শুক্রবার, ২০ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৪৯ am

সংবাদ শিরোনাম ::
ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ বাংলাদেশ ও ভারত ভিসা জটিলতায় চার যৌথ সিনেমা একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির আটক
দেখব, লড়ব, জিতব কিন্তু খেলব না : আনিসুল হক

দেখব, লড়ব, জিতব কিন্তু খেলব না : আনিসুল হক

ব্রাজিলও পিছিয়ে নেই। ব্রাজিলের গণমাধ্যমগুলোয়ও বড় বড় করে প্রকাশ পাচ্ছে বাংলাদেশের ব্রাজিল–সমর্থকদের খবর আর ছবি। ব্রাজিলের বড় দৈনিক ফোলহা ডি সাওপাওলোয় প্রকাশিত হয়েছে সুইজারল্যান্ড-ব্রাজিল খেলার রাতের ঢাকার দর্শকদের ছবি আর খবর। ভাবার কোনো কারণ নেই, রবীন্দ্রনাথ ১৯২৪ সালে আর্জেন্টিনার লেখক-সম্পাদক বিদুষী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আতিথ্য নিয়েছিলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর উদ্যোগে হোর্হে লুই বোর্হেসসহ আর্জেন্টিনার বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের পক্ষাবলম্বন করে বিবৃতি দিয়েছিলেন, নানা রকমের প্রতিবাদ সংগঠিত করেছিলেন, সে খবর জেনে আমরা আর্জেন্টিনার সমর্থক বনেছি।

যখন দেশে টেলিভিশনের প্রসার ঘটতে শুরু করেছে, সারা দেশে খেলা দেখার সুযোগ বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপকেন্দ্রগুলো সম্ভবপর করে তুলেছে, তখন, সেই ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনা নামের এক ফুটবল-ঈশ্বরের আবির্ভাব। ফকল্যান্ড-যুদ্ধের জবাব যেন দিয়ে দিলেন ম্যারাডোনা, একাই। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর সেই মধ্যমাঠ থেকে অপ্রতিরোধ্য দৌড় এবং গোল, সেকি ভাই যায় রে ভোলা! সেই থেকে বাঙালির এক প্রেমের নাম আর্জেন্টিনা।

কিন্তু বাঙালি তো তর্কপ্রবণ। আর্জেন্টিনা থাকলে অবশ্যই তার একটা ব্রাজিল লাগবে। বাংলা বইয়ে পাঠ্য ছিল, ব্রাজিলের কালো মানিক পেলে। আর যাঁরা আগে থেকে খবরের কাগজ পড়তেন কিংবা ঢাকার মধ্যবিত্ত–উচ্চবিত্ত ঘরে যাঁদের টেলিভিশন ছিল, তাঁরা তো আগে থেকেই জানেন, পৃথিবীতে ফুটবলের দেশ বলতে যদি কিছু থেকে থাকে, তার নাম ব্রাজিল।

আগে তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিল, আর টিভির দেশব্যাপী বিস্তারের কালে রোমারিও চ্যাম্পিয়ন করলেন একবার (১৯৯৪) আর রোনালদো, রিভালদো, রোনালদিনিও চ্যাম্পিয়ন করলেন আরেকবার (২০০২)। এ তো আমাদের চোখের সামনে দেখা। হায়, যার বয়স ২০, সে তো তা–ও চোখের সামনে ঘটতে দেখেনি।

এখনকার সমর্থকেরা নাকি দ্বিতীয় প্রজন্ম। বাবা সমর্থন করেন, তা–ই দেখে ছেলেমেয়েরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল। ব্রাজিলের প্রতি আমাদের এই ভালোবাসার জন্য এই তথ্য জানার দরকার নেই যে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ব্রাজিলের নাগিরক সমাজ এবং গণমাধ্যম বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল।

বাংলাদেশের একজন, ভৈরবের রবিন মিয়া, নেইমারের বন্ধু এবং এই অঞ্চলে নেইমারের প্রচার দলের পেশাদার সংগঠক। রবিন মিয়ার ঘাড়ে হাত দিয়ে নেইমার ছবি তুলেছেন, রবিন মিয়া বলছেন, পত্রিকান্তরে পড়লাম, নেইমার তাঁর সঙ্গে কার্ডও খেলেন। তাসের ইয়ার-দোস্ত মানে তো রীতিমতো দোস্ত! শুধু তা–ই নয়, রবিন মিয়া নেইমারের পারিবারিক বন্ধু, নেইমারের বাবা কাতারে গেছেন, তাঁর থাকা-খাওয়ার সব আয়োজন করছেন রবিন মিয়াই।

এবার রবীন্দ্রনাথের ওই গানটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল, ‘বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো,/ সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমারও।’ গানের ওই লাইনটা, ‘গোপনে প্রেম রয় না ঘরে, আলোর মতো ছড়িয়ে পড়ে।’ এবার আমাদের ব্রাজিল–আর্জেন্টিনাপ্রেমের খবর আলোর মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ব্রাজিলিয়ান আর আর্জেন্টাইনরা আমাদের ভালোবাসার জবাব ভালোবাসা দিয়েই দিতে শুরু করেছেন।

তা তাঁরা দিন। কিন্তু আমাদের কারু পক্ষে একই সঙ্গে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনাকে ভালোবাসা সম্ভব নয়। সে যতই আমরা শুনি না কেন, মেসি আর নেইমার ভালো বন্ধু, আর্জেন্টিনার কোচ বলেছেন, আর্জেন্টিনা না থাকলে তিনি লাতিন ফুটবলকেই সমর্থন করবেন, আমরা নাচার। সেই যে কৌতুক আছে, প্রদীপের দৈত্য বলল, তুমি যা চাও তা-ই পাবে, তবে তোমার পড়শি পাবে তার দ্বিগুণ। অনেক ভেবে বাঙালি জবাব দিয়েছিল, আমার এক চোখ কানা করে দাও। আমাদের কেবল আর্জেন্টিনা জিতলে চলে না, আমরা রাত জেগে ব্রাজিলের খেলার দিন জপতে থাকি, যেন হারে, যেন হারে। ব্রাজিলের সমর্থকেরাও আর্জেন্টিনা গোল-খাইবা-মাত্র রাতের নীরবতা ভেঙে জেগে ওঠে—গোওল…গোওল…

ঠিক সেই সময় প্রাজ্ঞ বুদ্ধিজীবী বন্ধুটি চোখে চশমা এঁটে জিজ্ঞেস করেন, ‘তা তোমরা বাংলাদেশ, গ্লোবের উল্টো পিঠের দুই দেশ নিয়ে মারামারি করছ যে; ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে তোমরা যেন কত? আগে তো তোমাদের আবাহনী–মোহামেডান নিয়ে পুরো বাংলাদেশ মত্ত থাকত, এখন সেই খেলা কই, দর্শক কই? কাজী সালাউদ্দিন করলেনটা কী? সারা বাংলাদেশে স্টেডিয়াম বানানো হচ্ছে, কিন্তু খেলার মাঠে গরু চরে, কচুরিপানা ভাসে! আমরা যে ছোটবেলায় জাম্বুরা নিয়ে ফুটবল খেলতাম, অন্তত দঁাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট খেলতাম, আজকালকার ছেলেমেয়েদের কাছে খেলা মানে কম্পিউটার-মোবাইল গেমস! হলো কিছু?

ক্রিকেটটাই খানিকটা আছে। তা–ও সাকিবরা চলে গেলে পরের প্রজন্মের খেলোয়াড় কই? বিকেএসপি অনেক খেলোয়াড় দেয়, মোস্তাফিজ আসেন সুন্দরবন ক্রিকেট একাডেমি থেকে।

সেই উদ্যোগ সারা দেশে পরিকল্পিতভাবে লাগবে। আমরা সবকিছু নষ্ট করছি, জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থা, সর্বত্র গণতন্ত্রহীনতা এবং মতলববাজদের ভিড়। আমাদের পুঁজি লুটেরা পুঁজি, ব্যাংক লুট থেকে শুরু করে বনখেকো, নদীখেকো পুঁজি, তার প্রভাবও পড়ে শিল্প-সংস্কৃতি-ক্রীড়া ক্ষেত্রে।

তবু আমাদের নারী দল যে সাফ চ্যাম্পিয়ন হলো, সেইখানে একটা শিক্ষা নিহিত আছে। ২০১২ সাল থেকে এই মেয়েরা ঢাকায় থাকেন, ক্যাম্প করে। তাঁরা ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে ওঠেন, সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ আর ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

একসঙ্গে থাকা, কঠোর প্রশিক্ষণের সুফল মিলল ১০ বছর পর, প্রথমবারের মতো ভারত-নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল হলো সাফ চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু এখানেও বাজেট–সংকট। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নারী কমিটির সভাপতি মাহফুজা আক্তার কিরণ প্রথম আলোকে বলেছেন, বাজেটের অভাবে তাঁরা বহু কিছু করতে পারেন না। স্পনসর পাওয়া যায় না।

মেয়েদের দলটি বহুদিন বিদেশে ম্যাচ খেলতে যেতে পারেনি, শুধু টাকার অভাবে। প্রথম আলো তাই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হাতে নারী ফুটবলের উন্নয়নের খরচের জন্য তুলে দিয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, কয়েকজন ব্যক্তি এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অর্থানুকূল্যে। আর সাবিনা, কৃষ্ণা, সানজিদা থেকে শুরু করে দলের ৩০ সদস্যের প্রত্যেকের হাতে এক লাখ টাকার হিসাবে দেওয়া হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।

শিক্ষাটা কী? সাফল্যের কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। দেয়ার ইজ নো শর্টকাট টু সাকসেস। আপনি যদি ফুটবলে ভালো করতে চান, ১০ বছর ২০ বছর পরের ভাবনা এখনই ভাবতে হবে। অনূর্ধ্ব–১০ বছরের খেলোয়াড়দের নিয়ে শুরু করতে হবে। আর তা হতে হবে একটা ধারাবাহিক অনিঃশেষ প্রক্রিয়া। তা করতেও দরকার দেশের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা, সুশাসন এবং জবাবদিহি। দরকার ঠিক লোককে ঠিক কাজটার দায়িত্ব দেওয়।

লেখক : আনিসুল হক, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক।

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.