রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:২৮ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : আমন মৌসুমের শুরুতেই রাজশাহীতে এমওপি (পটাশ) এবং টিএসপি সারের সংকট দেখা দিয়েছে। গেল জুলাইয়ে জেলায় এমওপি সারের ঘাটতি ছিল ১৩৬ মেট্রিক টন। চলতি মাসে তা বেড়েছে আরও ৮০০ মেট্রিক টন। ডিলারের দোকানে দোকানে ঘুরেও চাষিরা সার পাচ্ছেন না। এতে আমন আবাদ নিয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) রাজশাহীর বাফার গুদাম থেকে রাজশাহী জেলাসহ নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে সার সরবরাহ করা হয়। এই গুদামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুলাইয়ে নওগাঁয় এমওপির বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন। সরবরাহ করা গেছে ৯৪০ মেট্রিক টন। ঘাটতি ছিল ৮৯২ মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ৩৬ মেট্রিক টন এমওপির বিপরীতে সরবরাহ করা গেছে ৭৪৯ মেট্রিক টন। চাহিদা থাকলেও দেওয়া যায়নি ২৮৭ মেট্রিক টন। একইভাবে রাজশাহী ও নওগাঁতেও চাহিদার তুলনায় কম সার সরবরাহ করা হয়েছে। গুদামের মজুতও এখন তলানিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪২ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ শেষ হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে এবার আমন চাষ দেরিতে শুরু হয়েছে। কয়েক দিন আগে ভারী বর্ষণের পর চাষিরা আবাদে নেমেছেন। কিন্তু তাঁরা বলছেন, চাষাবাদে নেমেই এবার সারের সংকটে পড়েছেন তাঁরা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমন চাষের শুরুতে প্রতি বিঘা জমিতে দরকার হয় ১৫ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি এবং ১০ কেজি ইউরিয়া। ডিলারদের কাছে গিয়ে চাহিদামতো ডিএপি ও এমওপি সার পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কোথাও কোথাও বেশি দরে এসব সার কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। ডিলাররা এমওপি সংকট দেখিয়ে ৭৫০ টাকার বস্তা বিক্রি করছেন ১ হাজার ২৫০ টাকায়।
পবা উপজেলার তেঘর গ্রামের কৃষক আফাজ উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমি এবার পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ শুরু করেছি। শুরুতেই সারের প্রয়োজন। কিন্তু দোকানে সার পাওয়া যাচ্ছে না। যাও পাওয়া যাচ্ছে, তার দাম বেশি। কয়েক ডিলারের দোকান ঘুরে ঘুরে বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। এভাবে চাষাবাদ হয়!’
কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এবার জেলায় ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর আমন ধান চাষে শুরুতেই দরকার ৮ হাজার ৯৩৩ মেট্রিক টন বা ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫০০ হাজার বস্তা ডিএপি এবং ৬ হাজার মেট্রিক টন বা ১ লাখ ২০ হাজার বস্তা এমওপি সার। অথচ চলতি মাসে এমওপির বরাদ্দ মাত্র ১৬ হাজার বস্তা। ডিএপির বরাদ্দ মাত্র ৩০ হাজার ৬২০ বস্তা। এই সার দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়।
বাফার গুদামের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২০ জুলাইয়ের পর থেকে এমওপি সারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এখন গুদামে মাত্র ৪০ থেকে ৪২ মেট্রিক টন সার আছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে দেশে এই সারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
তবে উল্টো কথা বলছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন। তিনি বলেন, ‘সারের কোনো সংকট নেই। কোনো কোনো অসাধু ব্যবসায়ী হয়তো কৃত্রিম সংকট দেখানোর চেষ্টা করছেন। তাঁরা যেন কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারেন সে জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা মনিটরিং করছেন।’ সূত্র : আজকের পত্রকা