সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি সফিউদ্দিন আহমদ বলেন, আহত মানুষ থানায় গেলে ‘পুলিশ কেস’ সিল দেওয়া কাগজ না থাকার অজুহাতে ফিরিয়ে দেওয়া মানে মানুষকে অবহেলা করা। এ থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যন্ত এগুলো পৌঁছায় কি না, সেটা দেখা দরকার।
নীল মাধব সাহা বলেন, তাঁর রাজশাহী নগরের বাসা চন্দ্রিমা থানা এলাকায় হওয়ায় তিনি প্রথমে চন্দ্রিমা থানায় যান। চন্দ্রিমা থানা প্রথমে চিকিৎসা নিতে বলে এবং ঘটনাস্থল মতিহার থানার মধ্যে পড়ায় তাঁকে মতিহার থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তিনি মতিহার থানায় এজাহার জমা দেন। তবে ওই থানার পুলিশও মামলা না নিয়ে জানায়, ঘটনাস্থল পড়েছে রেলওয়ে থানার অধীন। তাই মতিহার থানার পুলিশ তখন তাঁকে রেলওয়ে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ১৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে নীল মাধব সাহা রেলওয়ে থানায় যান। সেখানেও তখন তাঁর মামলা নেওয়া হয়নি। দুই দিন পর ১৭ আগস্ট অবশেষে মামলাটি নিয়েছে রেলওয়ে থানা।
শুরুতে মামলা না নেওয়ার বিষয়ে রাজশাহী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোপাল কর্মকার প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ আগস্ট তিনি আহত অবস্থায় হাসপাতালের ‘পুলিশ কেস’ সিল দেওয়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া এসেছিলেন। সেদিন তাঁকে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতালের কাগজপত্র সঙ্গে আনার জন্য বলা হয়েছিল। মামলা নেওয়া হবে না, এমনটা বলা হয়নি।
তিন থানা ঘুরে মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে নীল মাধব সাহা ১৭ আগস্ট দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় মতিহার থানার ওসি ওই থানায় জমা দেওয়া এজাহারটি ফরওয়ার্ডিং সহকারে রাজশাহী রেলওয়ে থানায় পাঠান। তখন রেলওয়ে থানার ওসি এজাহারটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন।
প্রথম দিনই কেন ফরওয়ার্ডিং সহকারে এজাহারটি রেলওয়ে থানায় পাঠানো হলো না, জানতে চাইলে নগরের মতিহার থানার ওসি আনোয়ার আলী আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দিন এজাহার জমা দেওয়ার সময়ই তাঁর অফিসার ভিকটিমকে রেলওয়ে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরই মধ্যে তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিশ্চিত হন যে ঘটনা ঘটেছে রেলওয়ে থানার সীমানায়। তারপর তাঁরা ফরওয়ার্ডিং দিয়ে এজাহারটি রেলওয়ে থানায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। তারপর সেখানে মামলা রেকর্ড করেছে।
রাজশাহী নগরের মেহেরচণ্ডী এলাকার বাসিন্দা নীল মাধব সাহা নগরের মতিহার থানা কৃষক লীগের সভাপতি। তাঁর মেয়ে রাজশাহী মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে নীল মাধব জানান, তাঁর মেয়ে রাজশাহী মহিলা কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। কলেজে যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছে এলাকার বখাটেরা। তাদের মধ্যে মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি রুহুল আমিন মূল হোতা। ১২ আগস্ট সকালে এর প্রতিবাদ করেন তিনি। পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রুহুল আমিনসহ ৮ থেকে ১০ জন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে (পারলার) গিয়ে হামলা চালান। এ সময় তাঁকে ছুরিকাঘাত করা হয় এবং হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মাথায় ১২টি সেলাই পড়ে।
নীল মাধব সাহা মোট আটজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলায় মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি রুহুল আমিনকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। সূত্র : প্রথমআলো