকের তহবিল হতে তাকে নগদ ১০ হাজার টাকা সাহায্য দেন ডিসি। আর ওই দম্পতি বসবাসের জন্য সরকারি ভাবে বাড়ি নির্মাণের আশ্বাস দেন তিনি। সামনে জানুয়ারি মাসে একটি বাড়িও পেতে যাচ্ছেন ক্ষুদ্র উচ্চতা সম্পূর্ণ নারী মাসুরা বেগম।
তাঁর উচ্চতা মাত্র ৩৮ ইঞ্চি (৩ ফুট ২ ইঞ্চি)। এই ক্ষুদ্র উচ্চতা নিয়েও মা হয়েছেন তিনি। গর্ভধারণ থেকে শুরু করে প্রস্রব পর্যন্ত মাসুরাকে যে দুই ডাক্তার চিকিৎসা দিয়েছিলেন ওই চিকিৎসকদের দাবি, উচ্চতার দিকে পৃথিবীর দ্বিতীয় এবং এশিয়া মহাদেশের প্রথম মাসুরা বেগম সফলভাবে কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন ২০১৩ সালে।
সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী জেলাধীন পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর এলাকায় কাজের সন্ধানে আসেন গাইবান্ধা জেলার মনিরুল ইসলাম নামে এক যুবক। ২০০৩ সালে ওই যুবকের সহিত পরিচয় ঘটে উক্ত গ্রামের ক্ষদ্র উচ্চতা সম্পূর্ণ মাসুরা বেগমের। এক পযার্য়ে তারা ভালোবেসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রায় ১০ বছর সংসার জীবনে ২০১৩ সালে মাসুরা বেগম একটি সফল কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। গর্ভকালীন শতকষ্টেও ফেলে যাননি স্বামী মনিরুল ইসলাম। সর্বক্ষণ পাশে ছিলেন তিনি। গর্ভধারণের ৮ মাস ১০ দিন পর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রায় আড়াই কেজি ওজনের কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
মাসুরার ৮ বছরের কন্যা মরিয়ম ইতোমধ্যে উচ্চতায় মাকে ছাড়িয়ে ৪১ ইঞ্চি উচ্চতায় পৌঁছেছে। মা ও মেয়ের ভালোবাসাও বেশ মধুর। এই বয়সেই মাকে নানা কাজে সহযোগিতাও করে মরিয়ম। এবার মরিয়ম তৃতীয় শ্রেণিতে।
মাসুরা বেগমের চিকিৎসক ছিলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের তৎকালীন প্রধান অধ্যাপক ডা. হাসিনা আক্তার ও আবাসিক সার্জন নুরে আতিয়া লাভলী। তাদের দাবি, এশিয়ার প্রথম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম ‘মা’ এই মাসুরা বেগম।
মাসুরা বেগমের স্বামী মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রায় দেড় যুগ ধরে মাসুরার সঙ্গে ঘর বেঁধে সুখে সংসার করছেন তিনি। শারীরিক যোগ্যতা নয়, ভালোবাস ও ভালো থাকার জন্য প্রয়োজন সুন্দর মন। মনিরুল ইসলাম ও মাসুরা বেগমের ভালোবাসা এখনও অটুট রয়েছে বলে জানান তিনি।
মাসুরা বেগম জানান, আমি উচ্চতায় খাটো হওয়ার জন্য সমাজের কিছু মানুষ আমাকে নিয়ে অনেক সময় অনেক মন্তব্য করেন। এরপরও আমার স্বামী ও সংসার আর একমাত্র আদরের সন্তান নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে ভালোই আছি। আমাদের কিছু টাকা পয়সার সমস্যা আছে। সরকারের কাছে ঘর চেয়ে আবেদন করেছিলাম। তারা দেবে বলেছেন।
এদিকে, বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মা মাসুরা বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল। মাসুরার ঘর বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, মাসুরা বেগমের সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ করা হবে। আগামী জানুয়ারি মাস নাগাদ তিনি ঘর পাবেন বলে জানান তিনি। তা/অ