মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৪২ pm
এইচ এম. ফারুক, নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর তানোরে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে শেয়াল ও বেজির (নেউল) উপদ্রপ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাতে অথবা দিনে সমানভাবে এসব স্তন্যপায়ী প্রাণির অত্যাচারে অতিষ্ট গ্রাম ও পৌর এলাকার মানুষ। গৃহস্তের মুরগি কিংবা হাঁসের খোয়াড়ে সুযোগ বুঝে হানা দিচ্ছে এসব প্রাণি। সুযোগ পেলে মানুষের উপরও ঝাপিয়ে পড়ছে শেয়াল।
প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারি এসব প্রাণি আগে মাঠের গর্তে ও বড় জঙ্গলে থাকলেও সেগুলি অনেকটা উজার হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে মানুষ নতুন করে বসতবাড়ির পাশ ঘেঁষে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ফলের বাগান। সে কারণে শেয়াল কিংবা বেজি এখন মানুষের বসতির কাছাকাছি বাস করছে বলে জানিয়েছেন বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞরা।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের সাহিদা বেগম নামের এক গৃহবধূ জানান, প্রায় ৫ থেকে ৬ বছর আগেও বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন করে নিজেদের খাওয়া ও আত্মীয়-স্বজন আসলে আপায়ন করেও বছর শেষে তা বিক্রি করে সংসারে খুটি-নাটি জিনিসপত্র কেনা হয়েছে। কিন্তু বিগত দুই বছর ধরে শেয়াল ও বেজির উৎপাতে বাড়িতে হাঁস-মুরগি পোষাই দায় হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তানোর পৌর এলাকার জিওল-চাঁদপুর মহল্লার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রায় ৫ বছর আগে তাদের বাড়ির পাশ ঘিষে আমের বাগান তৈরি হয়েছে। এর বহুকাল আগে থেকে বাঁশের ঝাঁড় রয়েছে। সেই বাগানেই শেয়াল ও বেজি আশ্রয় নিয়েছে। বাগানে ও জঙ্গলের মধ্যে বাসা বাধা শেয়াল ও বেজি দিনের বেলাতেও সুযোগ বুঝে বাড়িতে হানা দিচ্ছে। দুই বছরে তাদের প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি মুরগি শেয়াল ও বেজি ধরে নিয়ে গেছে।
এমন সমস্যা শুরু তাদেরই নয়, তানোর উপজেলার গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় শেয়াল ও বেজির উৎপাত বেড়েছে। বাড়ির পোষা প্রাণি ধরে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শেয়ালের আক্রমনে মানুষও আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।
এব্যপারে তানোর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বেলাল হোসেন বলেন, শুধু তানোরে নয়, দেশের বিভিন্ন ঝোপ ও জঙ্গলে রয়েছে অসংখ্য বন্যপ্রাণির বাস। এদের মধ্যে অন্যতম পরিচিত বুনো প্রাণি শেয়াল। আর স্তন্যপায়ী প্রাণি বেজি। এই দুই ধরনের প্রাণি দেখা যায়। তবে, শেয়াল দুই প্রকার দেখা যায়। একটি পাতি শেয়াল, অপরটি খেঁক শেয়াল। পাতি শিয়াল সব ধরনের বনে বাস করতে পারে। বেজিও বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে বলে এই কর্মকর্তা জানান।
তিনি আরও জানান, গৃহস্থের মুরগি-হাঁস ও ছাগল শিকারের বেশি বদনাম আছে পাতি শেয়ালের। আকারে গৃহপালিত কুকুরের সমান। গায়ের রঙ লালচে বাদামী থেকে বাদামীর সাথে কালচেভাব আছে। লোমশ শরীর। নাকের ডগা কালো। মুখ লম্বাটে সরু। পাতি শেয়াল মাথা থেকে লেজের গোঁড়া পর্যন্ত ৬৮ সেমি হয়। লেজ লোমশ সরল ২৩ সেমি, অগ্র ভাগে কালচে ভাব আছে। দাঁড়ান অবস্থায় উচ্চতা ৩৮ থেকে ৪৩ সেমি। ওজন ৮ থেকে ১১ কেজি। ডা. বেলাল হোসেন বলেন, প্রকৃতিতে এরা বড়জোর ৮ থেকে ৯ বছর বাঁচে।
আর বেজি আকারে বিড়ালের দ্বিগুন ছোট। লেজ লম্বা, মুখ সুছকে ও লম্বা। বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ও হাঁস-মুরগির বাচ্চা শিকার করে খেয়ে থাকে। এসব প্রাণি কৃষিতে যেমন উপকার করছে তেমনি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করছে শেয়াল। এছাড়া মরা খেয়ে পাতি শিয়াল দুর্গন্ধ ও রোগজীবাণু ছড়ানো থেকে রক্ষা করছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। আজকের তানোর