বুধবা, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:৪২ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘ভবিষ্যতে আমিও এমপি মন্ত্রী হতে পারি’ বলে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য দিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে চিঠি দিয়েছেন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান। সিটি মেয়রকে শালীনতা বিবর্জিত এমন চিঠি লেখায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে কারণ দর্শনের (শোকজড) করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১৮ জুলাই ডাক যোগে সিটি মেয়র বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়েছিল।
গত ২২ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কারণ দর্শনের চিঠি ইস্যু করেন। যাতে চিঠি পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে এখনো কারণ দর্শনের নোটিশ পাননি বলে দাবি করেছেন হাবিবুর রহমান। সূত্র : পদ্মাটাইমস
কারণ দর্শনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আপনার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, আপনি জনাব হাবিবুর রহমান চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী এর বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়রকে উদ্দেশ্য করে একটি পত্র লিখেন, যা নিম্নরূপ;
“আপনার সঙ্গে আমাকে দেখা করার জন্য গেটে অপেক্ষা করতে হবে আপনার কাছে সময় চাইতে হবে? বিষয়টি কল্পনা করা আমার জন্য দুরহ। আপনি জানেন কি আমার জা শাশুড়ি এমপি। আমার আওয়ামী পরিবারে জন্ম। ভবিষ্যতে আমিও এমপি বা মন্ত্রী হতে পারি। গাজীপুর ও কাটাখালির মেয়রদের দিকে তাকান। বর্তমানে তাঁদের কি অবস্থা’’।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শোকজডের চিঠিতে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে আরও বলা হয়, একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার প্রতি উদাসীন এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আপনার এ ধরণের মন্তব্য একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮ এর পরিপন্থি। এই অবস্থায় আপনার বিরুদ্ধে আনীত উপযুক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে পত্র প্রাপ্তির ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হইল।
জানা গেছে, ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য দিয়ে শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যানের ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনে পক্ষ থেকে গত ২ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়। এর পর গত ২৪ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ জোহরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রানালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রকে উদ্দেশ্য করে একটি পত্র লিখেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রীর মর্যদা স্বম্পন্ন ব্যক্তি।
তাছাড়া তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় সরকারী কর্মচারীর নিকট থেকে এ ধরণের পত্র অবলোকন করেননি। শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার প্রতি উদাসীন এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য দিয়ে এহেন পত্র লেখন চরম অসদাচরন মর্মে প্রতিয়মান হওয়া। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয়/আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন হতে বিবেচা পত্রে অনুরোধ করা হয়।
এমতাবস্থায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পত্রের আলোকে হাবিবুর রহমান, চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহীর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘আমি এ ধরনের কোনো চিঠি মেয়রকে দেয়নি। চিঠিটি কিভাবে গেল তা আমি জানি না। চিঠিতে সাক্ষর জাল করা হয়েছে। বিষয়টি আমি লিখিত ভাবে মেয়রকে জানিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারণ দর্শনের নোটিশটিও আমি হাতে পাইনি। পেলে জবাব দিবো।’’