শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:১৩ pm
ক্রীড়া ডেস্ক : এত মিল দুই দলের ব্যাটিংয়ে! পাকিস্তানের শুধু তিন ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কে যেতে পেরেছেন, ভারতেরও তাই। এই তিনজনের মধ্যে পাকিস্তানের শাহিন করলেন ১৬, ভারতের সূর্যকুমার ১৫। বাকি দুজনের মধ্যে পাকিস্তানের ইফতিখার ও শান মাসুদ করেছেন ফিফটি, ভারতের হার্দিক পান্ডিয়া ৪০ রানে আউট হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন কোহলি – ৫৩ বলে ৬ চার ৪ ছক্কায় করেছেন ৮২ রান।
কোহলির অসাধারণ ইনিংসটিই আজ মেলবোর্নে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে ভারত আর পাকিস্তানে। দুর্দান্ত রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে ৪ উইকেটে জিতিয়ে দিয়েছে ভারতকে। শেষ ছয় বলে নাটকের চূড়ান্ত দেখে ফেলা ম্যাচের নিষ্পত্তি যে শেষ বলেই হয়েছে, তা-ই সম্ভবত যথাযথ।
শেষ চার ওভারে যেন ম্যাচটা এদিক-ওদিক পেন্ডুলামের মতো দুলেছে। হারিস রউফ ও নাসিম যেখানে পাকিস্তানের দিকে ম্যাচটা নিয়ে গিয়েছিলেন, দারুণ বোলিং করতে থাকা রউফ আর বাজে বোলিং করতে থাকা শাহিন শাহর ওপর চড়াও হয়ে সেটিকে আবার ভারতের দিকে টেনে নিয়ে এসেছেন কোহলি।
শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬ রান। কিন্তু পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম আগেই হারিস-নাসিম-শাহিনদের ব্যবহার করে ফেলায় নওয়াজ ছাড়া আর কারও হাতে বল দেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না তার। প্রথম বলে কোহলির সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৭৮ বলে ১১৩ রানের জুটি গড়া হার্দিক আউট। কিন্তু কোহলি তো ছিলেন!
কয়েক মাস আগেও যার অফফর্মের কারণে বিশ্বকাপের দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, সেই কোহলিই বিশ্বকাপে ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নায়ক। দ্বিতীয় বলে কোহলিকে স্ট্রাইকে দিলেন কার্তিক। তৃতীয় বলে দুই রান কোহলির। চতুর্থ বলে কোমরের ওপরে ‘নো বল’ নওয়াজের, তাতে ডিপ স্কয়ার লেগে ছক্কা কোহলির!
এরপর? নাটক! পরের বল ওয়াইড। তিন বলে পাঁচ রান দরকার, কিন্তু ফ্রি-হিট তখনো আছে। তাতে কোহলির স্টাম্প উপড়ে ফেলেও উদ্যাপনে ভাসতে পারেননি নওয়াজ। এল বাই তিন রান! ভারতের জন্য ধাক্কা, কোহলি তখন নন-স্ট্রাইকে! পঞ্চম বলে সহজ বলটাই মারতে গিয়ে পারলেন না কার্তিক, উল্টো স্টাম্পড!
১ বলে ২ রান দরকার, ক্রিজে অশ্বিন। কোহলি নন-স্ট্রাইকে। কী হলো? আবার নাটক! ওয়াইড করলেন নওয়াজ! ভারত হারছে না, নিশ্চিত। শেষ বলে ফিল্ডারদের ৩০ গজের ভেতরে রেখেছিলেন নওয়াজ, কিন্তু বলটা সেভাবে করতে পারলে তো! মিড-অনের ফিল্ডারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মেরেই দুহাত ছড়িয়ে দৌড় অশ্বিনের।
অথচ ভারতের দুঃস্বপ্নের মতো শুরুর পর তা কেউ ভাবতেও পারেননি! বাবর ও রিজওয়ান ৫ রানের মধ্যে ফিরলেও শান মাসুদের অপরাজিত ৫২ আর ইফতিখার আহমেদের ৫১ রানে ভারতকে ১৬০ রানের লক্ষ্য দেয় পাকিস্তান, কিন্তু তাড়া করতে নেমে ২০ বলের মধ্যে ১০ রানে ভারতের দুই ওপেনারের বিদায়। পাওয়ার প্লে-র ৩ বল বাকি থাকার সময়ে দলকে ২৬ রানে রেখে আউট ‘ভারতীয় ডি ভিলিয়ার্স’ সূর্যকুমার যাদবও। পাকিস্তানের দুই স্পিনার নওয়াজ আর শাদাবকে চাপে রাখতে অক্ষর প্যাটেলকে চারে নামিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে ভারত, সেই অক্ষরও ২ রান করে রানআউট! পাওয়ার প্লে-তে ৩১ রান পাওয়া ভারত তখন ৬.১ ওভারে ৩১/৪!
পুরো চাপ গিয়ে পড়ল বিরাট কোহলি আর হার্দিক পান্ডিয়ার ওপর। তাদের পর ব্যাটসম্যান বলতে আর দীনেশ কার্তিকই ছিলেন, সে কারণে উইকেট হারাতে না দেওয়ার চাপও ছিল, আবার রানও তুলতে হতো। যা করার, শুরুটা সেভাবেই করেছেন হার্দিক-কোহলি। ১০ ওভার পর্যন্ত দেখেশুনে খেলেছেন, ১০ ওভার শেষে ভারতের রান তখন ৪৫/৪।
কোহলি তখন একটু বেশিই রক্ষণাত্মক খেলছিলেন, হয়তো তার উইকেটের গুরুত্ব বেশিই বলে অত রক্ষণাত্মক হওয়া! তবে দ্বাদশ ওভারে নওয়াজকে ছক্কা মেরে সেই যে শুরু হলো কোহলির, আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ১৫ ওভার শেষে ভারতের রান হয়ে গেল ১০০/৪।
কিন্তু এরপর হার্দিক পান্ডিয়া শেষ দিকে ব্যাটে-বলে করতেই পারছিলেন না, হারিস রউফ-নাসিম শাহর স্লোয়ারগুলো পড়তেই পারছিলেন না তিনি। কোহলির ওপর চাপ তাই আরও বাড়ছিল। ১৬ ও ১৭তম ওভারে হারিস ও নাসিম দিলেন ৬ রান করে। ১৮তম ওভারে শাহিনের বলে তিন চারে কোহলি নিলেন ১৭ রান, তাতে আবার চাপ কিছুটা কমল। তার প্রথম চারে কোহলির ফিফটিও এল ৪৩ বলে। ওভার শেষে সমীকরণ – ১২ বলে ভারতের দরকার ৩১ রান। কোহলি-ঝড় তখন শুরু হয়ে গেছে, অথচ অন্যদিকে প্রথম ১৮ বলে ২৬ রান করা পান্ডিয়ার রান তখন ৩৩ বলে ৩৮।
১৯তম ওভারে হারিস রউফ প্রথম চার বলে মাত্র ৩ রান দিলেন, তার দ্বিতীয় সিঙ্গেলে কোহলি-পান্ডিয়া জুটির ১০০ হলো বটে, তবে ভারত হারছে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষ দুই বলে স্ট্রাইক পেয়ে কোহলির দুই ছক্কাই আবার ম্যাচ ঘুরিয়ে দিল ভারতের দিকে। এর মধ্যে প্রথম ছক্কাটি তো চোখধাঁধানো! ওভারে ১৫ রান এল, শেষ ওভারে দরকার তখন ১৬!
তাতে অনেক নাটক হলো, ক্লাইম্যাক্স-অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্সের রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা শেষে ভারতই মেতেছে উল্লাসে। যার কেন্দ্রে কোহলি। সূত্র : দৈনিক বাংলা