শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৫৩ pm
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের নির্যাতিত সাবেক ইউপি সদস্য শেখ হাবিবা খুন ও গুম হওয়ার আশঙ্কা করছেন। বুধবার বেলা ১১টায় রাজশাহী মহানগরীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে তাকে নির্যাতনের অভিযোগ আনেন এবং তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয় বলে তিনি দাবি করেন।
এ কারণে তিনি এমপি আয়েন এবং তার সহযোগীদের বিচার দাবি করেন। নির্যাতিত শেখ হাবিবা উপজেলার সিংহমার গ্রামের মাসুদ রানার স্ত্রী। তিনি মোহনপুর উপজেলা কৃষক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে হাবিবা জানান, একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের বিপদে তিনি এগিয়ে যান। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ জুলাই মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে তার এলাকার নজরুল নামের এক ব্যক্তিকে সহায়তার জন্য তিনি মোহনপুর থানায় যান এবং পুলিশের সহায়তা চান। এ সময় মোহনপুর থানার ওসি তৌহিদুল ও এএসআই সোলায়মানের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে তারা উগ্র আচরণ শুরু করেন। এএসআই সোলায়মান এ সময় জানান, তোমার কাজ করতে এমপি স্যারের নিষেধ আছে। তোমার বিষয়টি এমপি স্যারের কাছে জানতে হবে এবং ওসি সাহেব দুই তিন জায়গায় মোবাইল ফোনে কথা বলেন।
কথা বলার ভঙ্গিমায় হাবিবার মনে হয় স্থানীয় এমপি আয়েন উদ্দিন ও তার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন ওসি। এর কিছুক্ষণ পরে এমপির বন্ধু উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ইকবাল হোসেন থানায় আসেন। এ সময় ইকবাল পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, এই হাবিবা এমপির বিরুদ্ধে কথা বলে। তাকে উচিত শিক্ষা দেন। তখন পুলিশ কর্মকর্তারা হাবিবাকে গালমন্দ ও হুমকি-ধমকি শুরু করেন এবং কেন এমপির বিরুদ্ধে কথা বলেন সেটি বার বার উল্লেখ করেন।
একপর্যায়ে দুইজন মহিলা কনস্টেবল হাবিবাকে চড় থাপ্পড় মারেন এবং ডিউটি অফিসার লতিফাসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য হাবিবাকে ওসির রুম থেকে টেনে হেঁচড়ে পাশের একটি রুমে নিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান। এ সময় ডিউটি অফিসার লতিফা এমপির বিরুদ্ধে কথা না বলতে হুঁশিয়ারি দেন এবং রাতভর থানায় আটকে রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাবিবা বলেন, পরের দিন আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে এমপি আয়েনের সাবেক পিএস রাজাকারপুত্র একরামুল হক বিজয় এমপির ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে পরিচিত ডলি বেগমকে নিয়ে থানায় আসেন। এ সময় হাবিবার কাছে এসে বিজয় বলেন, তোকে উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে। এরপর ডলি বেগমকে বাদী করে একটি প্রতারণার মামলা দেওয়া হয়। এছাড়া পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ এনে এসআই রউফ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এরপর এসব মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে জেলহাজতে পাঠায়।
সংবাদ সম্মেলনে হাবিবা এ নির্যাতনের মূল পরিকল্পনাকারী এমপি আয়েন এবং তার সহযোগীদের বিচার দাবি করেন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে জুডিশিয়াল তদন্ত দাবি করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাংগঠনিক বিচার চান।
হাবিবা সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। এ সময় তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে হাবিবার মা ওই ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি সদস্য মিনা বেগম এবং স্বামী মাসুদ রানা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাবিবার মা বলেন, আমরা এলাকায় থাকতে পারছি না। বিভিন্ন মাধ্যমে গুম হওয়ার ভয়ভীতি আসছে। ২০১৯ সালে এমপি আয়েন উদ্দিনের ভাই ঘাসিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান বাবলুর নির্দেশে হাবিবার দুই পা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। হাবিবা দুই বছর এলাকা ছাড়া ছিল। আমরা বর্তমানে এলাকায় বসবাস করতে পারব কি না- সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দিহান।
হাবিবাকে নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ সম্পর্কে মোহনপুর থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, হাবিবা যেসব অভিযোগ করছেন তার পুরোটাই মিথ্যা। তিনি প্রতারণা করেছেন। এ কারণে ডলি বেগম নামের একজন নারী তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছেন। আর থানায় পুলিশের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, শেখ হাবিবা আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছেন, সেসময় আমি দেশের বাইরে ছিলাম। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এছাড়া হাবিবা কেমন মানুষ, তা তার এলাকার লোজনকে জিজ্ঞাসা করলেই বুঝতে পারবেন। সূত্র : যুগান্তর