রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৫৯ am
ডেস্ক রির্পোট : ২০২১ সালের খানা জরিপে দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে চিহ্নিত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এই খাতের বিভিন্ন শাখায় সেবা নিতে গিয়ে ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে থানা-পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ডিবি, সিআইডি, র্যাব ও আনসার।
আজ বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব চিত্র তুলে ধরেন।
টিআইবি প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার দুর্নীতির শিকার ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এর পরে যথাক্রমে পাসপোর্টে দুর্নীতির শিকার ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ, বিআরটিএ ৬৮ দশমিক ৩ শতাংশ, বিচারিক সেবা ৫৬ দশমিক ৮ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ভূমি সেবায় দুর্নীতির শিকার ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গত বছর বিভিন্ন খাতে যে পরিমাণ ঘুষ লেনদেন হয়েছে সেটা একটা পদ্মা সেতুর মোট বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ। এ ছাড়া সেবা খাতে দুর্নীতিতে কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও সার্বিক তথ্য উদ্বেগজনক। বিচারিক খাতের দুর্নীতিও উদ্বেগজনক। যাঁরা অনিয়ম করছেন, তাঁরা ঘুষকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছেন। সেবা পাওয়ার জন্য মানুষ ঘুষ দিচ্ছেন।’
২০২১ সালে দেশের সেবা খাতে জাতীয় পর্যায়ে প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৮৩০ দশমিক ১ কোটি টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের (সংশোধিত) ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এই ঘুষের পরিমাণ বাংলাদেশে জিডিপির শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।
টিআইবি জানায়, সেবা খাতে দুর্নীতি ২০২১ জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালে ১৭টি খাত বিবেচনায় সার্বিকভাবে ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ খানা দুর্নীতির শিকার হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২১ সালে সার্বিকভাবে ঘুষের শিকার হওয়া খানার হার ৪০ দশমিক ১ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ঘুষ গ্রহণকারী তিনটি খাত হচ্ছে পাসপোর্ট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও বিআরটিএ। জরিপে অন্তর্ভুক্ত ঘুষদাতা খানার ৭২ দশমিক ১ শতাংশ ঘুষ দেওয়ার কারণ হিসেবে ‘ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না’—এ কথা বলেছেন। অর্থাৎ ঘুষ আদায়ের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ অব্যাহত রয়েছে।
টিআইবির তথ্যমতে, ২০২১ সালে সার্বিকভাবে খানাপ্রতি গড়ে ৬ হাজার ৬৩৬ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে এবং সর্বোচ্চ ঘুষ আদায়ের তিনটি খাত হলো বিমা, বিচারিক ও গ্যাসসেবা।
সংস্থাটি জানায়, সার্বিকভাবে ২০১৭ সালের তুলনায় সেবা খাতে দুর্নীতির শিকার খানার হার বৃদ্ধি পেয়েছে (২০২১ সালে যেখানে দুর্নীতির শিকার খানার হার একই খাত বিবেচনায় পাওয়া গেছে ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০১৭ সালে এই হার ছিল ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থের হার কমেছে, কিন্তু ঘুষ আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। অন্যদিকে অন্যান্য অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে সেবা খাতে দুর্নীতি বেড়েছে। বিভিন্ন খাতে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও কোনো কোনো সেবা খাতে তা পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় দুর্নীতি একই অবস্থায় রয়েছে (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, পাসপোর্ট, বিআরটিএ ইত্যাদি) এবং কিছু খাতে বৃদ্ধি পেয়েছে (স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বিমা ইত্যাদি)। এ ছাড়া ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কোনো কোনো খাতে ঘুষের শিকার খানার হার বেড়েছে (স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান) এবং কোনো কোনো খাতে কমেছে (কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা)।
আর্থসামাজিক অবস্থানভেদে খানার দুর্নীতির শিকার হওয়ার হারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য তারতম্য লক্ষ করা যায়নি উল্লেখ করে টিআইবির এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘুষের ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী খানার শিকার হওয়ার হার বেশি (৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ বনাম ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ)। উচ্চ আয়ের তুলনায় নিম্ন আয়ের খানার ওপর দুর্নীতির বোঝা অপেক্ষাকৃত বেশি। সেবা নিতে গিয়ে উচ্চ আয়ের তুলনায় নিম্ন আয়ের খানা তাদের বার্ষিক আয়ের অপেক্ষাকৃত বেশি অংশ ঘুষ দিতে বাধ্য হয়।
জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে আরও পাওয়া যায়, পুরুষ সেবাগ্রহীতার তুলনায় নারী সেবাগ্রহীতারা কোনো কোনো খাতে বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছেন (স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, অন্যান্য খাত) এবং কোনো কোনো সেবা খাতে নারীদের তুলনায় পুরুষ সেবাগ্রহীতারা বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছেন (শিক্ষা, ভূমিসেবা)। এ ছাড়া ৩৫ বছরের নিচের সেবাগ্রহীতাদের তুলনায় ৩৬ ও এর বেশি বয়সের সেবাগ্রহীতারা অপেক্ষাকৃত বেশি দুর্নীতির শিকার হন।
জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণী ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ১০ দফা সুপারিশ জানিয়েছে টিআইবি। সূত্র : আজকের পত্রিকা