মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৫১ am
আব্দুস সবুর, তানোর : জসিম উদ্দিন, তারা পাঁচ ভাই। তাদের বাড়ি তানোর পৌরসভার ধানতৈড় মহল্লায়। তাঁরা অনেক আলু চাষ করেন। নিয়ম মতে তাদেরকে এতো সার কোনো ডিলার দিতে পারবেন না। এজন্য তারা নোয়াপাড়া থেকে ট্রাকে করে এতো সার এনেছেন। এতে কোন সমস্যা নেই। তাঁরা নিজেদের জন্য এনেছেন। এছাড়াও জসিম বিএডিসির সার ডিলার। তিনি তাঁর ব্যবসা চাঙ্গা করতে সার গুদামজাত করতেই পারেন। তাঁতে সাংবাদিকদের কি এভাবেই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কথাগুলো বলছিলেন, রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলারের অন্যতম সিন্ডিকেট প্রনব সাহা।
তিনি পাঁচন্দর ইউপির ডিলার হলেও ওই এলাকায় সার সংকট দেখিয়ে তানোর পৌর সদর গোল্লাপাড়া বাজারে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার ছত্রছায়ায় দেদারসে ব্যবসা করছেন।তার পয়েন্টে সার না নামিয়ে পৌর এলাকার ধানতৈড় মোড়ের বালাইনাশকের ব্যবসায়ী জসিমের দোকানে একট্রাক ডিএপি সার নামান এবং জসিমের সাথে বেপরোয়া সিন্ডিকেট করেন। কারণ পটাশ বা এমওপি সার গুদামজাত করে তীব্র সংকট দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত কৃষকদের মাঝে বিক্রি করছেন।
আর প্রনবের মাধ্যমে জসিম তার বাড়িতে প্রচুর পটাশ সার মজুদ করে ওই সময় ভোরে পাচার করতেন যা তার গ্রামের একাধিক প্রবীন ব্যক্তিরা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। যার ভিত্তিতে জসিমের বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি এক প্রকার দাম্ভিকতা নিয়েই বলেন, অবশ্যই কয়েক হাজার বস্তা পটাশ আমার দোকানে রয়েছে, তাঁতে কি হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি গত রোববার বিকেলের দিকে নোয়াপাড়া মোল্লা ট্রেডার্স থেকে একট্রাক ডিএপি সার আনেন তানোর পৌর এলাকার ধানতৈড় মোড়ের বালাইনাশক ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন। তিনি সরাসরি নোয়াপাড়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিনেছেন সার বলে জানান। তিনি আরো জানান, ডিলার আমাকে চাহিদামত সার দিতে পারে না। এজন্য নোয়াপাড়া দালালদের মাধ্যমে কি না হয়েছে। আপনি বালাইনাশক ব্যবসায়ী ট্রাকে করে এভাবে সার আনতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান টাকা থাকলে সব হয়। এঘটনায় সোমবার দুপুরের পরে জসিম অবৈধ ভাবে সার মজুদ করায় ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন তানোর ইউএনও। কিন্তু মজুদ কৃত সারের কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
এব্যাপারে বিসিআইসির ডিলার প্রনব সাহা জানান, ধরে নাও এটা আমার সার। তিনি পরে বলেন, জসিম আমার কাছ থেকে নোয়াপাড়ার একজনের মোবাইল নম্বর চেয়েছিল। মনে হয় জসিম সেখান থেকে সার এনেছে। আপনার সার নিয়ে এতো তোড়জোড় কেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, এসব ব্যবসায়ীদের অভ্যান্তরিন ব্যাপার বলা যায় না।
এবিষয়ে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহর কাছে সার মজুদ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ইউএনও স্যার ওই ব্যবসায়ীর জরিমানা করেছেন।সারগুলো কার জানতে চাইলে তিনি বলেন, জসিম বলেছে তাদের নিজের সার। তিনি কি এভাবে সার মজুদ করতে পারেন ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি উত্তরে বলেন, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এড়িয়ে গেছেন এই কর্মকর্তা।
এনিয়ে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পংকজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, সার নিয়ে সিন্ডিকেট করায় জসিমের ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর কিভাবে এতো সার জসিমের দোকোনে এলো তা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান ইউএনও।
সম্প্রতি উপজেলার তালন্দ বাজারে ধানতৈড় গ্রামের এক প্রবীন কৃষক পটাশ নিতে যান। তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে নাম প্রকাশ না করে বলেন, কি বলব ফজরের আজানের আগে ও পরে জসিম ট্রাকের ট্রাক পটাশ সার পাচার করেছেন। এসব পটাশ সব প্রনব সাহার। তারা যেভাবে সার নিয়ে সিন্ডিকেট গড়েছেন তাঁতে সামনের আলু মৌ্সুমে চাষাবাদ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। ফলে অতিশীঘ্রই কৃষকের মাঝে সহজে সার সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অনুরোধ জানান তাঁরা।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সার নিয়ে বেপরোয়া সিন্ডিকেট বাড়তি দামসহ নানা বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি দপ্তর উপজেলার বিসিআইসি, বিএডিসি ও বালাইনাশক ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা করে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে বলা হয় ডিলার ছাড়া বস্তাভর্তি সার বিক্রি করা যাবে না এবং বালাইনশক ব্যবসায়ীরা খুচরা সার বিক্রি করবেন। তবে, যারা সাব ডিলার তারা এবং যারা শুধু বালাইনাশক ব্যবসায়ী তারা কোন ভাবেই সার বিক্রি করতে পারবে না।
এছাড়াও যারা এ নির্দেশ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দেওয়া হয়। এরপর থেকে অনেক বালাইনাশক ব্যবসায়ীরা সার বিক্রি বন্ধ করে দেন। অথচ জসিম বিসিআইসির ডিলার প্রনব সাহার মাধ্যমে একট্রাক সার আননেলও জরিমানা করা হল মাত্র ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু সারের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাহলে এমন সভা করা মানে লোক দেখানো ছাড়া কিছুই নয় বলেও কৃষকদের অভিমত। আজকের তানোর