মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৩৮ pm
আব্দুস সবুর, তানোর : রাজশাহীর তানোরে দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে ফিল্মি স্টাইলে রাস্তার ধারের তরতাজা বিশাল আকারের দুটি বেহগুনি গাছ কর্তন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্বমিলের মালিক প্রভাবশালী বাবুলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে পৌর সদর হাজি উসমানের স্বমিলের সামনে ঘটে গাছ কাটার ঘটনাটি।
এতে করে সদরে একের পর এক গাছ কাটায় চরম ক্ষুব্ধ পরিবেশ বিদরা। ফলে গাছ খেকো বাবুলের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। নচেৎ এমন ঘটনা কোনভাবেই বন্ধ হবে না বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, তানোর থানা মোড় টু উপজেলা পরিষদ রাস্তা সংলগ্ন জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে স্ব-মিলের ব্যবসা করে আসছেন প্রভাবশালী আলহাজ উসমান আলী। তার জন্মস্থান পাঁচন্দর ইউপির যশপুর গ্রামে। সেখান থেকে তানোর পৌর সদরে বসবাস ও স্বমিলের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ব্যবসা শুরুর পর থেকে স্থানীয় বখাটে গাছ খেকো ব্যবসায়ী ও বিএমডিএর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে চলে গাছ নিধনের মহাউৎসব। যার কারনে সদরে রাস্তার ধারের গাছ উজাড় হচ্ছে। এভাবে করেই বনে যান কোটিপতি। শুধু গাছ না ভিপি জমি কিভাবে নিজের দখলে নিতে হবে সেটাও জানা উসমানের। তিনি সদরের শংকর নামের এক মুহুরীকে ভিপি জমি খারিজের জন্য ২৫ হাজার টাকা দেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, মুল রাস্তার উত্তরে উসমানের স্বমিল। রাস্তার ধারে বড় সাইজের দুটি মেহগুনির গাছের ডালপালা কেটে সাবাড় করে ফেলেছেন উসমানের পুত্র বাবুল হোসেন। ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতেই স্বমিলের শ্রমিকরা এসে জানান এসব বাবুলের গাছ। নিজের গাছ কাটলে সমস্যা কোথায়। তার গাছ বলে নম্বর দেওয়া নাই। বসে ছিলেন বাবুল। তিনি জানান, আমাদের নিজস্ব গাছ। তারপরও আমি সবাইকে বলে কাটছি। রাস্তার ধারের গাছ আপনার কিভাবে হল জানতে চাইলে তিনি জানান, সেটা কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন বলে দম্ভক্তি দেখান এই গাছ খেকো বাবুল।
ঘটনাস্থল থেকে বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাস্তার ধারের গাছ হলেই যে সরকারের সেটা কে বলেছে। কি জাতের গাছ জানতে চান তিনি। বলা হয় মেহগুনি। তখন তিনি জানান, মেহগুনি গাছ আমাদের নয়। আর কাটলেও কিছুই করার নাই।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ জানান, রাস্তার ধারের গাছ কাটার কোন অধিকার কারও নেই। যদি কোন কারনে সমস্যা হয় তাহলেও কাটতে হলে প্রকাশ্যে নিলাম দিতে হবে। আমি ছুটিতে আছি তারপরও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তা।
বিভাগীয় বন সংরক্ষক মেহেদিজ্জামান জানান, আমি কিছুক্ষন আগেই চান্দুড়িয়া থেকে আসলাম। আমি স্থানীয় প্রশাসনকে বলে জরুরি ভাবে ব্যবস্থা নিতে বলছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গাছ কাটার লোকেশন ও ব্যক্তির নাম জানতে চান এই প্রতিবেদকের কাছে। সব জানানো হলে ইউএনও জানান ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষন পর পুনরায় ইউএনওর কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, গাছ কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুনরায় ঘটনাস্থলে এসে দেখা যায়, একটি গাছ কাটা শেষ, পড়ে আছে। আরেকটির ডালপালা সাবাড়।
স্থানীয়রা জানান, রাস্তার ধারে প্রকাশ্যে গাছ কাটা বন্ধও হলো। কিন্তু যিনি কাটলেন, সেই বাবুলের কোন ব্যবস্থা হল না কেন এমন প্রশ্ন বিরাজমান।
গাছ খেকো বাবুলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। রা/অ