শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৪৯ am
সজীব ওয়াজেদ জয়, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র। বিশ্বের অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তনয়। প্রায় অর্ধযুগ আগে জয় বলেছিলেন, বিএনপি কী আমাদের চেয়ে বড় জাতীয়তাবাদী? জয়ের এমন উক্তির ফলাফলকে হিসাব করলে গেল একযুগের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক প্রশ্ন হিসাবে তা দাঁড় হয়। কারণ, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে পেশিশক্তির ব্যবহার করে, নাশকতা করে কিংবা বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে লড়াই করলেই জাত চেনানো হয় না।
রাজনীতি করার কিছু মৌলিক শর্ত আছে, যার ওপর ভিত্তি করে প্রমাণ করতে হয় যে, আমরা রাজনৈতিক দল এবং জাতীয়তাবাদী। বিএনপি তা করতে পারেনি। যে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের ওপর দাঁড়িয়ে তাঁরা একসময় বলতে চেয়েছিল যে, পূর্ববঙ্গের সঙ্গে একসময়ের পাকিস্তানের অপর অংশটির ভৌগোলিক দূরত্ব, সাংস্কৃতিক বৈপরীত্য এবং সেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের অত্যাচারের ফলে মুসলিম জাতীয়তাবাদ এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের সংমিশ্রণে নিজস্ব কৃষ্টির বৃষ্টিতে যে জাতীয়তাবাদের অভ্যূদয় হয় তা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং তা আমরা এমন আদর্শিক অবস্থানের ওপর দাঁড়িয়ে এই অঞ্চলে রাজনীতি করতে চাই।
চুয়াল্লিশ বছর পরে দেখা যাচ্ছে যে, বিএনপি সেই পাকিস্তানের দোসর হয়ে বাংলায় রাজনীতির নামে প্রহসন করেছে। তারা বাংলার সংস্কৃতিকে ধারণ না করে একপেশে ধ্যান ধারণায় ফলত নিজেরাও সাম্প্রদায়িক শক্তি হতে পেরেছে, জাতীয়তবাদী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেনি। বিএনপির পক্ষ হয়ে যারা লিখে থাকেন বা তাদেরকে বিদগ্ধশ্রেণির কেউ হিসেবে ধরে নিয়েই প্রশ্ন রাখছি, জাতীয়তবাদী হওয়ার শর্ত পূরণ করতে পেরেছে কি না বিএনপি? প্রত্যেকের প্রতি আমার চ্যালেঞ্জ রইল। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে ক্ষমা চেয়ে নেব।
বিএনপি, জাতীয়তবাদী দল হতে পারেনি। সে কারণেই আওয়ামী লীগকে যারা একটু দূরে সরিয়ে রাখতে চায় বা দলটির সঙ্গে লড়াই-ই করতে চায়, তারা নতুন একটি জাতীয়তাবাদী শক্তি হয়ে রাজনীতির মঞ্চে আসতে চায়। এখানেই প্রমাণিত হয়ে যায়, বিএনপি নিজেদেরকে জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে প্রমাণই করতে পারেনি বলেই একটি স্বপ্ন প্রজন্ম দেখে এবং তারা ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়। আওয়ামী লীগ তেমন প্ল্যাটফর্ম গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রত্যাশাও করে। হ্যাঁ, তাদের জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা কিংবা আদর্শিক অবস্থানকে আমরা মেনে নিতে পারব না, তা ঠিক আছে, কিন্তু রাজনীতি নিয়ে দেশে অবস্থান নিলে ক্ষতি নেই তো। তাঁরা আসুক। সু স্বাগত!
সমস্যা নতুনদের জন্য আরো আছে। আওয়ামী লীগে ইচ্ছে করলেই পয়সা খরচ করে বড় পদ বাগিয়ে নেওয়া যায় না। এতে করেও আজকের প্রজন্ম একটু হোঁচট খায়। বুর্জোয়াশ্রেণিকে রাতারাতি জায়গা দিতে পারে না আওয়ামী লীগ। সে জন্য তারা নতুন শক্তি খোঁজে। রাতারাতি বড় সত্তা হতে চায় তারা। আওয়ামী লীগে তা সম্ভব না। আজকে যোগদান করেই তুমি বড় নেতা হতে পারবে না। এই জন্য দেশের ছোট্ট করে হলেও একটা প্রজন্ম বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির সন্ধান করে। কিন্তু, বিএনপিতে তারা যেতে চায় না। কারণ, দলটির আদর্শ কি তা কেহ আজ অব্দি নতুন করে জানতে পারেনি।
এদিকে আওয়ামী লীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অনুশীলন আছে। আমার পিতা এ এইচ এম কামারুজ্জামান জাতীয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। দীর্ঘ সংগ্রাম লড়াই করে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে জীবন পর্যন্ত দিয়েছিলেন। আমি এক পর্যায়ে রাজনীতিতে এলাম। পিতা দলের সভাপতিও হয়েছিলেন। আর আমার দলের নীতি নির্ধারণ ফোরামে আসতে চল্লিশ বছর লেগেছে। অর্থাৎ দলে গণতন্ত্র আছে। সবার আগে ঘরে গণতন্ত্র থাকতে হবে। আমি পুনরায় প্রশ্ন রাখছি সবার কাছে। আওয়ামী লীগ কতটা গণতান্ত্রিক অনুশীলনে থাকা উদাহরণ রাখার দল যে, সজীব ওয়াজেদ জয় এক লাফে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হননি।
সূত্রমতে, প্রাথমিক সদস্যের একটা পদ থাকতে পারে তার। কিন্তু, কথিত জাতীয়তবাদী শক্তির দিকে তাকান সকলে। শুধু পদ নিয়ে জেঁকে বসেন নাই, পলাতক তারেক রহমান এখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনও। হাওয়া ভবন খুলে সরকার পরিচালনা করতেন হাওয়াই উড়ে!
আমাদের শেখ রেহানা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রাদওয়ান মুজিব ববি পদ নিয়ে বসে যাননি। জাতীয় নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সন্তান হিসাবে আমি তো বলতে পারি যে, একজন শেখ হাসিনার জন্য নিজের জীবন দেওয়ার জন্য দেশে হয়ত লাখ লাখ নেতাকর্মী রয়েছেন। তবুও বলছি, আমি প্রথম নাম হতে চাই, তার জন্য জীবন সঁপে দেয়ার মানসিকতায় ছিলাম, আছি ও থাকব।
আওয়ামী লীগ তাই গণতন্ত্র সবার আগে নিজের ঘরে আনতে পেরেছে। জাতীয়তাবাদী হয়ে বলতে পেরেছে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসাবেই আমাদের ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিকতাবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে মানবতার সুর ধরতে হবে। পৃথিবীর সকল স্বাধীন মানচিত্রের সাথে সু সমন্বয় করে বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখতে হবে। অথচ, বিএনপির ভুমিকাটা কি ? তারা পরাক্রমশালী রাষ্ট্রের শক্তিধর প্রতিনিধিবর্গের বৈঠকখানায় ধরনা দেয়। অপেক্ষায় থাকে। এরা পলাশীর প্রান্তরে সেই মীরজাফর-ঘষেটি বেগমদের মত করেই ঘাপটি মেরে থেকে শাসকশ্রেণি হতে চায়। যাদের কোন ধরণের রাজনৈতিক আদর্শ আছে, তা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারেনি।
একদল নারী রাজনীতিকদের দ্বারা বিএনপি কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এটিওতো তো আরেকটি অযাচিত সন্দেহকে উসকে দেয়! আগে দেখতাম, শুনতাম এম মোরশেদ খান, মাহবুবুর রহমান কিংবা মঈন খানেরা পররাষ্ট্র বিষয়ক দেখভালে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করতেন। এখন দেখি, জিবা আমিন খান, শামা ওবায়েদ কিংবা রুমিন ফারহানারা খুব ব্যস্ত বিদেশি মেহমান কিংবা ডিপ্লোম্যাটদেরকে নিয়ে!
বিএনপি সমাবেশে ফিরেছে, এমন কিছু রাজনীতির সুস্থতা। তারা স্বাস্থ্যকর রাজনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশে বিচরণ করতে পারবে, যদিও তা আমি বিশ্বাস করি না। তারা নেতিবাচক কিছুকে সঙ্গী করেই আগামীদিনে ভয়ংকর কিছু করবে বলে মনে করছি। শেখ হাসিনাও বলেছেন, ওরা আবারও আমাদের জীবনের ওপর আঘাত আনতে চায়। যে দলের নেতৃত্বে তারেক রহমান, তিনি সব কিছু করতে পারবেন। তিনি দশ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে আনেন, তিনি ২১ আগস্ট ঘটান, এবার কী করবেন তিনিই জানেন।
আওয়ামী লীগের কর্মী হিসাবে বলতে পারি, প্রকৃতি, দেশাত্মবোধ এবং জাতীয়তাবাদের শানিত ছুরিতে কুপোকাত হবে এই ধরনের রাজনৈতিক অপশক্তি। প্রিয় সজীব ওয়াজেদ জয় ঠিকই বলেছিলেন। আওয়ামী লীগের সত্যিকারের কর্মীর চেয়ে কেহই বড় জাতীয়তাবাদী সত্তা নয়- কোনো গোষ্ঠী জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসাবে নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারেওনি। রাজনৈতিকভাবে বিএনপি কে তাই হালে আমলে নেওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। তবে সতর্ক থাকতে হবে। তারা যেন সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। একইসঙ্গে আমাদের প্রাণের নেত্রী আমার বোন শেখ হাসিনার বাংলাদেশ গড়ার বিনির্মাণে যেন আমরা হোঁচট না খাই।
লেখক : এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সভাপতিমণ্ডলির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও মেয়র, রাজশাহী সিটি করপোরেশন।