শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৫৬ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইউএনও লসমি চাকমা উপজেলার দামকুড়া ইউনিয়নের দেশলাপাড়া গ্রামের কাদিপুর মৌজায় কাঁচারাস্তার উপর গৃহহীনদের আবাসন প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই এলাকার কৃষকরা সোমবার দুপুর ১২টায় রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন।
তারা বলেছেন, কাদিপুর মৌজার এক নম্বর খতিয়ানের ১৫০৩ নম্বর দাগের ৭০ শতক জমির শ্রেণি ডহর (কাঁচা রাস্তা)। এই রাস্তা দিয়ে প্রায় ৫০০ কৃষক তাদের জমির ফসল ঘরে তোলেন। এখানে বাড়ি নির্মাণ করলে তাদের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। জমির ফসল ঘরে তুলতে তাদের চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পবার একটি কলেজের অধ্যক্ষ গোলজার হোসেন। ওই মাঠে তারও জমি আছে। তিনি জানান, তিন মাস আগে ওই কাঁচা রাস্তার ওপর ভূমিহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণের জন্য প্রাথমিক জরিপ করা হয়। তখন স্থানীয় কৃষকরা ইউএনওকে জানান যে, ওই জমিটি এসএ ও আরএস খতিয়ানে ডহর বা কাঁচারাস্তা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। রাস্তাটি মাঠের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন। রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে কৃষকদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। কিন্তু ইউএনও কিছুতেই বোঝেননি।
গোলজার হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, দুই মাস আগে ইউএনওর তত্ত্বাবধানে গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হলে এলাকাবাসী সংক্ষুব্ধ হন। তবে কেউ গৃহ নির্মাণে বাধা দেননি। আমি এলাকাবাসীর পক্ষে জনস্বার্থে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পটি বন্ধ চেয়ে পবা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে রাষ্ট্রকে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করি। আইনে রাস্তার ওপর যে কোনো গৃহ নির্মাণ বেআইনি হওয়ায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নালিশি সম্পত্তির প্রকৃতি পরিবর্তন করা বা নালিশি সম্পত্তিতে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা বা নির্মাণের অনুমতি প্রদান করা থেকে বিরত থাকার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আদালত গত ২ নভেম্বর এ আদেশ জারি করেন।
গোলজার হোসেন আরও বলেন, এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখেন ইউএনও। বর্তমানে রাজশাহী জজ আদালতে শীতকালীন এক মাসের ছুটি চলছে। এ সুযোগে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে গত রোববার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকারের নির্দেশে ও উপস্থিতিতে পুলিশ নিয়ে এসে আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই স্থানে পুনরায় কাজ আরম্ভ করেন। এটি সম্পূর্ণ আদালত অবমাননার শামিল।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আদালতের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার জন্য বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও এসিল্যান্ডের কাছে কৃষকদের পক্ষ থেকে আবার লিখিত আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তাতেও কাজ হয়নি। আদালতের আদেশ অমান্য করে পুনরায় গৃহ নির্মাণ করায় আইনি সহায়তার জন্য দামকুড়া থানায় গিয়েছিলেন কৃষকরা। পুলিশ জানিয়েছে, ইউএনওর বিরুদ্ধে কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেওয়া যাবে না। কৃষকরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা আইনের মাধ্যমেই এর সমাধান চান। এ জন্য কাজে বাধা দেননি।
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় কৃষক গিয়াস উদ্দিন, মাসদার আলী, আবদুস সালাম, আবদুল গফুর, আবুল কালাম, গোলাম কবিরসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে ইউএনও লসমি চাকমা বলেন, কোন বিষয়টা এখন ঠিক মনে পড়ছে না। অফিসে এলে জানাতে পারব। তিনি এর বেশি কিছু বলতে চাননি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিত সরকার বলেন, ভূমিহীনদের জন্য যে গৃহ প্রদান কার্যক্রম, ওটারই অংশ এটা। জমিটা এখনো সরকারের নামে খাস খতিয়ানভুক্ত। ক্রাইটেরিয়া মেইনটেইন করে কাজটা শুরু করা হয়েছে।
জমির রকম বদলে দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, অসুবিধা নেই। কবে শ্রেণি বদল করা হয়েছে তা তিনি জানাননি। রা/অ