মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:২৯ pm
ডেস্ক রির্পোট : দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষে আজ খুলতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। একই সঙ্গে চালু হতে যাচ্ছে নড়াইলের ‘মধুমতি সেতু।’ সোমবার দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু দুইটি উদ্বোধন করবেন। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নড়াইলবাসীর জন্য আজ বিশেষ আনন্দের দিন।
তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নামকরণ করা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমানের নামে। এটি নারায়ণগঞ্জ শহরকে বন্দর উপজেলার সাথে সংযুক্ত করবে। ফলে নৌকা ও ট্রলারে করে নদী পারপার হওয়ার ভোগান্তি কমছে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের। নতুন দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার।
সেতু উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সেতুর পাড়ে বন্দর ফরাজিকান্দা অংশে প্রস্তুত করা হয়েছে মঞ্চ। সেখানে বড় পর্দায় ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে সেতুর উদ্ধোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুর অপর পাড় নারায়ণগঞ্জের অংশকেও সাজানো হয়েছে নানাভাবে। উদ্ধোধনকে ঘিরে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটবে সেতুর দুপারে। এ জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কুদরতে খুদা বলেন, ‘প্রতিদিন নৌকা ও ট্রলারে শহরে আসা-যাওয়া করতে এ অঞ্চলের মানুষের যেমনি ভোগান্তি পোহাতে হয়, তেমনি মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে। তাই সেতুটি উদ্বোধনে উচ্ছ্বসিত বন্দর উপজেলার প্রতিটি মানুষ।’
উপজেলার সাবদি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘ভোর থেকে রাত পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা নদীতে অসংখ্য কার্গো জাহাজ, বাল্কহেডসহ নৌযান চলাচল করে। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার হতে হয় যাত্রীদের। প্রায় সময় ঘটে দুর্ঘটনা। ঝুঁকির কারণে নারীরা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে নদী পার হতে চান না। কারণ, অনেক ভয় লাগে নদীতে। সেতু হওয়াতে যেমনি ভয় কেটেছে তেমনি পথ সহজ হয়েছে।’
বাগবাড়ী এলাকার বাসিন্দা নাহিন আলম পলক বলেন, ‘বন্দরের মদনগঞ্জ ঘাট থেকে নবীগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত আটটি খেয়া পারাপারের ঘাট রয়েছে। এসব ঘাট দিয়ে সবচেয়ে বেশি পারাপার হন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সময় বাঁচাতে বেশির ভাগ সময় ঝুঁকি নেন ট্রলারে। সেতু হওয়ার ফলে এখন যানবাহনে করে সহজে সরাসরি নারায়ণগঞ্জে কাজে যেতে পারবে।’
‘সব চেয়ে বেশি উপকার হবে রোগীদের। সেতু হওয়ার কারণে দীর্ঘ দিনের কষ্ট শেষ হচ্ছে। এটা অনেক আনন্দেন। আমাদের বন্দরবাসীর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জ পাড়ের নিতাইগঞ্জের শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘ব্রিজ হওয়ার কারণে যাতায়াত সহজ হয়ে গেল। সেতু ব্যবহার করে কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিভিন্ন এলাকার দিকে যেতে সহজ হবে। কাঁচামালসহ বিভিন্ন পাইকারি পণ্য আনা নেয়ায় সময় বাঁচবে।’
সেতুর প্রকল্প পরিচালক শোয়েব আহমেদ জানান, সৌদি আরবের সহযোগিতা নিয়ে সেতুটি নির্মাণ করেছে সরকার। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ৩৮টি খুঁটি। এর মধ্যে নদীতে রয়েছে পাঁচটি।
তিনি বলেন, ‘এখন নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরের মধ্যে সরাসরি সংযোগ হলো। পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট-মহাসড়কে অল্প সময়ে যাতায়াত করা যাবে।’
১ হাজার ২৩৪ দশমিক ৫০মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬০৮ কোটি টাকা ৫৬ লাখ টাকা। ছয় লেনের এই সেতুর চার লেনে দ্রুত গতির যানবাহন এবং দুই লেনে চলবে রিকশা সাইকেল ভ্যানসহ ধীরগতির যানবাহন। দুই পাশের রেলিং ঘেঁষে রয়েছে ফুটপাত। তাই পাড়ি দেয়া যাবে হেঁটেও।
সেতুটি নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের সঙ্গে পদ্মা সেতুর দূরত্ব কমল ৯ কিলোমিটার। বন্দর উপজেলার মদনপুর দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর হয়ে শ্রীনগরের ছনবাড়ি পয়েন্টে দিয়ে যুক্ত হবে ঢাকা-মাওয়া- ভাঙ্গা সুপার এক্সপ্রেসওয়ে।
মধুমতি সেতু
স্থানীয়ভাবে ‘কালনা সেতু’ নামে পরিচিত ৬৯০ মিটার দীর্ঘ ‘মধুমতি সেতু’ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মধুমতি নদীর উপর নির্মাণ করা হয়েছে। নড়াইল, গোপালগঞ্জ, খুলনা, মাগুরা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর এবং ঝিনাইদহ জেলাকে সংযুক্ত করেছে ছয় লেনের এই সেতুটি।
প্রকল্প কর্মকর্তাদের বলছেন, সেতুটি চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ দ্রুত সড়ক যোগাযোগ সুবিধা পাবে। কালনাঘাট থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব কমিয়ে দেবে এটি।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার মানুষ কম সময়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে পারবে। এটি দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভ্রমণের সময়ও কমিয়ে দেবে। এতে ঢাকা থেকে দূরত্ব হবে ১৩০ কিলোমিটার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা এবং নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় মধুমতি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এ অঞ্চলের মানুষ এখন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট হয়ে ঢাকা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ব্যবহার করে। এতে যশোর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে ১০০ কিলোমিটার বেশি ভ্রমণ করতে হয়।
২৭ দশমিক এক মিটার চওড়া সেতুটিতে চারটি উচ্চ গতির লেন ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড এবং দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয়টি লেন রয়েছে। সূত্র : দৈনিক বাংলা