শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৫৯ am
মো. রবিউল ইসলাম মিনাল (নিজস্ব প্রতিবেদক) গোদাগাড়ী :
বরেন্দ্র অঞ্চলের উঁচু জমিতে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা অবস্থিত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পুরো উপজেলার কৃষি ব্যবস্থায় পাল্টে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা মোকাবেলায় এ অঞ্চলে চাষাবাদ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ কৌশল শিখে চাষাবাদ শুরু করেছে এখানকার কৃষকরা। আই পিএম মডেল ইউনিয়নের কৃষক স্মার্ট স্কুলের মাধ্যমে এ উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক কৃষক কৃষাণি প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, বেগুন, টমেটো চাষে ঝুকছেন। এতে চাষিরা ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন।
উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে সবজি চাষ করে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা। এনিয়ে উপজেলার উজানপাড়া গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর মালচিং পদ্ধতিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছেন। আগে তিনি রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতেন এতে তার অনেক খরচ হতো। ফলে আর্থিকভাবে তেমন লাভ হতো না। বর্তমানে পরিবেশ বান্ধব কৌশল ব্যবহার করে জমিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার ও জৈব বালাইনাশক সেক্স ফরমান ফাঁদ হলুদ ফাদ ব্যবহার করছেন। এতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না। ফলে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।
উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামের কৃষক আনারুল ইসলাম বলেন, তিনি সাত বিঘা জমিতে মাচায় টমেটো চাষ করেছেন। পূর্বে তিনি মাটিতে টমেটো চাষ করতেন এবং অপুষ্ট কাচা টমেটো গাছ থেকে উঠিয়ে হরমোন দিয়ে পাকিয়ে বাজারে বিক্রি করতেন বেশি দামের আশায়। এখন আই পিএম কৌশল শিখার ফলে মাচায় টমেটো চাষ করে ফলন বেশী ও গাছ পাকা টাটকা টমেটো উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন। এতে টাটকা টমেটো পাওয়ায় দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে এবং ফলনও বেশি হচ্ছে।
দিয়ার মোহাম্মদপুর গ্রামের কৃষক নুর আমিন বলেন, আমি বেগুনের জমিতে হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করেছি, এতে এসিড ও জেসিড এবং সাদামাছি আটকে পড়ে। ফলে পোকার আক্রমণ কমে গেছে। তিনি আরো বলেন, বেগুনের জমিতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের ফলে ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ অনেক কমে গেছে। এ পদ্ধতিতে একটি প্লাস্টিকের বোয়েমের ভিতর তাবিজ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং নিচে পানি দেয়া হয়। এই তাবিজের গন্ধে পুরুষ পোকা বয়েমে ঢুকে পানিতে পড়ে মারা যাচ্ছে। এতে তার কীটনাশক বাবদ অনেক টাকা বেচে যাচ্ছে ।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, আইপি এম স্কুলের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন প্রযুক্তিটি খুবই ফলপ্রসু। ফলে কৃষক যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, তেমনি ভোক্তারা পাচ্ছেন নিরাপদ ফসল।
গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মরিয়ম আহমেদ জানান, পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য মাটিকাটা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক কৃষক ও কৃষাণিদের বিশটি আই পিএম মাঠ স্কুলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণসহ উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ হতে উপকরণ ও প্রশিক্ষণ পেয়ে কৃষক কৃষাণীরা নিরাপদ ফসল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে। তিনি আরও বলেন, পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধমে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের একটি টমেটো ক্ষেত পরিদর্শন করছেন বলে জানান মরিয়ম আহমেদ। তা/অ